রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী
অবস্থান সমগ্র অঞ্চল জুড়ে বিপর্যয়ের পাশাপাশি ব্যাপক নিরাপত্তা সমস্যা তৈরি করছে
এবং তারা সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলির দ্বারা উগ্রবাদীতায় অনুপ্রাণিত ও নিয়োজিত হওয়ার
সম্ভাব্য লক্ষ্যে পরিণত হতে পারে। ৩ মার্চ জি-২০ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনের এক
অধিবেশনে এসব কথা বলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।
অধিবেশনে জোরপূর্বক
বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের অবিলম্বে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে সাহায্য
করার জন্য জি-২০ সহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্র
মন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।
ভারতের
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্করের সভাপতিত্বে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো
বলেন, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সাহায্য করার পাশাপাশি, জীবন বাঁচাতে এবং মানবিক
সংকটে জনগণকে রক্ষা করতে বাংলাদেশ যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত
রয়েছে। এসময় তিনি কোভিড-১৯-এর কঠিন সময়ে কয়েকটি প্রতিবেশী দেশের প্রতি বাংলাদেশের
সহায়তার কথা উল্লেখ করেন।
অধিবেশন শুরু হয় ভারতের
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রেকর্ড করা ভিডিও ভাষণ দিয়ে। এতে বাংলাদেশসহ
বিশেষভাবে আমন্ত্রিত নয়টি দেশ এবং ১৩টি আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ ৪০টিরও বেশি
প্রতিনিধি দল গত সন্ধ্যায় বর্ণ্যাঢ্য সম্মেলনে যোগ দেন।
সন্ত্রাসবাদকে একটি
গুরুতর চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে এ কে আবদুল মোমেন আরো বলেন, চ্যালেঞ্জ শুধু
আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য নয়, মানব নিরাপত্তার জন্যও। প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো-টলারেন্স’ নীতি
বজায় রেখেছে। আমরা কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনকে বাংলাদেশের মাটি অন্য কোনো দেশের
বিরুদ্ধে ব্যবহার করার সুযোগ দেই না। আমাদের সরকারের সক্রিয় উদ্যোগের কারণে ভারত,
বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব ভারত বর্তমানে অব্যাহত উন্নয়ন, শান্তি ও নিরাপত্তা সুবিধা
ভোগ করছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের
কথা উল্লেখ করে এ কে আবদুল মোমেন আরো বলেন, এই সংকট বিভিন্ন দেশের অনেকের জন্য,
বিশেষ করে নারী ও শিশুদের জন্য কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা
নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষিতে সরবরাহ শৃঙ্খল এবং আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থায় ব্যাঘাতের
কারণে অনেক সরকারই মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্য মূল্য নিয়ন্ত্রণে আনতে দিশেহারা হয়ে পড়ছে।
অধিবেশনে এ কে আবদুল
মোমেন জি-২০ সভাপতি হিসাবে ভারতকে বিভিন্ন সঙ্কটের অবসান এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে
সমস্যাগুলির সমাধান করার জন্য জি-২০ নেতাদের প্রভাবিত করার আহ্বান জানিয়ে আরো
বলেন, সংকট বিবেচনা করে, জি-২০ নেতৃত্বের উচিত সংকটের কারণে মুনাফা অর্জনকারী
প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের লাভের কমপক্ষে ২০% সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলির জন্য
বরাদ্দ বাধ্যতামূলক করা।
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কথা
উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এই গ্রহটিকে রক্ষা করার
লক্ষ্যে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক গোষ্ঠী জি-২০ দেশগুলোর প্রতিরক্ষা ব্যয়ের
অন্তত ১০% জলবায়ু তহবিলে প্রদান করার বিষয়ে জি-২০ নেতৃত্বকে প্রভাবিত করার জন্য
জি-২০ প্রেসিডেন্সিকে অনুরোধ জানান।
মন্ত্রী জি-২০-তে বাংলাদেশকে অতিথি দেশ হিসেবে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ভারতকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্টভাবে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান অনন্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গভীরতা ও উষ্ণতাকে প্রতিফলিত করে।
- মা.ফা.
মন্তব্য করুন