৬ জুন বৃহস্পতিবার
: চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার ‘বীর নিবাস’ নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের
মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। মানহীন কাজ, কাজের ধীরগতি, সময় মতো কাজ শেষ না করা, বছরের
পর বছর ঘোরানো, কোথাও কোথাও ঘরের নির্মাণ কাজ শুরু না হওয়ার জন্য তাদের মধ্যে এ অসন্তোষ
দেখা দেয়। সময়মতো ‘বীর নিবাস’ না পেয়ে মানবেতর
জীবনযাপন করছেন দুই শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে অস্থায়ী
ঘরে গাদাগাদি করে বসবাস করছেন তারা। এনিয়ে ঘর না পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে ক্ষোভের
সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প
বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় (পিআইও) সূত্রে জানা গেছে, মিরসরাইয়ের ১৬টি ইউনিয়ন ও
২টি পৌরসভায় অস্বচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ২২১টি ‘বীর নিবাস’ নির্মাণের জন্য
২৫টি প্যাকেজে দরপত্র আহবান করা হয়। প্রতিটি ৩৩ ফুট বাই ২২ ফুট ঘর নির্মাণের জন্য বরাদ্দ
ধরা হয়েছে ১৪ লাখ টাকা। উপজেলার ২৮ জন ঠিকাদার প্রত্যেকে আট-নয়টি করে ঘর নির্মাণের
কাজ পান। ২০২২ সালের জুলাই মাসে এসব প্যাকেজের কাজ শুরু হয়। এরপর বিভিন্ন মেয়াদে ঠিকাদারদের
কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো মেয়াদ শেষ হলেও
এখনো ঘরগুলো বুঝিয়ে দেয়া হয়নি।
এদিকে ‘বীর নিবাস’ নির্মাণের জন্য
পুরাতন ঘর ভেঙ্গে জায়গা ছেড়ে দেয় মুক্তিযোদ্ধারা। পুরাতন ঘর ভেঙ্গে দিয়ে অস্থায়ী ঘর
নির্মাণ করে বসবাস শুরু করে তারা। তিন মাসের মধ্যে এসব ঘর নির্মাণ করে দেয়া কথা থাকলেও
দুই শতাধিক ঘর এখনো নির্মাণ শেষ হয়নি। ফলে দীর্ঘসময় ঘর না থাকায় একঘরে পরিবারের সকল
সদস্যদের নিয়ে গাদাগাদি করে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।
সরেজমিনে গিয়ে
বারইয়ারহাট পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর সোনাপাহাড় গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মনছুর
আহম্মদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি পুরাতন মাটির ঘর ভেঙ্গে দিয়ে ছোট্ট একটি টিনের
ঘর নির্মাণ করে সেখানে বসবাস করছেন। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া তার জন্য বরাদ্দকৃত ‘বীর নিবাস’ টির ছাদ ঢালাই
দেয়া হলেও এখনো কাজ শেষ হয়নি।
এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা
মনছুর আহম্মদ বলেন, আমি ২০২২ সালের জুন মাসে ঝড় বৃষ্টির মধ্যে পুরাতন ঘর ভেঙ্গে ঠিকাদারকে
বুঝিয়ে দিয়েছি। কিন্তু প্রায় দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ‘বীর নিবাস’ বুঝিয়ে দেয়া
হয়নি। আমি অনেক কষ্টে পরিবার পরিজন নিয়ে ছোট্ট একটি ঘরে বসবাস করছি। এক ঘরে পরিবারের
সবাই থাকতে না পারায় এক ছেলের পরিবারকে ভাড়া বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি।
জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের
মধ্যম সোনাপাহাড় গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. এছাক কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, দুই বছর
আগে পুরাতন ঘর ভেঙ্গে বীর নিবাস নির্মাণের জন্য জায়গা বুঝিয়ে দিলেও গত ৬ মাস আগে থেকে
থেমে থেমে কাজ করছে ঠিকাদার। একটা ছোট্ট রান্না ঘরে স্ত্রী সন্তান, নাতি নাতনি নিয়ে
ঝড় বৃষ্টিতে ভিজে কষ্টে দিনাতিপাত করছি। কবে কাজ শেষ হবে জানিনা।
জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের
সহকারী কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা গণি আহাম্মদ বলেন, আমার ঘরেরও এই অবস্থা ছাদ পর্যন্ত
করে বাকী কাজ বন্ধ করে রেখেছে। অনেকের ঘরের একই অবস্থা। এখন শংকায় আছি বীর নিবাসে জীবদ্দশায়
থাকতে পারবো কি না।
জানতে চাইলে উপজেলা
মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কবির আহম্মদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অস্বচ্ছল
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ঘর দিয়েছেন প্রায় দুই বছর অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু কয়েকটি ঘর বুঝিয়ে
দেয়া হলেও এখনো দুই শতাধিক ঘর বুঝিয়ে না দেয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
এবিষয়ে জানতে
চাইলে জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের ৮টি ঘরের কাজ পাওয়া মের্সাস আরএন এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী
জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, আমি চলতি মাসের ৩০ শে জুন পর্যন্ত সময় নিয়েছি। আশা করছি
এই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করে ঘরগুলো বুঝিয়ে দেবো।
এবিষয়ে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বীর নিবাস নির্মাণ প্রকল্পের সভাপতি মাহফুজা জেরিন বলেন, দুইটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে শো-কজ করা হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো ঈদুল আজহা পর্যন্ত সময় নিয়েছে। যদি এই সময়ের মধ্যে ঘর বুঝিয়ে দিতে না পারে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
- নাছির উদ্দিন,
মিরসরাই
মন্তব্য করুন