পার্বত্য চট্টগ্রামের
গহীনে নব্য জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তথাকথিত
হিজরতের নামে সশস্ত্র প্রশিক্ষণে অংশ নেয়া ৪ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। ২৮ ফেব্রুয়ারি
মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রামের পটিয়া বাইপাস এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা
হয়।
১ মার্চ বুধবার সকালে
চান্দগাঁও র্যাব-৭ মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাপিড
অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। গ্রেপ্তারকৃত
জঙ্গিরা হলো হোসাইন আহমদ (২২), নিহাল আব্দুল্লাহ (১৯), আল আমিন (২২) ও আল আমিন ওরফে
পার্থ কুমার দাস (২১)। এদের মধ্যে হোসাইন আহমদের বাড়ি পটুয়াখালীর দশমিনায়, নিহাল ও
আল আমিনের কুমিল্লার সদরে এবং আল আমিন ওরফে পার্থের বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়ায়।
কমান্ডার খন্দকার
আল মঈন বলেন, ২৩ আগস্ট ২০২২ কুমিল্লা সদর এলাকা থেকে ৮ জন তরুণ নিখোঁজের ঘটনা ঘটে।
নিখোঁজ তরুণদের উদ্ধারে অভিযান চালাতে গিয়ে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নামে একটি নতুন জঙ্গি সংগঠনের
সক্রিয় থাকার তথ্য পাওয়া যায়। একইসঙ্গে ওই সংগঠনের সদস্যরা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী
সংগঠনের সহায়তায় সশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার কথাও জানতে পারে র্যাব।
২০ অক্টোবর ২০২২
সালে রাঙামাটির বিলাইছড়ি ও বান্দরবানের রোয়াংছড়ি থেকে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের ৭ জন ও
পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের ৩ জনসহ মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের
কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব বিভিন্ন সময়ে রাঙামাটি ও বান্দরবানের পাহাড়ি
এলাকায় অভিযান চালায়।
আগের অভিযানের কথা
জানিয়ে তিনি বলেন, চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি বান্দরবানের থানচি ও রোয়াংছড়ি থেকে পাহাড়ে
প্রশিক্ষণরত ৫ সদস্যকে, ২৩ জানুয়ারি কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন
এলাকা থেকে ওই সংগঠনের শূরা সদস্য ও সামরিক শাখার প্রধান রনবীর ও বোমা বিশেষজ্ঞ বাশারকে,
৭ ফেব্রুয়ারি বান্দরবানের থানচির রেমাক্রী ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ দেশি
ও বিদেশি অস্ত্র, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, গোলাবারুদ ও নগদ ৭ লাখ টাকাসহ জঙ্গি সংগঠনের
১৭ জন, পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের ৩ জনসহ মোট ২০ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
তিনি আরও বলেন, আইন-শৃঙ্খলা
বাহিনীর অব্যাহত অভিযানের ফলে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের বেশ কয়েকজন সদস্য পার্বত্য চট্টগ্রামের
পাহাড় থেকে বের হয়ে সমতলে আত্মগোপনে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে
মঙ্গলবার রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৭ এর অভিযানে চট্টগ্রামের
পটিয়া বাইপাস এলাকা থেকে তাদের চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আটককৃতদের জিজ্ঞাসবাদে জানা তথ্যের কথা জানিয়ে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, বিভিন্ন সময় ‘কেএনএফ’র নাথান বম, বাংচুং, রামমোয়, ডিকলিয়ান, পাহল এবং কাকুলীসহ অনেকেই প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে যেত। প্রশিক্ষণের জন্য অস্ত্র ও অন্যান্য রসদ তারা অর্থের বিনিময়ে ‘কেএনএফ’র সদস্যদের কাছ থেকে সংগ্রহ করত এবং ‘কেএনএফ’র সদস্যরা বিভিন্ন সময়ে ওই জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দিত। পরে র্যাবের অভিযান শুরু হলে তারা সংগঠনের আমীরের নির্দেশে কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে পার্বত্য অঞ্চলে আত্মগোপন করে। তারা ছোট ছোট গ্রুপে সাইজামপাড়া, মুন্নুয়াম পাড়া, রোয়াংছড়ি, পাইক্ষং পাড়া এবং তেলাং পাড়াসহ পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে। গত ৪ দিন আগে তারা সমতলে আসার উদ্দেশ্যে পাহাড়ের গহীন থেকে হেঁটে বান্দরবানের টঙ্কাবতী এলাকায় আসে। পরে অটোরিকশাযোগে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে আসার পথে পটিয়া বাইপাস এলাকা থেকে ৪ জনকে আটক করা হয়। এসময় আরও ৪-৫ জন পালিয়ে যায়।
- ই.হো.
মন্তব্য করুন