যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো এফবিআই সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফ্লোরিডার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে। এফবিআই এজেন্টরা সেখানে একটি সিন্দুক ভেঙে ১৫ বাক্স কাগজপত্র নিয়ে এসেছে, যার মধ্যে অনেক গোপনীয় নথিপত্রও ছিল।
ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি
বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়ে বলেছেন, পাম বিচে থাকা তার বাড়ি মার-এ-লাগো-তে “এফবিআইয়ের
বিশাল একটি দল অবস্থান করছে”।
জানা যাচ্ছে,
প্রেসিডেন্ট থাকার সময় সরকারি কাগজপত্র কীভাবে ব্যবহার করেছেন, তা নিয়ে একটি
তদন্তের অংশ হিসাবে এই তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের
ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশি বেড়েছে এমন সময়, যখন তিনি ২০২৪-এর
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মনোনয়নের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।
সংবাদ সংস্থা সিএনএনের
তথ্য অনুযায়ী, এফবিআইয়ের ওই অভিযানের সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প নিউ ইয়র্কের ট্রাম্প
টাওয়ারে ছিলেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের
বিবৃতি শুরু হয়েছে এভাবে, “আমাদের জাতির জন্য এটা একটা অন্ধকার সময়”।
তিনি বলেছেন, তদন্তকারী
সব সরকারি সংস্থাকে তিনি সহযোগিতা করেছেন, ফলে “আমার বাড়িতে এই অঘোষিত
অভিযানের দরকার ছিল না, যথোচিত হয়নি”।
তিনি অভিযোগ করেছেন,
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে তাকে বিরত রাখতে বিচার বিভাগকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার
করা হচ্ছে।
“এ ধরনের হামলা শুধুমাত্র ভঙ্গুর, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোয় দেখা
যায়। দুঃখজনক হলো, আমেরিকান এখন সেসব দেশের একটি হয়ে উঠেছে, এরকম দুর্নীতি আগে
কখনো দেখা যায়নি,'' তিনি বলেছেন।
“তারা এমনকি আমার একটা সিন্দুকও ভেঙেছে,”
বলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
মার্কিন গণমাধ্যম
সিবিএস জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট থাকার সময় ন্যাশনাল আর্কাইভ রেকর্ড কীভাবে ডোনাল্ড
ট্রাম্প ব্যবহার করেছিলেন, তা নিয়ে তদন্তের জের ধরে মার-এ-লাগোয় অভিযান
চালিয়েছে এফবিআই।
যুক্তরাষ্ট্রের
প্রেসিডেন্সিয়াল নথিপত্র সংরক্ষণ করে ন্যাশনাল আর্কাইভস। ডোনাল্ড ট্রাম্প কীভাবে
সেখানকার নথিপত্র ব্যবহার করেছেন, তা তদন্ত করে দেখতে গত ফেব্রুয়ারিতে সংস্থাটি
মার্কিন বিচার বিভাগের কাছে অনুরোধ করে।
যুক্তরাষ্ট্রের আইন
অনুযায়ী, মার্কিন প্রেসিডেন্টকে তার সকল চিঠিপত্র, কাজের কাগজপত্র এবং ইমেইল
ন্যাশনাল আর্কাইভের কাছে হস্তান্তর করতে হয়।
কিন্তু কর্মকর্তারা
দাবি করেছেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট এরকম অনেক নথিপত্র বেআইনিভাবে ছিঁড়ে ফেলেছেন।
ন্যাশনাল আর্কাইভস
জানিয়েছে, অনেক কাগজপত্র আবার আঠা লাগিয়ে জোড়া দিতে হয়েছে।
যখন প্রথম এই খবর
প্রকাশিত হয়, তখন সেটি 'মিথ্যা সংবাদ' বলে দাবি করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের একজন
জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা সিবিএসকে বলেছেন যে, প্রেসিডেন্সিয়াল রেকর্ডের জের ধরেই
মার-এ-লাগোতে ফেডারেল এজেন্টরা অভিযান চালিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
ওই উপদেষ্টা বলেছেন, “এটা শুধুমাত্র প্রেসিডেন্সিয়াল রেকর্ড অ্যাক্টের কারণে অভিযান।
আপনি কখনো শুনেছেন এ আইনের কারণে কোনো অভিযান হতে।”
তিনি জানান, “তারা
(এফবিআই এজেন্টরা) চলে গেছে এবং তাদের অর্জন খুবই সামান্য।”
নিউইয়র্ক টাইমসের
সাংবাদিক ম্যাগি হোবারম্যানের ‘কনফিডেন্স ম্যান’ নামের যে বই প্রকাশিত হতে চলেছে, সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন যে,
হোয়াইট হাউজের একটি টয়লেটে প্রায়ই কাগজের স্তূপ দেখতে পেয়েছেন কর্মীরা। এগুলো
ডোনাল্ড ট্রাম্প ফেলেছেন বলেই তাঁদের ধারণা।
হোয়াইট হাউজের একটি
টয়লেটের ছবিও পেয়েছেন হোবারম্যান।
হোয়াইট হাউজের একজন
জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সিবিএসকে বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাড়িতে অভিযানের ব্যাপারে
তাঁদের কিছু জানানো হয়নি। তিনি বলেন, “আমরা আগে থেকে কিছু
জানতাম না। আমাদের কেউ কেউ গণমাধ্যম থেকে জেনেছি, কেউ কেউ সামাজিক মাধ্যম থেকে।”
এবিষয়ে প্রকাশ্যে
গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি নেই ওই কর্মকর্তার, তাই নাম প্রকাশে সম্মত হননি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো
বাইডেন প্রশাসনের হোয়াইট হাউজ বলেছে, তারা বিচার বিভাগের সঙ্গে যতটা সম্ভব সীমিত
যোগাযোগ রাখতে চায়, যাতে তাদের রাজনৈতিক চাপ দেয়া বা নিরপেক্ষতা নিয়ে কোন
প্রশ্ন না ওঠে।
পুরো প্রেসিডেন্ট
মেয়াদে বিচার বিভাগের কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের দূরে রাখতে চান বাইডেন। কর ফাঁকি বা
অন্যান্য ফেডারেল অভিযোগে তার সন্তান হান্টার বাইডেনকে অভিযুক্ত করা হয় কিনা, মি.
প্রেসিডেন্ট এবং তার পরিবার আরও অপেক্ষা করছেন।
ন্যাশনাল আর্কাইভসের এই
বিষয় ছাড়াও গত বছরের ছয়ই জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলের দাঙ্গায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের
কর্মকাণ্ড নিয়ে তদন্ত করছে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের একটি কমিটি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট
নির্বাচনে জো বাইডেনের বিজয় যখন কংগ্রেসে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছিল, তখন
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা কংগ্রেসে ঢুকে পড়ে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প কীভাবে ২০২০ সালের নির্বাচনের ফলাফল চ্যালেঞ্জ করেছিলেন, যেটাও যাচাই করতে শুরু করেছে মার্কিন বিচার বিভাগ।
মন্তব্য করুন