ঘন্টা তিনেক ধরে শিখা শুয়ে আছে। শরীরের তাপ ঠিক কতো জানে না। মাথা থেকে পা পর্যন্ত এতো ব্যথা, মনে হচ্ছে কেউ যেন বস্তায় ঢুকিয়ে কাঠ দিয়ে ইচ্ছেমতো পিটিয়েছে। জিভ দিয়ে শুকনো ঠোঁট চেটে আস্তে আস্তে চোখ খুললো। তার পাশে কেউ যে নেই তা বুঝতে পারলো। এতোক্ষণ সে স্বপ্নের মধ্যেই ছিল। আম্মা কপালে জলপট্টি দিচ্ছে আর কিছুক্ষণ পর পর দোয়া পড়ে মাথায় ফুঁ দিচ্ছিল। চোখের কোল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো। ক্ষীণ গলায় কয়েকবার ডাকলো-- আম্মা,আম্মা...। আবার ভাবলো তার আম্মা কি শুনছে? লাইফ সাপোর্ট লাগানো অবস্থায় কতোবার ডেকে গেছে-- আম্মা,আম্মা। একবারের জন্যও চোখ খুলেনি সেই পনেরো দিন। আজ পাশে থাকলে মাথায় পানি ঢালতো, ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ গলা মুছে দিতো, নিজের হাতে কয়েক লোকমা ভাত খাইয়ে দিতো।
বসার
ঘরে টিভি চলছে, নেটফ্লিক্সের সিনেমায় মারপিটের ভয়ঙ্কর আওয়াজ কানে এসে প্রচণ্ড আঘাত
করছে। শীত যাই যাই করছে, প্রবর্ত্তকের গাছগাছালি থেকে কোকিলের ডাক কানে একটু আরাম দিয়ে
যাচ্ছে। দুপুরের খাওয়ার সময় পেরিয়ে গেছে অনেকক্ষণ। শরীর হালকা কাঁপছে, একটু একটু ঘাম
হচ্ছে। অফিসে টিফিন ছুটিতে প্রতিদিন আড়াইটার মধ্যেই খাওয়া হয়ে যায়। খাওয়া, হাসি-গল্প,
নতুন কোন রান্নার রেসিপি, পুরানো কোন দুঃখের স্মৃতিচারণ-- সবই চলে কলিগদের সাথে।
বাথরুমে
না গিয়ে দেওয়ালে হাত রেখে রেখে রান্নাঘর পর্যন্ত এলো। বিভিন্ন কারণে শরীর খারাপ হলেও
চামড়া ফেটে পড়ার মতো জ্বর তার খুব একটা আসেনা। কদাচিৎ জ্বর অনুভব করলেও তা চামড়ার নিচেই
থেকে যায়। বিয়ের পর থেকে এই জ্বর নিয়ে ভুগেছে দুবার। একবার টাইফয়েড জ্বর আর একবার চিকেন
পক্সের কারণে দীর্ঘদিন জ্বর ছিল। টাইফয়েড জ্বরের সময় ছেলের বয়স ছিল মাত্র আট মাস। কাছের
বস্তি থেকে এক খালা এসে সারাদিন ছেলের দেখাশোনা আর ঘরের কাজে সাহায্য করতো, বিকেলে
চলে যেতো। আর ঠিক ঐ সময়েই জ্বরটা আসতো। চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকবে তার তো জো ছিল না।
ছেলেটা হামাগুড়ি দিয়ে এদিক সেদিক যায়, এটা সেটা ধরতে চায়, তার পেছন পেছন ছুটতে হয় তখন।
মেঝেতে তোষকের উপর বিছানা ছিল, খাট থেকে পড়ে ব্যথা পাবে এই ভয়ে। ঘরে তৃতীয় কোন মানুষ
নেই। তলপেট ব্যথায় টনটন করে উঠলে সহ্য করতে না পারলে বাথরুমে যেতো, ছেলেকে একা রেখে।
সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামতো, দরজার বাইরে কারো সাড়া নেই। রবিন সন্ধ্যায় অফিস শেষ করে বন্ধুদের কাছে যেতো। আড্ডা দিয়ে ঘরে ফিরতো
রাত ১১টার পর।
প্লেটে
ভাত নেওয়া শেষ হয়নি। ডাইনিং আর রান্নাঘরের মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে রবি-- তোমার শরীর এখন কেমন?
