চট্টগ্রাম বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২
চট্টগ্রাম বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২

জনপদ

পানি না থাকায় সবজি আবাদে ঝুঁকছেন চাষিরা, বাড়ছে খরচের মাত্রা।

অনাবৃষ্টিতে মিরসরাইয়ে আমন রোপণ মারাত্মক ব্যাহত

নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত : সোমবার, ২০২২ আগস্ট ২২, ০৫:৫৫ অপরাহ্ন
বৃষ্টির অভাবে নিরুপায় হয়ে দমকল দিয়ে পুকুর থেকে পানি সেচ দিয়ে জমি তৈরি করছেন মিরসরাইয়ের অধিকাংশ কৃষক।

অনাবৃষ্টি বা স্বল্পবৃষ্টির ফলে আমনের পূর্ণ মৌসুমে কৃষি জমিতে পানি না থাকায় আমন রোপণে মারাত্মক বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন মিরসরাইয়ের কৃষকরা। অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে রোপা আমনের। দুশ্চিন্তার ভাঁজ কৃষকদের কপালে। মিরসরাইয়ের অধিকাংশ কৃষকই বৃষ্টির অভাবে এখনো আমনের চারা রোপণ করতে পারছেন না। কেউ আবার আমনের আশা বাদ দিয়ে সবজি আবাদে ঝুঁকছেন।

 

মিরসরাই উপজেলায় সরেজমিনে ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এখানকার সকল জনপদেই কৃষকরা হতাশায় ভুগছেন। তাঁরা বলছেন, যথাসময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষি জমিতে পানি থাকছে না। মাঝে মাঝে একটু বৃষ্টি হলেও তা চাহিদার চেয়ে অনেক কম। বৃষ্টি কম হওয়ায়, জমিতে যে পরিমাণ পানি জমে তা কয়েক ঘন্টা না যেতেই শুকিয়ে যায়। ফলে জমি আবাদ করা যাচ্ছে না। জমি আবাদ করা না গেলে ধানের চারাও লাগানো যাবে না।

 

এদিকে বীজতলায় থাকা ধানের চারাগুলো যথা সময়ে রোপণ না করায় এবং পানির অভাবে লালচে বর্ণের হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বছরের এ সময়ের মধ্যে আমনের প্রায় ৬০ শতাংশ চারা রোপণ হয়ে যায়। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত রোপণ হয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ।

 

উপজেলার ধুম ইউনিয়নের তাহেরপুর গ্রামের ফসলের মাঠ পরিদর্শনকালে দেখা যায়, কৃষক মোহাম্মদ হোসেন মনু দমকল দিয়ে পাশের পুকুর থেকে জমিতে পানি সেচ দিচ্ছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৃষ্টি না হওয়ায় জমিতে পানি নেই। অন্যান্য কৃষকের মত তিনিও বীজতলা তৈরি করেছেন। ধানের চারাগুলো রোপণের জন্য নিরুপায় হয়ে পুকুর থেকে পানি সেচ দিয়ে জমি তৈরি করছেন। এতে খরচের মাত্রাও বাড়ছে। তিনি আরো বলেন, আগে কৃষিতে যা খরচ হতো, নিজেরা গায়ে খেটে পরিশ্রম করলে তবুও কৃষকের জন্য কিছু থাকতো। বর্তমানে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় জমি চাষে এবং সেচ দিতে খরচ দ্বিগুণ হচ্ছে।


 

তবুও ধানের চারা রোপণে কৃষকদের চেষ্টার শেষ নেই। মিরসরাইয়ের আমবাড়িয়া এলাকায় দেখা যায়, অনেকে কোনোভাবে সেচ দিয়ে আমনের চারা রোপণ করলেও পানির অভাবে চারাগুলো লালচে বর্ণ ধারণ করছে। সেখানকার স্থানীয় কৃষক আব্দুল মান্নান জমিতে ট্রাক্টর দিয়ে জমি তৈরি করছিলেন। জমিতে কী লাগাবেন জানতে চাইলে মান্নান বলেন, পাশের জমিতে ধান লাগিয়ে পানি দিতে পারছি না, তাই এই জমিতে মুলার বীজ বপন করবো। আগাম সবজিতে অন্তত লাভবান হতে পারবো। ফসল একটা যদি টিকে যায়, তবে বাঁচার আশা আছে।

এসময় তিনি আক্ষেপ করে বলেন, অন্য কোনো কাজ তো জানি না। বাঁচি আর মরি, এই কৃষি নিয়েই আমাদের বাকি জীবন কাটাতে হবে।

 

আর এভাবে অনেক কৃষক এখন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। অনেক কৃষক বীজতলার দিকে তাকিয়ে মন খারাপ করে শুধু দীর্ঘশ্বাসই ফেলছেন।

 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা বলেন, যেসব কৃষি জমিতে সেচ দিয়ে চারা রোপণের সুবিধা আছে, সেখানে সেচ দিয়ে রোপণের পরামর্শ প্রদান করেছি। তিনি আরো বলেন, আশা করছি শেষ সময়ে হলেও বৃষ্টিপাত অবশ্যই হবে। তবে প্রকৃতির এমন রুদ্ররূপে তিনিও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বৃষ্টি না হলে কৃষিতে অপূরণীয় ক্ষতি হবে বলে মনে করেন তিনি।

- নাছির উদ্দিন/মিরসরাই

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Video