চট্টগ্রাম সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১
চট্টগ্রাম সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

সংস্কৃতি

বিকাশ চৌধুরী

হারিয়ে যাচ্ছে পটিয়ার ঐতিহ্যবাহী মেলাগুলো


প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ২০২২ Jun ২১, ০১:৪৬ অপরাহ্ন

মেলা, পার্বণ, উৎসব সব বাঙালির জাতির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ধারণ করে গ্রাম্য মেলার প্রধান আকর্ষণ সার্কাস, নাগরদোলা, যাত্রাপালা, কিংবা পুতুলনাচ। দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে হাজারো নারী-পুরুষ মেলায় ছুটে আসতো। এখন আর তা চোখে পড়ে না। পৌষ পার্বণের মেলা, চৈত্র সংক্রান্তির মেলা, হরেক রকমের পিঠা উৎসব, বৈশাখী উৎসব, যাত্রাপালা ও লোকসংস্কৃতি মেলা, বসন্তের মেলা, চৈত্রে গাজনের মেলা, ক্ষেত্রপালের মেলা, সূর্যখোলার মেলা-- সব ক্রমেই যেন হারিয়ে যেতে চলেছে। 

  কথায় আছে-বারো মাসে তেরো পার্বণের দেশ বাংলাদেশ। আগে সারা বছরই লেগে থাকত নানা ধরনের উৎসব, পালাপার্বণ। গ্রামে-গঞ্জেই সাধারণত সবচেয়ে বেশি মেলা বসতো। মেলায় বসতো জারি-সারি ভাটিয়ালি বাউল গানের আসর। সাধারণত স্কুল-কলেজের মাঠে, গ্রামের মন্দির, খালি জমিতে, নদীতীরে বা বড় বৃক্ষের তলায় বসত মেলা। এই সংস্কৃতিতে থাকতো সব ধর্মের মানুষের সমন্বয়। মেলায় যাত্রাপালা, পুতুল নাচ, নাগরদোলা, কবিগানের আসর, পালাগানের আসর, কীর্তন, ষাঁড়ের লড়াই, মোরগের লড়াই, লাঠি খেলা, হাডুডু খেলা ছাড়াও গ্রামীণ মৃৎশিল্প, কারুপণ্যের বিকিকিনি ছিল মানুষের প্রধান আকর্ষণ। 

  এ ঐতিহ্য সংস্কৃতি ও জৌলুস চট্টগ্রামের পটিয়া থেকেও ক্রমেই হারিয়ে যেতে বসেছে। পটিয়া উপজেলার চক্রশালা (বর্তমান হাইদগাঁও)’র ফোরাচেঙ্গী মেলা, শ্রীমতির (ছিরমাইয়ের) মেলা, ভাটিখাইনের ঠেগরপুনি বুড়া গোঁসাই মেলা, হাইদগাঁওয়ের সূর্যদেবের মেলা বা সূর্যখোলা, চক্রশালা সূর্যখোলা, মহিরা ক্ষেত্রপাল মেলা, চড়কপূজার মেলা ছাড়াও পটিয়া পৌর সদরের ৬নং ওয়ার্ডে আমজু মিয়ার বলিখেলার মেলা ও ষাঁড়ের লড়াই ছিল আকর্ষণীয়। বাংলা বছরের শেষে চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে চক্রশালা (হাইদগাঁও)’র ফোরাচেঙ্গী মেলা, শ্রীমতি মেলা, সূর্যখোলার মেলা, মহিরা ক্ষেত্রপাল মেলার এবার আয়োজন করা হয়েছে ছোট পরিসরে।

   জানা গেছে, প্রতিবছর চৈত্র সংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখকে ঘিরে উপজেলার কিছু ইউনিয়নে ও পৌর সদরে এসব অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়ে থাকে। করোনা মহামারী ও রমজানের কারণে গত তিন বছর ধরে বর্ষবরণ ও বর্ষবিদায় উৎসব ও মেলা বন্ধ রয়েছে। হাইদগাঁও গ্রামে প্রতি বছর বিষুব সংক্রান্তির দিন ফোরাচেঙ্গী মেলা বসে এবং এ দিন বুদ্ধপদে বৌদ্ধগণ পিণ্ডদান করে থাকেন। লোকমুখে এটি ফরাচেঙ্গী বা ফরাতারার মেলা নামে পরিচিত। মেলায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সব ধর্মের নারী-পুরুষ ছুটে আসেন। একইভাবে উপজেলার জিরি ইউনিয়নের মহিরা ক্ষেত্রপাল মেলা ও বিগ্রহ মন্দিরে দূরদূরান্ত থেকে লোকজন পূজাঅর্চনা দিতে আসেন। প্রতি বছর ৩০ চৈত্র অর্থাৎ চৈত্র সংক্রান্তির দিন মহিরা গ্রামে ক্ষেত্রপালের মেলা বসে থাকে। প্রাচীন এ মেলাটির দশদিনব্যাপী আয়োজন ছিল বলে শোনা গেলেও মূলত লোকজনের সমাগম হতো প্রথম, দ্বিতীয় ও দশম দিন। 

  নানা কারণে গ্রাম্য মেলা ও ঐতিহ্য দিন দিন হারিয়ে যেতে চলেছে। পটিয়া সম্মিলিত বর্ষবরণ ও বর্ষবিদায় উৎসব কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান, শিক্ষক শ্যামল কান্তি দে জানিয়েছেন, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য সংস্কৃতি ও জৌলুস দিন দিন পটিয়া থেকেও হারিয়ে যেতে চলেছে। প্রতিবছর শীত মোসুম এলেই পটিয়ার গ্রামেগঞ্জে অনেক মেলা বসতো। পহেলা বৈশাখকে ঘিরে দুদিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হত। মেলা, পার্বণ, উৎসব সবগুলো বাঙালির জাতির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ধারণ করে। এসব সংস্কৃতি থেকে নতুন প্রজন্মরা আজ অনেক দূরে চলে গেছে। 

  মহিরা ক্ষেত্রপাল বিগ্রহ মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান দেবব্রত দাশ দেবু জানিয়েছেন, মহিরা ক্ষেত্রপাল বিগ্রহ মন্দির প্রাচীন একটি মন্দির। চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে এখানে একসময় দশদিনব্যাপী মেলা বসতো। করোনা মহামারীসহ বিভিন্ন কারণে এবার ছোট পরিসরে ১৩, ১৪ ও ১৫ এপ্রিল মেলার আয়োজন করা হয়। পটিয়া ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নারী-পুরুষরা পূজার্চনা দিতে ক্ষেত্রপাল বিগ্রহ মন্দিরে আসেন।


আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Video