কিছুই তো বললে না! রাতে এতোবার জিজ্ঞেস করলাম। না বললে বুঝবো কী করে? গতমাসে দেশের
সেরা হাসপাতালে আমিই তো নিয়ে গেলাম। কই কেউ তো এলো না। এমনিতে কতো দরদী তোমার চারিদিকে!
কোন
জবাব না দিয়ে করলা ভাজি আর এক টুকরা মাছ নিল। টেবিলের কাছে আসতেই হঠাৎ রবিন কাঁচের
জগটা ছুঁড়ে ফেলে দিল মেঝেতে। কাঁচের টুকরোগুলো ছড়িয়ে পড়লো সাদা টাইলসে, ঘরের এদিক ওদিক।
পেটের ক্ষুধা এবার বুকে গিয়ে আটকে গেলো। হাতের প্লেট নিঃশব্দে নামিয়ে রেখে তাকিয়ে থাকলো
মুক্তোদানার মতো কাঁচের দিকে। বিপজ্জনক টুকরোগুলো দেখতে ভালোই লাগছে শিখার।
--
ঘরে থাকলেই তোমার শরীর খারাপ হয়ে যায় কেন বুঝি না। শহরের এমাথা ওমাথা ঘুরলে, ক্যাম্পে
গিয়ে তিন চারদিন উদ্বাস্তুর মতো থাকলে শরীরে কিছু হয় না। আমি একটা মানুষ, শরীরের চাহিদা
বলে কিছু আছে। যার তার কাছে তো যেতে পারি না। সেই শিক্ষা আমার বাবা-মা দেয় নাই। আমি
চাইলেই কিন্তু লাইন পড়ে যাবে।
গলার
স্বর মধ্যমে রেখে বলেই চলেছে শিখার চরিত্রের নানা দোষ ত্রুটি। বছরের পর বছর নিজের চরিত্রের
এই বিবরণ শুনতে শুনতে মুখস্থ হয়ে গিয়েছে, কোনটার পর কোনটা বলবে। মাঝেমাঝে মনে হয় একজন অদৃশ্য অবেদনবিদ এসে যদি তাকে একটা ইনজেকশন দিয়ে
যেতো এই সময়টায়।
কাঁচের
ধারালো টুকরোগুলোর দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবলো, শেয়াল কুকুরের মতো চেটেপুটে খাবলে খাবলে
পঁচিশটা বছর খেলো, তবু ও শরীর দেওয়া হলো না। হায় শরীর, নারীর শরীর। মন কোথায় থাকে,
এই শরীরেই কি? শরীর,শরীর, তোমার কি মন আছে? মন-শরীর, শরীর-মন, জ্বরে তালগোল পাকিয়ে
যাচ্ছে। মাথা আবার ঘুরে উঠছে,চোখ দুটো জ্বালা করছে……।
এই
এলাকায় আবাসিক ভবনের পাশাপাশি দুই এক গজ অন্তর অন্তর প্রাইভেট ক্লিনিক। সবসময় সজাগ
থাকে এখানে কেউ না কেউ। এম্বুলেন্সের তীব্র হর্ণে প্রায় দিন ঘুম ভাঙে। সকালে শিখার
ঘুম ভাঙলো বিলাপের সুরে, বুকটা হঠাৎ ধক্ করে উঠলো। গায়ের পাতলা চাদর ভাঁজ করে নিঃশব্দে
পাশের রুমে গেল। ওয়াইফাই অন্ করে হোয়াটস অ্যাপে কল্ দিলো ছেলের কাছে। নাহ্, কিছুতেই
কানেক্ট হলো না ভিডিও কলটা। দেয়ালের ছবি দুটোতে হাত ছোঁয়ালো-- একটাতে ছেলে, আরেকটাতে
তার মা আর তার ছেলে হাসিমুখে বসে।
মাঝারি
আকারের ট্রলি ব্যাগে কাপড়চোপড় সব গুছিয়ে নিয়েছে আগেই। ছোট আরেকটা ব্যাগে আরো কিছু নিতে
হবে। গীতবিতানটা টেবিল থেকে নিয়ে খাটের নিচে রাখা ট্রলি ব্যাগে ঢুকালো। গতরাতের কথা
মনে এলো, কিছুতেই ঘুম আসছিলোনা। কয়েকটা শব্দ ফিরে ফিরে আসছে। ছোটবেলায় চোখ ঢেকে দিয়ে
“আয় রে আমার গোলাপ ফুল, আয় রে আমার
জবা ফুল”-এর মতো। কপালের মাঝখানে টোকা দিয়ে
চলে যাচ্ছে কেউ। চোখ খুলতেই সব ঝাপসা।
কাঁচের
স্লাইডিং ডোর খুলতেই ঠান্ডা বাতাস, শিরীষের ডালে নতুন পাতার হাতছানি। কী যে ভালো লাগলো,
বুকের ভেতর থেকেই এলো-- “তোমার কাছে এ বর মাগি, মরণ হতে
যেন জাগি গানের সুরে”। উইন্ড চাইমটাও টুংটাং বেজে উঠলো।
