যুদ্ধাপরাধী সাকা
চৌধুরীর চট্টগ্রাম শহরের বাড়ির দেয়ালে ‘রাজাকারের বাড়ি’ লিখে দিয়েছেন
বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা। সেই বাড়িটি যে পাহাড়ে, সেই গুডস হিলকে ‘রাজাকার হিল’ লিখে টাঙিয়ে
দেওয়া হয়েছে ব্যানার। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুক্তিকামী নিরস্ত্র বাঙালিদের
ধরে নিয়ে হত্যা-নির্যাতনের জন্য গড়ে তোলা সেই ‘টর্চার ক্যাম্প’ গুডস্ হিলকে
বাজেয়াপ্ত করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর করারও দাবি জানিয়েছেন তারা।
পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নে চট্টগ্রামে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা কমিটির উদ্যোগে ২৯ অক্টোবর সকালে ‘গুডস হিল’র মূল প্রবেশপথ অবরুদ্ধ করে এক বিক্ষোভ সমাবেশ ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত কুখ্যাত রাজাকার সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী প্রকাশ সাকা চৌধুরীর বাসভবন ঘেরাও কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের চট্টগ্রাম মহানগরের আহ্বায়ক সাহেদ মুরাদ সাকুর সভাপতিত্বে এবং বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ড. ওমর ফারুক রাসেল ও জেলা কমিটির সদস্য-সচিব কামরুল হুদা পাভেলের সঞ্চালনায় সমাবেশে ৫ দফা দাবি উত্থাপন করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মোহাম্মদ সরওয়ার আলম চৌধুরী মনি।
সমাবেশ থেকে যুদ্ধাপরাধীদের
সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের রাজনীতি ও নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা, দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের
সব সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা, মুক্তিযুদ্ধে নিরস্ত্র বাঙালিদের নির্যাতনের
জন্য রাজাকার-আলবদর, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গড়ে তোলা সব ‘টর্চার ক্যাম্প’কে মুক্তিযুদ্ধ
জাদুঘর হিসেবে গড়ে তোলা, জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ে সব যুদ্ধাপরাধীর তালিকা করে পাঠ্যপুস্তকে
অন্তর্ভুক্ত করা এবং সাকাপুত্র হুম্মাম কাদেরের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা
দায়ের করা ও গ্রেফতারের দাবিসহ ৫ দফা দাবি জানানো হয়।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী
অপরাধে ফাঁসি হওয়া সাকা চৌধুরীকে ‘শহিদ’ উল্লেখ করে তার
ছেলে বিএনপি নেতা হুম্মাম কাদের চৌধুরীর বক্তব্যের প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ-সমাবেশে
বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা একাত্মতা
প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন। সমাবেশ চলাকালেই মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা গুডস্ হিলের প্রবেশপথের
দেয়ালে লিখে দেন - ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর নির্যাতন কেন্দ্র,
রাজাকারের বাড়ি’। একই সঙ্গে গাছে টানিয়ে দেওয়া হয়, ‘রাজাকার হিল’ লেখা ব্যানার।
সমাবেশ মঞ্চের একপাশে যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর প্রতিকৃতি রেখে সেখানে ধিক্কার জানিয়ে
বিভিন্ন মন্তব্য লেখা হয়।
সমাবেশে প্রধান
অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিট কমান্ডার মোজাফফর
আহমেদ বলেন, ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকারদের সন্তানদের রাজনীতিতে
দেখতে চাই না, রাজাকারের সন্তানদের নির্বাচনে দেখতে চাই না। রাজাকারের বাড়িঘর, সম্পত্তি
অবিলম্বে বাজেয়াপ্ত করা হোক। এজন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করতে আমরা সরকারকে ডিসেম্বর
পর্যন্ত সময় দিচ্ছি। আগেভাগে বলে দিচ্ছি, সরকার যদি আমাদের দাবির প্রতি কর্ণপাত না
করে তাহলে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবো।
সভায় বিশেষ অতিথি
ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নইম উদ্দিন আহমেদ
চৌধুরী, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এ.কে.এম এহসানুল হায়দার চৌধুরী
বাবুল, যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর মামলার অন্যতম সাক্ষী বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী নুরুল
আবসার, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মো. মশিউর রহমান চৌধুরী।
বক্তব্য রাখেন
বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল হক চৌধুরী সৈয়দ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নূর উদ্দিন, মো. শাহবুদ্দিন
আহমেদ, জামশেদুল আলম চৌধুরী, মোজাহেরুল ইসলাম, শায়দুল আজম শাকিল, জসিম উদ্দিন বাবুল,
অধ্যাপিকা শিলা দাসগুপ্ত, মাহবুবুল হক সুমন, এম.আর আজিম, কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব,
কাউন্সিলর শৈবাল দাস সুমন, কাউন্সিলর শাহিনা আকতার রোজী, তরিকত ফেডারেশনের কাজী মোরশেদ
কাদেরী, শরফুদ্দিন চৌধুরী রাজু, রাজিবুল হক সুমন, মেজবাহ উদ্দিন মোরশেদ, হাবিবুর রহমান
তারেক প্রমুখ।
- ই.হো
মন্তব্য করুন