চট্টগ্রাম রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ৩০ চৈত্র ১৪৩১
চট্টগ্রাম রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ৩০ চৈত্র ১৪৩১

স্বাস্থ্য

দ্বিতীয় জরুরি বৈঠকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঘোষণা

মাঙ্কিপক্স সারা বিশ্বে গণস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি অবস্থা


প্রকাশিত : রবিবার, ২০২২ জুলাই ২৪, ১০:৪২ পূর্বাহ্ন
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়াসুস মাঙ্কিপক্সকে বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন।

মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাবকে বিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। 


বিশ্বব্যাপী মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া সংস্থাটি এই সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করল।

 

শনিবার (২৩ জুলাই) রাতে ভাইরাস সংক্রান্ত দ্বিতীয় জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়াসুস বলেন, বর্তমানে বিশ্বের ৭৫ দেশে মাঙ্কিপক্স ছড়িয়ে পড়েছে। প্রায় ১৬ হাজার আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।

 

বর্তমানে এই ধরনের আরও দুটি স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা জারি রয়েছে। একটি হলো করোনাভাইরাস মহামারি, অন্যটি পোলিও নির্মূল।

 

সরাসরি শারীরিক সংস্পর্শের মাধ্যমে মাঙ্কিপক্সের ভাইরাস এক দেহ থেকে আরেক দেহে ছড়ায়।

 

ডব্লিউএইচও-র জরুরি অবস্থা ঘোষণার অর্থ এ রোগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশের সরকারকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো। কোনো রোগের বিরুদ্ধে ডব্লিউএইচওর এটাই সর্বোচ্চ সতর্কবার্তা।

 

২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ডব্লিউএইচও সাত বার বিশ্ব জুড়ে জনস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। সর্বশেষ ঘোষণাটি এসেছিল ২০২০ সালে কোভিড-১৯ কে নিয়ে।

 

দ্য গার্ডিয়ান জানায়, গত বৃহস্পতিবার ডব্লিউএইচও-র বিশেষজ্ঞ কমিটির বৈঠকের পর মাঙ্কিপক্স নিয়ে এ ঘোষণা এসেছে। সংস্থাটির বিশেষজ্ঞ দল এর আগেও এ বিষয়ে একবার বৈঠক করেছে।

 

মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাবকে বিশ্বব্যাপী গণস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি অবস্থা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা উচিত হবে কিনা তা নিয়ে ডব্লিউএইচও-র বৈঠকে বিশেষজ্ঞ কমিটি একমত হতে পারেনি বলেও জানান গ্যাব্রিয়াসুস।

 

বলেন, ‘‘এবার রোগটি খুব দ্রুত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এখন পর্যন্ত যা অবস্থা তাতে এটি আন্তর্জাতিক উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে বলা যায়।

 

নতুন কী এমন ঘটেছে যে এবারের প্রদুর্ভাবে ভাইরাসটি এত দ্রুত ছড়াচ্ছে? এ সম্পর্কে এখন পর্যন্ত খুব সামান্যই বোঝা গেছে বলে জানান গ্যাব্রিয়াসুস।

 

‘‘তাই ডব্লিউএইচও-র মূল্যায়ন হলো ইউরোপীয় অঞ্চল ছাড়া বাকি বিশ্বের জন্য মাঙ্কিপক্সের ঝুঁকি এখনো মাঝারি পর্যায়ের। কিন্তু ইউরোপীয় অঞ্চলের জন্য মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের ঝুঁকি উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে।

 

‘‘বাকি বিশ্বের জন্য এখনো ঝুঁকি মাঝারি পর্যায়ে থাকলেও যেকোনো সময় এ রোগ আন্তর্জাতিকভাবে ছড়িয়ে পাড়ার ঝুঁকি স্পষ্ট। তবে এ রোগের বিস্তার রোধে মানুষের চলাচলের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করার সময় এখনো আসেনি।

 

ইউরোপ ছাড়া বাকি বিশ্বের জন্য ঝুঁকি এখনো মাঝারি থাকলেও কেন মাঙ্কিপক্সকে গণস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হলো তার ব্যাখ্যায় ডব্লিউএইচও মহাপরিচালক বলেন, ‘‘এই ঘোষণা টিকা আবিষ্কারের কাজে গতি বাড়াতে এবং রোগের বিস্তার রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের কাজে সহায়তা করবে।

 

সঠিক দলে সঠিক কৌশল গ্রহণের মাধ্যমে এই রোগের প্রদুর্ভাব আটকে দেওয়া সম্ভব বলে বিশ্বাস ডব্লিউএইচও মহাপরিচালকের।

 

মাঙ্কিপক্স ভাইরাস সংক্রমিত রোগ। সাধারণত মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতে প্রাণীদের এ রোগ হতে দেখা যায়। প্রাণীদেহ থেকে এ রোগ মানবদেহে ছড়ায়।

 

আফ্রিকার দেশগুলোতে এর আগে কয়েকবার এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে। মধ্য আফ্রিকায় ১৯৫০এর দশকে প্রথম এ রোগ শনাক্ত হয়। তাই কোভিড-১৯ এর মত এ রোগ নতুন নয়। এ রোগের চিকিৎসাও আছে।

 

মাঙ্কিপক্সকে গণস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা

কিন্তু এবার যেসব দেশে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা গিয়েছে সেসব দেশে এই ভাইরাস থাকার কথা না। যে কারণে এবারের প্রাদুর্ভাবকে নজিরবিহীন বলা হচ্ছে।

 

যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত কয়েক হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইসরায়েল, ব্রাজিল, মেক্সিকোসহ আরো বেশ কয়েকটি দেশ মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে।

 

যুক্তরাজ্যে সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি মানুষ মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হয়েছেন। সেখানে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা আগেই জনগণকে মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের বিষয়ে উচ্চ সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। এমনকি কোথাও কোথাও গে ও বাইসেক্সুয়াল পুরুষ এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা গ্রহণ করতেও বলা হয়েছে।

 

ঘনিষ্ট শারীরিক সংস্পর্শের মাধ্যমে মাঙ্কিপক্সের ভাইরাস এক দেহ থেকে আরেক দেহে ছড়ায়। এবারের প্রাদুর্ভাবে পুরুষরা বিশেষ করে সমকামী পুরুষরা বেশি আক্রান্ত হয়েছেন।

 

মাঙ্কিপক্সের প্রাথমিক উপসর্গ হচ্ছে জ্বর, মাথাব্যথা, হাড়ের জোড়া ও মাংসপেশিতে ব্যথা এবং অবসাদ।

 

জ্বর শুরু হওয়ার পর দেহে গুটি দেখা দেয়। এসব গুটি শুরুতে দেখা দেয় মুখে। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে হাত এবং পায়ের পাতাসহ দেহের অন্যান্য জায়গায়।

 

এই গুটির জন্য রোগী দেহে খুব চুলকানি হয়। পরে গুটি থেকে ক্ষত দেখা দেয়। জলবসন্তের মতই রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠলেও দেহে সেই ক্ষত চিহ্ন বেশ কয়েকদিন রয়ে যায়। রোগ দেখা দেওয়ার ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Video