চট্টগ্রাম বুধবার, ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ২৬ চৈত্র ১৪৩১
চট্টগ্রাম বুধবার, ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ২৬ চৈত্র ১৪৩১

আন্তর্জাতিক

কথা বলতে পারছেন না, চোখ হারাতে পারেন

ছুরিকাহত রুশদি হাসপাতালে ভেন্টিলেশনে


প্রকাশিত : শনিবার, ২০২২ আগস্ট ১৩, ১০:৪১ পূর্বাহ্ন
নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠানের মঞ্চে ছুরিকাহত হওয়ার পর লেখক সালমান রুশদিকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য হেলিকপ্টারে তোলার দৃশ্য।

নিউইয়র্কে ছুরি হামলায় গুরুতর আহত লেখক সালমান রুশদির খবর ভালো নয়। তাঁর গলা ও পাকস্থলীর জখম গুরুতর এবং তিনি চোখ হারাতে পারেন।

 

রুশদির মুখপাত্র (এজেন্ট) অ্যান্ড্রু ওয়াইলি এক বিবৃতিতে বলেছেন, রুশদিকে মঞ্চেই আক্রমণ করা হয়েছে এবং এখন তিনি হাসপাতালের ভেন্টিলেশনে রয়েছেন ও কথা বলতে পারছেন না।

 

বিগত ১৯৮৮-তে তাঁর স্যাটানিক ভার্সেস বইটি প্রকাশের পর থেকে রুশদি ইসলামপন্থীদের হত্যার হুমকির মধ্যে ছিলেন।

 

তাঁর উপর হামলার ঘটনায় পুলিশ নিউ জার্সি থেকে ২৪ বছর বয়সী হাদি মাতার নামে একজন সন্দেহভাজনকে আটক করেছে।

 

নিউইয়র্কের পুলিশ বলছে, শিটোকোয়া ইন্সটিটিউশনে সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তি দৌঁড়ে মঞ্চে গিয়ে রুশদি এবং তাঁর সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীকে আক্রমণ করে।

 

ওয়াইলি বলেন, সালমান সম্ভবত চোখ হারাতে পারেন। তাঁর বাহুর স্নায়ু এবং যকৃৎ ছুরির আঘাতে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

 

পুলিশ এখনো এ হামলার পেছনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে কোনো ধারণা দিতে পারেনি। তাঁরা অনুষ্ঠানস্থলে পাওয়া ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ও একটি ব্যাগ পরীক্ষা করে দেখছে।

 

রুশদিকে গলায় ও পাকস্থলী বরাবর ছুরিকাঘাত করা হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। হামলার পরপরই তাঁকে হেলিকপ্টারে করে পেনসিলভেনিয়ার একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

 

অন্যদিকে মঞ্চে রুশদির যিনি সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন, সেই হেনরি রিসে-কে স্থানীয় একটি হাসপাতালে রাখা হয়েছে। তিনি মাথায় অল্প আঘাত পেয়েছেন।

 

হত্যার হুমকি পাওয়া নির্বাসিত লেখকদের জন্য কাজ করা একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা তিনি।

 

পুলিশ এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, সেখানকার কর্মকর্তা ও দর্শক-শ্রোতারা দ্রুত দৌঁড়ে গিয়ে হামলাকারীকে ধরে ফেলেন ও পরে তাকে আটক করা হয়।

 

ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী লিন্ডা আব্রামস নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, বাধা দেয়ার পরেও হামলাকারী রুশদিকেও আঘাত করার চেষ্টা করছিল।

 

তিনি বলেন, সে আঘাত করেই যাচ্ছিল। তাকে সরাতে পাঁচ জন লেগেছে। সে ছিল ক্ষিপ্ত অবস্থায়। খুবই শক্তিশালী ও ত্বরিতগতি।

 

স্যাটানিক ভার্সেস বইটি প্রকাশের পর থেকে লেখক সালমান রুশদি অব্যাহতভাবে মৃত্যুহুমকির মুখে আছেন।

 

আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী রিটা ল্যান্ডম্যান বলেছেন, হামলার পর পর দেখে মনে হচ্ছিল রুশদি বেঁচে আছেন। লোকজন চিৎকার করে বলছিল, এখনো তাঁর নাড়ি পাওয়া যাচ্ছে, নাড়ি পাওয়া যাচ্ছে।

 

অনলাইনে পোস্ট করা এক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, এসময় কিছু দর্শক দ্রুত মঞ্চের দিকে ছুটে যাচ্ছেন। সেখানে উপস্থিত লোকজন হামলাকারীকে থামাচ্ছেন।

 

পুলিশ বলছে দর্শকদের মধ্যে থাকা একজন চিকিৎসক আহত লেখককে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছেন।