নিশুথ রাতের সেই শব্দগুলো আবারও এসে টোকা দিল কপালের মাঝখানে। এবার আর গোলাপ জবাদের
চিনতে অসুবিধে হলো না। রাস্তার ওপারে পুরাতন শূন্য দালানের লাগোয়া আমগাছে মুকুলের শোভা
দেখতে দেখতে শব্দগুলো সাজাতে লাগলো। এখনই লিখে না রাখলে শব্দের ফুলগুলো হারিয়ে ফেলবে,
তাই চেস্ট অব ড্রয়ার খুলে জামা কাপড়ের নিচ থেকে কবিতার ডায়েরিটা বের করলো। মলাট বাঁধানো
খাতা দুটো নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখে আবার কাপড়ের নিচে রেখে দিল। খাতা দুটো কেমন মলিন
হয়ে গেছে। কেন মলিন,আলো হাওয়া পায় না বলে, নাকি শব্দের ভারে ক্লান্ত?
দেড়
হাজার স্কয়ার ফুটের এই ফ্ল্যাটে ডায়েরি আর খাতা দুটো আত্মগোপনে থাকে। যে কোন রাতে বন্দী
হতে পারে,পুড়ে ছাই ও হতে পারে। আবার কবিতার কোন কোন লাইনের অর্থ খু্ঁজে পেতে গোয়েন্দা
লাগাতে পারে রবিন। দুবছর আগে এক কবিতায় বিশেষ কোন অনুভূতির গন্ধ পাওয়ায় ছয় মাস ধরে
বাজে কথা শুনতে হয়েছিল শিখাকে।
মানুষের
জিহ্বায় এতো ধার থাকতে পারে, কল্পনায়ও আসেনি আগে। যতোবার তাকে গালিগালাজ করেছে ঠিক
ততোবারই দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছে। বলেছে-- “তুমি কি লিখবে এটা সম্পুর্ণই তোমার ব্যাপার, আমি
কেন প্রতিক্রিয়া দেখাতে যাবো।”
প্রতিদিনের
মতো চায়ের লিকারটা শেষ করলো গান শুনে শুনে। পত্রিকা হাতে নিয়ে ও রেখে দিল, ভালো লাগে
না এসব পড়তে। এর চেয়ে গান শোনা শান্তির। ছেলে স্কুলে পড়ার সময় পত্রিকা পড়তে বলেছিল
একদিন–-“পত্রিকায় কি পড়বো মা? নদী থেকে গলাকাটা লাশ উদ্বার,পানির ট্যাঙ্কে মৃত দুই শিশু,
কারখানার আগুনে ষাট জন জীবন্ত দগ্ধ!” এর পর থেকে কখনো বলেনি আর।
খালা
রান্নাঘরে ঢুকছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো-- বাতের ব্যথায় হাঁটতে পারছে
না। প্রায় দেড়কিলোমিটার পথ হেঁটে প্রতিদিন কাজে আসে সে। শিখা একবার তার দিকে তাকিয়ে
টিভির দিকে মুখ ঘুরালো,কাজের জন্য কোন তাড়া দিলনা আজ।
সাড়ে
এগারোটায় বাস, হাতে এখনো অনেক সময় আছে। রবিন আজ একটু তাড়াতাড়ি উঠলো ঘুম থেকে। আটটার
পর ও শিখাকে গান শুনতে দেখে জিজ্ঞেস করলো-- অফিস নেই আজ? আজকের পত্রিকা হাতে দিতে দিতে
শিখা বলল-- আছে, একটু দেরিতে যাবো বলেছি।
চা
বিস্কুট দিয়ে বেডরুম থেকে বের হতে গিয়ে চোখ পড়লো দেয়ালের ছেঁড়া পোস্টারের দিকে। কাল
রাত পর্যন্ত সত্যজিৎ রায়ের আঁকা রবীন্দ্রনাথ এখানেই ছিল। এখন সত্যজিৎ রায়ের সিগনেচার
আছে কিন্তু রবীন্দ্রনাথ নেই। ময়লার বাস্কেটে দলা পাকানো অবস্থায় পড়ে আছে। রাতে ঘরে
ঢুকে শিখাকে বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখেই তার মুখ খুলে গেল।বলতে বলতে এবার তার চরিত্রের
পোস্ট মর্টেম করা শুরু করলো। পোস্টারের সামনে দাঁড়িয়ে-- এতো ভালোবেসেও তোমার মন পাইনি,
তোমার মনোযোগ সবসময় অন্য জায়গায়। পৃথিবীর রূপ রস গন্ধ সবতো আমার কারণেই নিতে পেরেছ।
দু-এক পাতা রবীন্দ্রনাথ পড়ে নিজেকে কী ভাবো?
