মামলায় হাজিরা দিতে এসে গ্রেফতার হন পাকিস্তানের সাবেক
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ৯ মে মঙ্গলবার বিচারাধীন কয়েক ডজন মামলার একটির জন্য
হাজিরা দিতে আসলে রাজধানীর একটি আদালতে গ্রেফতার হন তিনি। ইমরান খানের
গ্রেফতারের পর দেশজুড়ে তীব্র বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষোভ দমনের জন্য তলব করা হয়েছে
সেনাবাহিনীকে।
১০ মে বুধবার কেবিনেট রাজধানীসহ পাঞ্জাব এবং খাইবার
পাখতুনখোয়া এ দুটি প্রদেশে সেনাবাহিনী মোতায়েনের অনুমোদন দিয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী
শেহবাজ শরীফের কার্যালয় থেকে এই বিষয় নিশ্চিত করা হয়।
১১ মে বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে
আরো জানায়, গ্রেফতারের পর দেশজুড়ে গড়ে ওঠা তীব্র বিক্ষোভে এ পর্যন্ত আটজন নিহত
হয়েছে এবং গ্রেপ্তার হয়েছে এক হাজারেরও বেশি লোক।
দুর্নীতির অভিযোগে ইমরান খানকে রাজধানী ইসলামাবাদের হাইকোর্ট
চত্বর থেকে গ্রেফতারের পর অজ্ঞাত স্থানে রাখা হয়। পরে বুধবার তাকে পুলিশ সদর
দপ্তরের বিশেষ রুদ্ধদ্বার আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে শুনানি চলার সময় খানকে তার
কৌঁসুলিদের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়। তবে রুদ্ধদ্বার আদালত কক্ষে অনুষ্ঠিত এই
শুনানির বিস্তারিত এখনো জানা যায়নি।
ইমরান খানের আইনজীবী আলী বুখারি সংবাদকর্মীদের জানান, আদালত
ইমরান খানের আট দিনের শারীরিক রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। যদিও সরকারি কৌঁসুলিরা তার ১৪
দিনের রিমান্ড দাবি করেছিল। আইনজীবী আফজাল মারওয়াত আরো জানান, ইমরান খান ভালো আছেন। তবে
গ্রেফতারের সময়ে আধা সামরিক বাহিনী তার মাথায় ও পায়ে আঘাত দিয়েছে।
এদিকে তার গ্রেফতারের প্রতিবাদে পাকিস্তান উত্তাল হয়ে উঠেছে।
সর্বশেষ দফা বিক্ষোভের সময় বিক্ষোভকারীরা লাহোরে এক সেনা অধিনায়কের বাড়িতে আগুন
ধরিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে রাওয়ালপিন্ডিতে বিক্ষোভকারীরা সেনা সদর দপ্তরের প্রবেশমুখ
অবরোধ করেছে। মঙ্গলবার রাত থেকেই পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে ইমরান খানের সমর্থকদের
সঙ্গে পুলিশের খন্ডখন্ড লড়াই শুরু হয়ে যায়। পুলিশ বলেছে, তারা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দাঙ্গাকারীদের ধরার
চেষ্টা করছে। এ পর্যন্ত দেশজুড়ে এক হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক টেলিভিশন ভাষণে দেশটির
প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ হুঁশিয়ার করে বলেছেন, সহিংস বিক্ষোভ সহ্য করা হবে
না। ‘যারা আইন নিজের হাতে তুলে নেবে তাদের কঠোরভাবে মোকাবিলা করা
হবে।’
এদিকে পাকিস্তানের অবনতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক
সম্প্রদায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা সংযম প্রদর্শন এবং আইনের শাসন বজায় রাখার ওপর
জোর দিয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও
গুতেরেস সকলকে সংযত থেকে সহিংসতা এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এক বিবৃতিতে উভয় পক্ষের প্রতি সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়ে বলেছে, ‘পাকিস্তাানে যেসব চ্যালেঞ্জ তা মোকাবেলা এবং দেশটি কোন পথে যাবে তা একমাত্র দেশটির জনগণই নির্ধারণ করতে পারে। সেটা করতে হবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এবং আইনের শাসন বজায় রেখে।’
- মা.ফা.
মন্তব্য করুন