 

ভারতে জন্ম নেয়া ঔপন্যাসিক সালমান রুশদি ১৯৮১-তে তাঁর মিডনাইটস চিলড্রেন বইটি দিয়ে খ্যাতিমান হন। শুধু যুক্তরাজ্যেই বইটি দশ লাখ কপির বেশি বিক্রি হয়েছিলো।

 

তবে তাঁর চতুর্থ বইয়ের জন্য তাঁকে প্রায় দশ বছর আত্মগোপনে থাকতে হয়। এটি হলো ১৯৮৮-তে প্রকাশিত হওয়া স্যাটানিক ভার্সেস

 

বইটি বিশ্ব জুড়ে মুসলিমদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দেয়। তারা মনে করে, এ বইয়ে ইসলা ধর্মের অবমাননা করা হয়েছে। অনেক দেশে বইটি পরে নিষিদ্ধ করা হয়।

 

বইটির অনুবাদকারী একজন জাপানির ওপরেও ১৯৯১-এ হামলা হয়েছিল। এর কয়েক মাস করে একজন ইতালীয় অনুবাদকারীও হামলার শিকার হয়েছেন। গুলি করা হয়েছিল বইটির নরওয়েজীয় প্রকাশককেও। যদিও তাঁরা বেঁচে গিয়েছিলেন।

 

এছাড়া রুশদি বিরোধী দাঙ্গায় বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছে। তেহরানে ব্রিটিশ দূতাবাসেও হামলা হয়েছিল।

 

বইটি প্রকাশের এক বছর পর ইরানের ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি রুশদির মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন এবং এ জন্য ত্রিশ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে একটি ফতোয়া দেন।

 

রুশদির মাথার মূল্য ঘোষণা করে দেয়া এই ফতোয়া এখনো বহাল আছে। যদিও ইরান সরকার খোমেনির এই ফতোয়া থেকে দূরত্বই বজায় রাখছিলো। তবে ইরানের ধর্মীয় ফাউন্ডেশনের একজন কর্মকর্তা ২০১২-এ পুরস্কারের অর্থমূল্য ৫ লাখ ডলার বাড়িয়ে দেন।

 

সালমান রুশদি একজন ব্রিটিশ আমেরিকান নাগরিক। মুসলিম হিসেবে জন্মগ্রহণ করলেও পরে তিনি কোনো ধর্মবিশ্বাসী ছিলেন না।

 

তিনি নিজেকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে শক্ত কণ্ঠ হিসেবে তুলে ধরেন এবং বিভিন্ন সময়ে তাঁর কাজের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন।

 

২০০৭-এ ব্রিটেনে তাকে যখন নাইটহুড দেয়া হয় তা নিয়েও ইরান ও পাকিস্তানে প্রবল প্রতিবাদ হয়। একজন মন্ত্রী বলেছিলেন যে এই সম্মান আত্মঘাতী হামলাকে বৈধতা দেয়

 

মিস্টার রুশদির অনেক সাহিত্য বিষয়ক অনুষ্ঠান হুমকি ও বয়কটের শিকার হয়েছে। কিন্তু তিনি লেখা অব্যাহত রেখেছেন। তার পরবর্তী বই ভিক্টরি সিটি ২০২৩ সালে প্রকাশিত হওয়ার কথা।

 

বিশ্ব জুড়ে প্রতিক্রিয়া

 

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন টুইট করে বলেছেন, রুশদি এমন একটি অধিকার চর্চা করার সময় আক্রান্ত হয়েছেন, যেটি রক্ষার চেষ্টায় কখনোই হাল ছাড়া যাবে না।

 

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাঁক্রো বলেছেন, রুশদি ঘৃণ্য ও বর্বর শক্তির কাপুরুষোচিত হামলার শিকার হয়েছেন।

 

লেখক ও গ্রাফিক নভেল ক্রিয়েটর নেইল গেইম্যান বলেছেন, লেখকের ওপর এ হামলার ঘটনায় তিনি বিস্ময়ে বিমূঢ়।

 

এক টুইট বার্তায় তিনি লিখেছেন, তিনি একজন চমৎকার মেধাবী মানুষ। আশা করি তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।

 

অন্যদিকে নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হকুল এ ঘটনার তদন্তে করণীয় সব কিছু করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

 

তিনি বলছিলেন,একজন মানুষ কয়েক দশক ধরে সত্য উচ্চারণ করে যাচ্ছেন। হুমকি সত্ত্বেও নির্ভয়ে কথা বলেছেন সারাজীবন।” 


আরো পড়ুন: নিউইয়র্কের মঞ্চে ছুরিকাঘাতে গুরুতর জখম সালমান রুশদি


মন্তব্য করুন

Video