এক
টানে ছিঁড়ে ফেললো পোস্টার।
মুখ
দিয়ে কোন শব্দ বের করলোনা শিখা। এই ফ্ল্যাটে ওঠার আগে ইন্টেরিয়রের কাজের সময় প্রতি
সপ্তাহে তাকে নিয়ে আসতো এখানে। তখন দু-একবার বলেছিল, বেডরুমের দেয়ালের বড় একটা জায়গা
জুড়ে মাথায় পাগড়ি বাঁধা রবীন্দ্রনাথের ছবিটা সে লাগাতে চায়। দেয়ালে দেয়ালে বার্জারের
ইলিউশান হয়েছে, ওয়াল পেপার, কাঠের কারুকাজ হয়েছে। সিলিং এর সাইডে হয়েছে আলো আঁধারির
চমক। এতোকিছুর ভিড়ে রবীন্দ্রনাথ আর জায়গা পায়নি।
২
টিনের
কিছু একটা টেনে নেওয়ার শব্দ কানে এলো। চোখ
না খুলেই শব্দটা কোথা থেকে আসছে বুঝতে চেষ্টা করলো খানিকক্ষণ। মাথার উপরের দিক থেকেই
আসছে, কেউ হয়তো আছে উপরে। থাকুক, যার খুশি সে থাকুক। আজ আর চোখ খুলতে ইচ্ছে করছে না
শিখার। কাঁথাটা নিজের গায়ের দিকে সামান্য টেনে কাত ফিরলো। এবার জলের শব্দ ঝপ্ ঝপ্,
গাছ থেকে নারকেল পড়েছে কি, নাকি মাছ মাথা তুলে আবার ডুব দিল এক লাফে– কে জানে? অগত্যা তাকে চোখ খুলতেই হলো।
বন্ধ
জানালার ফাঁক গলে তীরের মতো রোদ ঢুকছে, যে যেভাবে পারে বিঁধে গেছে । মাটির দেওয়ালে
পাশাপাশি অনেকগুলো ছবি টাঙানো। সবই সাদাকালো, কয়েকটা ছবিতে হলদে দাগ পড়েছে। টেবিলের
উপর ফ্রেম বাঁধানো আরো একটা ছবি,প্রশস্ত কপালের নিচে গভীর দুটো চোখ চিকন চশমার আড়ালে
তাকিয়ে আছে। চুলগুলো উসকোখুসকো তখনো ছিলো এখনো আছে।
দুগজ
দূরত্বে ইজি চেয়ারে শিশুর মতো গভীর ঘুমে থাকা বৃদ্ধটি বারবার মুগ্ধ করেছে তাঁর প্রজ্ঞা দিয়ে, স্নেহমাখা
প্রশ্রয় দিয়ে-- তিনি তার কবিদাদা। তাঁর সাথে কিছুসময় কথা বললে শিখার নিজেকে ভেড়ার রাখাল
সান্তিয়াগো মনে হয় আর কবিদাদাকে সেই আলকেমিস্ট যে তাকে শেষ পর্যন্ত গুপ্তধনের সন্ধানে
পিরামিডের কাছে নিয়ে গিয়েছিল, সেই আলকেমিস্ট যে বিশ্বের ভাষাকে বুঝতে পারে আর সিসাকে
সোনা বানাতে পারা সত্ত্বেও মরুভূমিতেই রয়ে গেছে।
অচেনা
ঘরটায় নিজেকে চিনে নিতে নিতে চৌকাঠে পা রাখতেই শুনতে পেলো-
–পিসী, নতুন জায়গায় তোমার ঘুম হলো,
চা খাবে?আমি আর হরিশ কাকা কি তোমার ঘুম নষ্ট করলাম?
