হামাস পরিচালিত ফিলিস্তিন অঞ্চলে রবিবার ১৭টি ত্রাণবাহী ট্রাকের আরেকটি বহর এসে পৌঁছলে ইসরায়েল যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ছিটমহলে হামলা জোরদার করে তোলে। হামলায় গাজার মধ্যাঞ্চলে বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। অঞ্চলটি বর্তমানে ‘বিপর্যয়কর’ পরিস্থিতি
ইরান বলেছে, বেপারোয়া সহিংসতা অঞ্চলটিকে ক্রমশ ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে’ নিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কঠোর সতর্কতা দিয়ে বলেছেন, লেবাননের হিজবুল্লারা যুদ্ধে জড়িত হওয়া ‘সবচেয়ে বড় ভুল হবে’।
২৩ অক্টোবর সোমবার এএফপি’র সংবাদ মাধ্যমে আরো জানা যায় ওয়াশিংটন সতর্ক করে বলেছে, কেউ সংঘাতে উস্কানি দিতে চাইলে বা কোনো ‘তীব্রতর’ ঘটনা ঘটালে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করবে না ওয়াশিংটন।
ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মতে, গাজায় হামাস যোদ্ধারা ৭ অক্টোবর সীমান্ত অতিক্রম করে ভয়াবহ অভিযান চালালে ১৪শ’ ইসরায়েলি নিহত হয়। এদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। অভিযানে হামাস যোদ্ধারা ২শ’ জনেরও বেশি লোককে জিম্মি করে।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ইসরায়েল পরবর্তিতে প্রতিশোধমূলক বিরামহীন বোমা হামলা চালিয়ে এ পর্যন্ত ৪,৬০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। এদের প্রায় সবাই বেসামরিক নাগরিক। কর্মকর্তারা জানান, কেন্দ্রীয় শহর দেইর আল-বালাহ শনিবার থেকে রোববার রাতভর হামলায় মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মন্ত্রণালয় জানায়, গাজায় রাতভর অভিযানে অন্তত ৮০ জন নিহত হয়েছে। এতে ৩০টিরও বেশি বাড়ি ধ্বংস হয়েছে।
এএফপি’র একজন সাংবাদিক হাসপাতালের মর্গের রক্তাক্ত মেঝেতে অনেক শিশুর মৃতদেহ দেখতে পান। সেখানে বিক্ষুব্ধ পরিবারগুলো মৃতদের শনাক্ত করে আহাজারি করছিল। তাদের মধ্যে একজন তার মৃত শিশুটিকে আঁকড়ে ধরে, একটি ছোট ছেলে তার ছোট বোনের শরীরে একটি কম্বল টেনে দেয়।
এছাড়াও রবিবার জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডাব্লিউএ) বলেছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সংস্থার ২৯ জন কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। আগে টুইটার হিসেবে প্রচলিত এক্সে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে নিহত কর্মীদের অর্ধেক শিক্ষক। শনিবার সংস্থাটি ১৭ জনের মৃত্যুর কথা জানায়।
মাত্রাতিরিক্ত বোমা হামলার কারণে মৌলিক সিস্টেমগুলো বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘ বলেছে, কোল্ড স্টোরেজ ভর্তি হয়ে যাওয়ায় কয়েক ডজন অজ্ঞাত লাশ গাজা নগরীর একটি গণকবরে দাফন করা হয়েছে।
এদিকে সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গাজা সীমান্তের কাছে ছিটমহলের ভেতরে ফিলিস্তিনি দলের ছোঁড়া ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে একজন ইসরায়েলি সৈন্য নিহত হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ কয়েক মাস সময় চলতে পারে বলে হুঁশিয়ার দিয়েছেন। গ্যালান্ট বলেন, এ যুদ্ধ এক মাস, দুই মাস, তিন মাস সময় নেবে এবং শেষ পর্যন্ত হামাস আর থাকবে না।
নিবিড় আলোচনা ও মার্কিন চাপের পর শনিবার প্রাথমিকভাবে ২০টি ট্রাক ত্রাণ বিতরণের পর রোববার মিশর থেকে ১৭ ট্রাক ত্রাণের দ্বিতীয় বহর গাজায় প্রবেশ করে। মিশরীয় মিডিয়া বলেছে, সোমবার আরো ৪০ ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে।
জাতিসংঘ বলেছে, গাজার ২৪ লাখ বাসিন্দার চাহিদা মেটাতে ছিটমহলটিতে প্রতিদিন ১০০ ট্রাক ত্রাণ প্রয়োজন এবং এখনও পর্যন্ত জ্বালানীর কোনও সরবরাহ করা হয়নি। ইউএনআরডাব্লিউএ’র প্রধান ফিলিপ লাজারিনি রোববার সরবরাহ ‘তিন দিনের মধ্যে’ শেষ হয়ে যাবে বলে সতর্ক করেন। হামাস সরকার বলেছে, ১৬৫,০০০ আবাসন ইউনিট পুরো গাজা উপত্যকার অর্ধেক অভিযানে ধ্বংস হয়েছে।
সংঘাত ছড়িয়ে পড়তে পারে এমন আশঙ্কায়, ইসরায়েল রবিবার ভুলবশত একটি মিশরীয় সীমান্ত চৌকিতে হামলার কথা স্বীকার করে ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়েছে। কায়রো বলেছে, ওই হামলায় কয়েকজন সীমান্ত রক্ষীর মৃত্যু হয়েছে।
- মা.ফা.
মন্তব্য করুন