চট্টগ্রাম বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ৩ বৈশাখ ১৪৩২
চট্টগ্রাম বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ৩ বৈশাখ ১৪৩২

আন্তর্জাতিক

মার্কিন রাজনীতিকদের সফরে আবার উত্তেজনা

তাইওয়ানকে ঘিরে চীনের আরো সামরিক মহড়া


প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ২০২২ আগস্ট ১৬, ০৯:৫৮ পূর্বাহ্ন
তাইওয়ানের আকাশসীমায় চীনের যুদ্ধবিমান।

গত রোববার একজন সেনেটরের নেতৃত্বে পাঁচ মার্কিন রাজনীতিক অঘোষিত এক সফরে তাইওয়ানে যাওয়ার পর চীনের সঙ্গে আবার উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। চীনের সেনাবাহিনী গতকাল সোমবার তাইওয়ানের কাছে আরো কিছু সামরিক মহড়া চালিয়েছে।

 

সেনেটর এড মার্কির নেতৃত্বে পাঁচজন মার্কিন আইন প্রণেতা রোববার তাইপেতে পৌঁছান এবং তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের সঙ্গে দেখা করেন।


চলতি আগস্টের শুরুতে মার্কিন হাউজ স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির বহুলালোচিত সফরের পর চীন-মার্কিন সম্পর্কে তীব্র উত্তেজনা তৈরি হয় এবং তাইওয়ানকে ঘিরে ব্যাপক সামরিক মহড়া চালায় চীন।

 

সেই ঘটনার উত্তেজনা থিতিয়ে আসার আগেই যুক্তরাষ্ট্রের একদল রাজনীতিক আবার এরকম বিতর্কিত এক উচ্চপর্যায়ের সফরে তাইওয়ান গেলেন।

 

চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলও)র ইস্টার্ন কমান্ড জানিয়েছে, তাইওয়ানের চারপাশের সমুদ্রে এবং আকাশসীমায় তারা বিভিন্ন বাহিনীর যৌথ মহড়া শুরু করেছে, যার উদ্দেশ্য তারা যুদ্ধের জন্য কতটা প্রস্তুত, সেটা পরীক্ষা করা।

 

এক বিবৃতিতে তারা আরো জানায়, তাইওয়ান এবং যুক্তরাষ্ট্র যে রাজনৈতিক কূটচাল চালিয়ে যাচ্ছে এবং পুরো তাইওয়ান প্রণালীতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিনষ্টের চেষ্টা করছে, এই সামরিক মহড়া তার বিরুদ্ধে এক কঠোর সুরক্ষা হিসেবে কাজ করবে।

 

চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পৃথক এক বিবৃতিতে বলেছে, মার্কিন রাজনীতিকদের এই তাইওয়ান সফর চীনের সার্বভৌমত্ব এবং ভৌগলিক অখণ্ডতা ক্ষুণ্ণ করেছে এবং এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্টকারী, তাদের সেই চেহারা উন্মোচন করে দিয়েছে।

 

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণ এবং প্রস্তুতি অব্যাহত রেখেছে, এবং দেশের সার্বভৌমত্ব এবং স্থিতিশীলতা রক্ষায় তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তাইওয়ানের স্বাধীনতার নামে যেকোনো বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং বিদেশি হস্তক্ষেপ তারা গুঁড়িয়ে দেবে।"

পিএলও ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড বলেছে, তাদের মহড়া চলছে তাইওয়ানের পেঙ্গু দ্বীপপুঞ্জের কাছে, যার অবস্থান তাইওয়ান প্রণালীতে।

 

এদিকে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন বলেছেন, চীনের এই মহড়া আঞ্চলিক শান্তি এবং স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।

 

তিনি বলেন, আমরা সামরিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য আমাদের আন্তর্জাতিক মিত্রদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছি। তাইওয়ানের স্থিতিশীলতা রক্ষায় আমরা সাধ্যমত সবকিছু করছি।

 

তাইওয়ান সফররত মার্কিন সিনেটর এড মার্কি বলেছেন, একটি অপ্রয়োজনীয় সংঘাত এড়ানোর নৈতিক দায়িত্ব তাদের আছে। তাইওয়ান অবিশ্বাস্য সংযমের পরিচয় দিয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

 

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, সোমবার ১৫টি চীনা বিমান তাইওয়ান প্রণালীর মধ্যরেখা অতিক্রম করে। এই মধ্যরেখাকে দুদেশের মাঝখানে অঘোষিত সীমান্ত বলে ধরা হয়।

 

সিনেটর এড মার্কির নেতৃত্বে মার্কিন প্রতিনিধিদল গতকাল তাইওয়ান ত্যাগ করেছে। তবে তাঁরা তাইওয়ান ছেড়ে যাওয়ার পরই কেবল তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাঁদের সাক্ষাতকারের ভিডিও প্রেসিডেন্টের দফতর থেকে প্রকাশ করা হয়।

 

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাইওয়ানের কোনো আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। তবে গণতান্ত্রিকভাবে শাসিত এই দ্বীপটিকে আত্মরক্ষার জন্য সাহায্য করতে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু আইনি বাধ্যবাধকতা আছে।

 

চীনের কমিউনিস্ট পার্টি কখনোই তাইওয়ান শাসন করেনি, তবে তারা একথা স্পষ্টভাবেই বলেছে যে দরকার হলে এই দ্বীপটি তারা জোর করে দখল করবে। তাইওয়ানকে একটি স্বতন্ত্র স্বাধীন দেশ হিসেবে চিত্রিত করার যেকোন চেষ্টা চীনকে সাংঘাতিক ক্ষুব্ধ করে।

 

যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত নীতি হচ্ছে, তারা তাইওয়ানের স্বাধীনতা ঘোষণার যেমন বিরোধী, তেমনি চীন জোর করে তাইওয়ানকে নিজের দেশের অংশ করতে চাইলে সেটারও জোর বিরোধিতা করে।

 

তবে চীন যদি তাইওয়ানে হামলা চালিয়ে সেটি দখল করার চেষ্টা করে, তখন যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে রক্ষায় সামরিকভাবে এগিয়ে আসবে কিনা-- এটি ইচ্ছেকৃতভাবেই তারা ধোঁয়াশার মধ্যে রেখেছে।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Video