আজ
কবিতাশ্রম এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। দুপুরের পর পর শহর থেকে অতিথিরা চলে আসবে। বেশি না,
সব মিলিয়ে দশ জন। আরো অনেকে থাকার কথা ছিল,কিন্তু শেষ মুহূর্তে না করে দিল। মোটামুটি সব কাজ শেষের দিকে। কার্টন এখনো সব খোলা
হয়নি। দেওয়ালে নতুন তৈরি করা তাক্-এ বই সাজিয়ে রাখছে মৃদুলা আর হরিশচন্দ্র। দুজনই কবিদাদার
রক্তের কেউ না, কিন্তু তার নিজের মানুষ। মৃদুলা একটা স্কুলে পড়ায়, আজ থেকে সে নতুন
দায়িত্ব পাবে, কবিতাশ্রম-এর দায়িত্ব। কবিদাদা তাকে নিজের মতো মানুষ করেছেন।
--
ধুর্ পাগল মেয়ে, ঘুমালে কি চলবে, কতো কাজ এখনো বাকি আমাদের! হরিশ দাদা,তুমি আমাকে চা
বানিয়ে দাও,বই এর কাজ আমি করে দিচ্ছি-- বলতে বলতে পরপর দু গ্লাস পানি খেয়ে নিল।
উঠোনের
দিকে তাকাতেই চোখ আটকে গেল তুলসিমঞ্চের দিকে। এতো সুন্দর সরু আলপনা নিশ্চয়ই মৃদুলা
করেছে।চারপাশে কতো গাছ! গতকাল যখন পৌঁছাল এখানে,তখন সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে।বাস থেকে নেমে
ব্যাটারি রিকশায় আসতে আসতে মনে হলো বহুকাল ধরে সে যেন বিরক্তিকর একটা জার্নিতে আছে।শীঘ্রই
যেন এই জার্নি শেষ হতে যাচ্ছে।
--
শোন মৃদুলা, খেয়াল রাখবে গল্প, কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ, আত্মজীবনী যেন আলাদাভাবে থাকে।
লিটল্ ম্যাগাজিন আর ভ্রমণ কাহিনীও আলাদা করে রেখো। এলোমেলো কাজ তোমার বাবার একদম পছন্দ
না। অনেক স্বপ্ন তাঁর এই কবিতাশ্রম নিয়ে। ঠিক কবে থেকে আমিও এই স্বপ্নের ভেতর ডুবে
গেছি, আজ আর মনে নেই। যারা নতুন লিখছে, নতুন করে ভাবছে, তাদের জন্যই এ জায়গা। আমরা
আর কয়দিন! এইখানে প্রতি মাসে সাহিত্য বাসর হবে,ম্যাগাজিন বের হবে…
--
পিসি, তুমি কি এই বইটা পড়েছ?বা বা এই বইটা অনুবাদ কেন করলো না? ইংরেজিতে পড়তে আমার
বড্ডো খটোমটো লাগছে! পাকিস্তানি লেখিকা তাহমিনা দুররানির ‘মাই ফিউডাল লর্ড’। দেখো,এই মহিলা যেমন সুন্দর,তেমন
মেধাবী আর সাহসী-- বলতে বলতে বইটা হাতে নিয়ে শিখার পাশে দাঁড়ালো।
--
নাহ্, নাম শুনেছি। ওহ্, মাই ফিউডাল লর্ড, মাই ফিউডাল লর্ড… না রে, পড়া হয়ে ওঠেনি এখনো। ভাবছি,আমি নিজেই একটা
লিখব। তখন তুই আরো আনন্দ নিয়ে পড়তে পারবি। হা হা হা।
সাবিনা
পারভীন লীনা : কবি, কথাশিল্পী।
মন্তব্য করুন