ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের
কবলে পড়ে বঙ্গোপসাগরের মীরসরাই উপকূলের সন্দ্বীপ চ্যানেলে বালু তোলার ড্রেজার ডুবে
আট শ্রমিক নিখোঁজ হয়েছে। ২৪ অক্টোবর সোমবার রাতে উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের ৩ নম্বর জেটি বসুন্ধরা এলাকায় এ দূর্ঘটনা ঘটে। খবর
পেয়ে মঙ্গলবার সকাল থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরী দল উদ্ধার তৎপরতা চালালেও কোন
নিখোঁজের সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরে গতকাল রাত ৯ টার দিকে ৩নং জেটি সংলগ্ন
স্থানীয়রা একটি লাশ ভাসতে দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ এসে লাশটি উদ্ধার
করে।
পরে নিহতের স্বজন
এনায়েত উল্লাহ লাশটি নিখোঁজ মো. জাহিদ বারি (২৮) বলে সনাক্ত করেন। দূর্ঘটনায়
নিখোঁজ শ্রমিকরা হলেন- ড্রেজার চালক ইমাম মোল্লা (৩২), শ্রমিক শাহীন মোল্লা (৩৮),
মাহমুদ মোল্লা (৩২), আলামিন (২১), তারেক, জাহিদ বারি (২৮), আবুল বশরসহ (৪৫) অজ্ঞাত
আরো ২জন। নিখোঁজ সকল শ্রমিকের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার জৈনকাঠি মোল্লাবাড়ি থানা
এলাকায় বলে জানা গেছে।
আজ ২৬ অক্টোবর বুধবার
সকালে ফের উদ্ধার অভিযান শুরু হলে সকাল ১০ টা নাগাদ নিখোঁজ আরো ৩ জনের লাশ উদ্ধার
করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিনহাজুর রহমান।
তবে তাদের নাম জানা যায়নি। এপর্যন্ত ৪ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে, এখনো নিখোঁজ ৪ জন।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে মিরসরাই ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স
কর্মীরা নিখোঁজদের উদ্ধারে অভিযান চালায়। তাদের সাথে যুক্ত হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের
ডুবুরি দল। সোমবার রাত ১০টার দিকে শ্রমিক ভর্তি বালু উত্তোলনের ড্রেজার মেশিন
সৈকত-২ ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তান্ডবে ডুবে যায়। দূর্ঘটনার পূর্বে ড্রেজারে থাকা
শ্রমিক আব্দুস সালাম বলেন, ‘ড্রেজারে আমিসহ নয়জন শ্রমিক ছিলাম। দুর্যোগের কথা শুনে সন্ধ্যা
৭টার দিকে আমি ড্রেজার থেকে নিচে স্থলভাগে চলে আসি। বাকিরা ড্রেজারেই অবস্থান
করছিলো। পরে ঝড়ো হাওয়ায় ড্রেজারটি ভেসে গিয়ে সাগরে ডুবে যায়। এতে সবাই নিখোঁজ হয়।
ড্রেজার ম্যানেজার
রেজাউল করিম জানান, ঘটনাস্থলে আরো ছয়টি ড্রেজার রাখা ছিল। সতর্কতা সংকেত পেয়ে
অপরাপর সকল শ্রমিক নিরাপদ স্থানে চলে গেলেও দুর্ঘটনায় পতিত ড্রেজারের আট শ্রমিক
আসেনি। শ্রমিকরা দিন-রাত ড্রেজারে অবস্থান করে থাকে। সেখানে খাওয়া-দাওয়া ও ঘুমের
ব্যবস্থা রয়েছে।
সাহেরখালী ইউনিয়ন
পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হায়দার চৌধুরী বলেন, ড্রেজারে থাকা শ্রমিক নিখোঁজ হওয়ার
খবর শুনেছি। সোমবার বিকেলে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সবাইকে সতর্ক অবস্থানে চলে
যেতে মাইকিং করা হয়েছিল।
মিরসরাই ফায়ার সার্ভিস
এন্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের কর্মকর্তা ইমাম হোসেন পাটোয়ারি বলেন, ‘মঙ্গলবার
ডুবুরি দল নিয়ে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করি। তীব্র পানির
স্রোত এবং ড্রেজারটি পানির নীচে থাকায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কাউকে উদ্ধার করা
যায়নি। রাতে ১ জনের লাশ এবং আজ সকাল ১০ টার সময় আরো ৩ জনসহ এপর্যন্ত মোট ৪
জনের লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
মিরসরাই উপজেলা
নির্বাহী কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের মোকাবেলায় আমরা সকল
সর্তকর্তামূলক ব্যাবস্থা গ্রহণ করেছি। কিন্তু দুর্ঘটনায় যারা পতিত হয়েছে তারা
সতর্কবাণী পেয়েও নিরাপদ আশ্রয়ে না আসায় এই দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। ইতিমধ্যে ৪ জনের
লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বাকীদের সন্ধানে উদ্ধার তৎপরতা চলছে।
- নাছির উদ্দিন/মিরসরাই
মন্তব্য করুন