সিএমএসএমই’র জন্য ২৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম এবং প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় সিএমএসএমই’র জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা ও বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা ঘোষণা করায় বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারকে ধন্যবাদ জানান দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম।
৩১ জুলাই সকালে ঢাকাস্থ বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যালয়ে ব্যাংকের নবনিযুক্ত গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সাথে এক মতবিনিময় সভায় চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম নবনিযুক্ত গভর্নরকে অভিনন্দন জানান এবং সাম্প্রতিক সময়ের আন্তর্জাতিক বাজারে ডলার মূল্যের অস্থিতিশীলতা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চেম্বার সিনিয়র সহ-সভাপতি তরফদার মো. রুহুল আমিন।
চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম তৃতীয় পর্যায়ে সিএমএসএমই’র জন্য ঘোষণাকৃত প্রণোদনার এই ঋণ সুবিধা যাতে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান পেতে পারে সেজন্য একক প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী ঋণের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে দিতে প্রস্তাব রাখেন। একই সাথে ঋণ প্রদানে ব্যাংকসমূহের তথ্য যাচাইয়ের সুবিধা এবং অর্থনৈতিক শৃংখলা তৈরি করতে এসএমই ফাউন্ডেশন ও জেলা চেম্বারের সমন্বয়ে সিএমএসএমই প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ব্যাংকের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় এমন আর্থিক বিবরণীর হিসাব রাখার স্ট্যান্ডার্ড ফরমেট তৈরি করা ও সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণ দেয়ার উপর গুরুত্বারোপ করেন। চলমান ডলার সংকট নিরসনে সকল প্রয়োজনীয় আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত ডলার রেট ৯৪.৭৫ টাকা ব্যাংক যাতে দেয় তা নিশ্চিত করার প্রস্তাব রাখেন তিনি। এ বিষয়ে
প্রয়োজনে কঠোর মনিটরিং চালু করা, নির্দেশনা অমান্য করলে এডি/ব্যাংকগুলোকে শাস্তি ও বড় অংকের জরিমানার আওতায় আনা, মানি এক্সচেঞ্জগুলোকে কঠোরভাবে মনিটরিং করা, ক্রেতাদের তথ্য সংগ্রহ ও যাচই করা, বিধি বহির্ভূত এবং দলিল প্রমাণ ছাড়া কারো কাছে ডলার পাওয়া গেলে তা বাজেয়াপ্ত করা, ট্যুরিস্ট ভিসায় বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে ডলার নেয়ার লিমিট কমিয়ে দেয়া এবং ডলার ক্রয়-বিক্রয়ের মূল্যের ব্যবধান ১-২ টাকার মধ্যে রাখারও প্রস্তাব রাখেন তিনি।
সভায় চেম্বার সিনিয়র সহ-সভাপতি তরফদার মো. রুহুল আমিন ডলারের রিজার্ভ বৃদ্ধির আরো একটি সম্ভাব্য উৎস চিহ্নিত করে বলেন, অনেক বাংলাদেশি ব্যবসায়ী বিদেশে কোম্পানী গঠনের মাধ্যমে সফলভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিয়ম না বোঝার কারণে আইনগতভাবে উক্ত ব্যবসা হতে অর্জিত মুনাফার বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনতে সক্ষম হচ্ছেন না। তবে করোনা পরিস্থিতিসহ সার্বিক বিবেচনায় সরকারের রাজস্ব ও বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ী মূলধন বাড়ানোর লক্ষ্যে চলতি বাজেটে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের স্থাবর ও অস্থাবর বৈদেশিক সম্পত্তি ট্যাক্স প্রদানপূর্বক প্রদর্শন ও আনয়নের বিশেষ সুযোগ রাখা হয়েছে। একই বিবেচনায়, বিদেশে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসাসমূহেরও আইনী অনুমোদন সহকারে প্রদর্শন ও ব্যবসা হতে অর্জিত মুনাফার বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনার সুযোগ প্রদান করা যেতে পারে। এছাড়া ব্লু ইকোনোমিতে দেশীয় প্রাইভেট সেক্টরের সক্ষমতা এবং বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য ব্লু ইকোনোমি ঋণ প্যাকেজের আওতায় নিয়ে সুদে লোন প্রদানের স্কিম চালু করা যেতে পারে বলে তিনি মতামত ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার চিটাগাং চেম্বারের প্রস্তাবনাসমূহ বিবেচনায় নিয়ে চলমান পরিস্থিতিতে সকলকে ধৈর্য্য ধারণের পাশাপাশি “Unrepatriated export proceed” আদায়ে চেম্বারের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা কামনা করেন। আগামী দুই মাসের মধ্যে ডলার বিনিময় হারের চলমান অস্থিতিশীলতা ভারসাম্যতায় ফিরে আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর সকল বিভাগের ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময়ের অংশ হিসেবে শীঘ্রই চিটাগাং চেম্বারে ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাতে মিলিত হবেন বলেও জানান।
- মাইশা ফাইরোজ
মন্তব্য করুন