হামাসের হামলার প্রতিশোধ নিতে ইসরাইল গত শনিবার ৭ অক্টোবর ২৩ লাখ লোকের একটি ঘনবসতিপূর্ণ ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজায় নির্বিচারে বিমান ও কামানের গোলা হামলা চালিয়ে গাজাকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছে। এতে ভবনগুলো মাটির সাথে মিশে গেছে। এই নির্বিচার হামলা চালিয়ে ইসরাইল ১,৪০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। এদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। জনাকীর্ণ ছিটমহলে ৪ লাখের বেশি লোককে বাস্তুচ্যুত করেছে ইসরাইল।
আকাশ, সমুদ্র এবং স্থল থেকে ভারী ইসরাইলি বোমাবর্ষণ প্রায় নিরবচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যেই ইসরাইল ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে স্থল অভিযান শুরু করেছে।
১৩ অক্টোবর এএফপির সংবাদ মাধ্যমে আরো জানা যায়, হামাসের হামলার প্রতিশোধ হিসেবে ব্যাপক বোমাবর্ষণের মধ্যে জাতিসংঘের ভয়াবহ ‘বিধ্বংসী’ পরিণতির সতর্কতা সত্ত্বেও ইসরায়েল গাজার ১১ লাখ মানুষকে অবিলম্বে সরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
গাজা শহরের বাসিন্দাদের দক্ষিণে সরে যাওয়ার নির্দেশের বিষয়টি ইসরায়েলি সেনাবাহিনী শুক্রবার নিশ্চিত করেছে।
এ বিষয়ে জাতিসংঘ বলেছে, উত্তর গাজার সমগ্র জনসংখ্যাকে ছিটমহলের দক্ষিণে স্থানান্তর করা ‘অসম্ভব’ এবং এই আদেশ প্রত্যাহার করার জন্য জরুরি আবেদন জানিয়েছে।
এসময় গাজায় কর্মরত জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলেছেন, এর আগে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী তাদের ‘ওয়াদি গাজার উত্তরে গাজার সমগ্র জনসংখ্যাকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দক্ষিণ গাজায় স্থানান্তর করতে হবে’ বলে জানিয়েছে।
জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এএফপিকে বলেছেন, এই জনসংখ্যা প্রায় ১১ লাখ, আদেশটিতে জাতিসংঘের সমস্ত কর্মী এবং স্কুল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং ক্লিনিকসহ জাতিসংঘের সুবিধাগুলোতে আশ্রয় প্রাপ্তদের জন্যও প্রযোজ্য।
ইসরায়েলের নিশ্চিতকরণের আগে ডুজারিক বলেন, জাতিসংঘ দৃঢ়ভাবে এই ধরনের যে কোনো আদেশের প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছে। এই আদেশ ইতোমধ্যেই বিপর্যস্ত গাজার পরিণতি একটি বিপর্যয়কর ট্রাজেডিক পরিস্থিতিতে রূপান্তরিত করতে পারে।
জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান জাতিসংঘের প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, গাজার বাসিন্দাদের সতর্কবার্তার ব্যাপারে জাতিসংঘের প্রতিক্রিয়া ‘লজ্জাজনক’।
ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অফ দ্য রেড ক্রস মধ্যপ্রাচ্যের প্রধান ফ্যাব্রিজিও কার্বোনি গাজার হাসপাতালগুলোকে ‘মর্গে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি’ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন।
সবচেয়ে বড়, আল-শিফা হাসপাতালে বৃহস্পতিবার একটি বিশৃঙ্খল দৃশ্য ছিল, অ্যাম্বুলেন্সের একটি নিরবচ্ছিন্ন স্রোত, আত্মীয়রা খাবারের জন্য জিজ্ঞাসা করে এবং মৃতদের আত্মীয়দের আর্তনাদ ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
এএফপির একটি দল হিমাগারের মেঝেতে সাদা কাফনে মোড়ানো কয়েক ডজন লাশ দেখেছে।
হামাস ইসরাইল আক্রমণের পর তার প্রথম প্রকাশ্য মন্তব্যে, ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট আব্বাস ‘ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ব্যাপক আগ্রাসন অবিলম্বে বন্ধ করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা গাজা এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজন মেটানোর জন্য প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলারের জরুরি আবেদন জানিয়েছে।
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মন্তব্য করুন