অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানী
ঢাকার বঙ্গবাজারে সংঘটিত ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে মালামাল পুড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা
সর্বশান্ত হয়ে পথে বসেছে। সীতাকুন্ডে কয়েক দফায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে ও সর্বশেষ
সেখানকার ইউনিটেক্স তুলার গুদামে আগুন লেগে ৮০ থেকে ১শ’ কোটি টাকার তুলা সামগ্রী
পুড়ে গিয়ে মারাত্বক ক্ষতি হয়েছে। আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল ফিতরকে সামনে রেখে
চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা তাদের প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত পণ্য মজুদ করেছেন। অগ্নি
নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতে ব্যবসায়ীদের সাথে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের বিশেষ
সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল বাসার
মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।
১০ এপ্রিল সোমবার দুপুর ১২টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে
আয়োজিত মহানগরীর বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নি নিরাপত্তা জোরদারকরণ এবং জনসচেতনতা
বৃদ্ধিতে দোকান মালিক সমিতি ও ব্যবসায়ীদের সাথে বিশেষ সভায় জেলা প্রশাসক আরো বলেন,
দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে হলে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
পাশাপাশি প্রত্যেক মার্কেটে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে ২৪ ঘন্টা/৭ দিন নজরদারী করে
সমিতি কর্তৃক ফুটেজ সংগ্রহে রাখবে এবং ৩ জন কর্মচারী ৮ ঘন্টা করে দায়িত্ব পালন
করলে কোন ধরণের দুর্ঘটনা ঘটছে কি না তা তাৎক্ষণিক জানা যাবে।
তিনি আরো বলেন, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ
ইতোমধ্যে জহুর হকার্স মার্কেট, টেরিবাজার, রেয়াজউদ্দিন বাজার ও তামাকুমন্ডি লেইনে অগ্নিদুর্ঘটনা
রোধে মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করেছে, ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়েছে। এরপরও
মার্কেটগুলো অগ্নিঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের
নেতৃত্বে আমরা কয়েকটি টিম গঠন করতে চাই। মার্কেট বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে
অগ্নিদুর্ঘটনাসহ অন্যান্য দুর্ঘটনা রোধে যুগোপযুগী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। আর্থিক
ক্ষতি থেকে কিছুটা হলেও লাঘবে ব্যবসায়ীদেরকে বীমার আওতায় আনা যায় কিনা সে বিষয়ে
সংশ্লিষ্টদের মতামত চাওয়া হবে। জনসাধারণের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে সড়কের অবৈধ
স্থাপনা উচ্ছেদে সিটি করপোরেশনকে অবহিত করা হবে।
ডিসি আরো বলেন, শুধু ফায়ার লাইসেন্স থাকলে হবেনা, অগ্নি
নির্বাপনের সুবিধার্থে প্রত্যেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সচল ফায়ার এস্টিংগুইসার ও
বালতি ভর্তি বালি রাখতে হবে এবং এগুলোর যথাযথ ব্যবহার জানতে হবে। যে কোন সময় অগ্নি
দুর্ঘটনা রোধে মার্কেটে বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ওয়াটার রিজার্ভার, ট্যাংক ভর্তি
পানি মজুদ ও ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনির্বাপক দলের গাড়ি যাতায়াতের সুব্যবস্থা রাখতে
হবে। পরীর পাহাড় ও নন্দনকাননস্থ বিটিসিএল পাহাড়ে ১০ হাজার লিটারের পানির ট্যাংক
স্থাপন ও স্থায়ী ওয়াটার রিজার্ভার করা যায় কি না সে ব্যাপারে খতিয়ে দেখা হবে। পানি
সংগ্রহের সুবিধার্থে নগরীর সকল পুকুর সংরক্ষণ করে সেগুলোর চতুর্দিকে ওয়াকওয়ে করার
পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। এতে করে লোকজন হাঁটাচলা করতে পারবে।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, মার্কেটে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুতের তার
ঝুঁকিমুক্ত করতে বিদ্যুৎ বিভাগকে অবহিত করা হবে এবং অগ্নি দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা
পেতে বিদ্যুতের তারের সাথে লাগিয়ে রাখা ডিশ লাইন ক্যাবলগুলো কনসিলের মাধ্যম চিকন
পাইপ দিয়ে আন্ডার গ্রাউন্ড দিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন ডিসি।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) রাকিব হাসানের সঞ্চালনায়
অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিএমপি’র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ
কমিশনার পংকজ দত্ত, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক অহিদ
সিরাজ চৌধুরী স্বপন, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. ফরিদ উদ্দিন
চৌধুরী, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মো. আবদুল মালেক, কোর্ট
পুলিশ পরিদর্শক মো. আবদুল গফফার খান, ক্যাব’র সাধারণ সম্পাদক কাজী
ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব সদস্য সেলিম জাহাঙ্গীর, সাংবাদিক রনজিত কুমার শীল,
তামাকুমন্ডি লেইন বণিক সমিতির সভাপতি সরওয়ার কামাল, সহ-সভাপতি মো. সেলিম, দোকান
মালিক সমিতি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি সালেহ আহমেদ সুলেমান, বিপনি বিতান ব্যবসায়ী
সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ সাগির, বহদ্দারহাট কাঁচা বাজার কল্যাণ সমিতির সভাপতি হাজী
মোহাম্মদ জানে আলম, জহুর হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল
কাশেম, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এহসান উল্লাহ
জাহেদী, ফকিরহাট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এম.এ আজাদ চৌধুরী প্রমূখ।
চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন মার্কেট-দোকান মালিক সমিতি ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এসময় সভায় উপস্থিত ছিলেন।
- মা.ফা.
মন্তব্য করুন