স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. খুরশীদ আলম জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে করোনাভাইরাসে যারা মারা গেছে, তাদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই কোনো টিকা নেয়নি।
গতকাল ২৪ জুলাই দুপুরে ঢাকার একটি হোটেলে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস উপলক্ষে
আয়োজিত অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। ন্যাশনাল লিভার ফাউন্ডেশন
ও হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
প্রসঙ্গত, আগামী ২৮ জুলাই বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
এবং ওয়ার্ল্ড হেপাটাইটিস অ্যালায়েন্সের আহ্বানে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হবে। হেপাটাইটিস
দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘হেপাটাইটিস, আর অপেক্ষা নয়’।
খুরশীদ আলম বলেন, “টিকা শতভাগ মৃত্যু নিয়ন্ত্রণ
করতে না পারলেও যাঁরা টিকা নিয়েছেন, তাঁরা একধরনের সুরক্ষা পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ
আক্রান্ত হলেও জটিলতা অনেকাংশেই কমে গেছে। সম্প্রতি করোনায় যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের
৭০ শতাংশ কোনো টিকা নেননি।”
মহাপরিচালক বলেন, “টিকা নিলে কেউ মারা যাবে
না, এটাও তো বলা হয়নি। কিন্তু অনেক গবেষণা করে টিকা আবিষ্কার করা হয়েছে। নিশ্চয়ই এটাতে
উপকার আছে। সম্পূর্ণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা না হলেও অনেকটা সুরক্ষা দিচ্ছে।”
অনেকে যাঁরা মডার্নার টিকার দ্বিতীয় ডোজ পাননি, তাঁরা কবে নাগাদ পেতে
পারে জানতে চাইলে খুরশীদ আলম বলেন, যাঁরা টিকা পাননি, তাঁরা যাতে পান, অবশ্যই তার ব্যবস্থা
করে দেওয়া হবে।
হেপাটাইটিস প্রতিরোধ প্রসঙ্গে মোহাম্মদ আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ
আলম বলেন, ভাইরাসটি মা থেকে শিশুকে সংক্রমিত করে। এজন্য কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে যদি
চিকিৎসা ও প্রাতিষ্ঠানিক সন্তান প্রসবের ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে জন্মের ২৪ ঘণ্টার
মধ্যে শিশুকে ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, এসব কাজের জন্য অর্থের পাশাপাশি ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা
চালাতে হবে। দেশে যত ব্লাড ব্যাংক আছে, সেখানে বিপুল সংখ্যক রক্ত সঞ্চালন হয়, সেখানে
কী পরিমাণে ভাইরাসটি শনাক্ত হয় সেটি নির্ণয় করতে পারলে প্রকৃত চিত্র উঠে আসবে।
হেপাটাইটিস প্রতিরোধ প্রসঙ্গে মোহাম্মদ আলী বলেন, হেপাটাইটিস প্রতিরোধে
সচেতনতা খুবই বড় বিষয়। হেপাটাইটিস কী? কীভাবে ছড়ায় বা এর চিকিৎসা কী? এসব বিষয়ে গ্রামের
মানুষের কোনো ধারণা নেই। তাই তাদের মধ্যেও সচেতনতা বাড়াতে হবে। আমরা গবেষণায় দেখেছি
রোহিঙ্গাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হেপাটাইটিস। প্রায় ১৮ শতাংশের মতো এই হার। তাদের নিয়েও
আমাদের কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, হেপাটাইটিস ‘বি’
ও ‘সি’ লিভার ক্যান্সারের প্রধান কারণ এবং বিশ্বে মৃত্যুর প্রধান ১০টি কারণের
একটি হলো লিভার সিরোসিস। লিভার ক্যান্সার বিশ্বে এবং বাংলাদেশে ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর
তৃতীয় প্রধান কারণ। এই দুই ভাইরাসজনিত লিভার রোগের কারণে বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ১৮
লক্ষ এবং প্রতি ৩০ সেকেন্ডে একজন মানুষ মৃত্যুবরণ করে থাকে।
অনুষ্ঠানে লিভার বিশেষজ্ঞ মেজর জেনারেল ডা. মো. রবিউল হোসেন, বাংলাদেশ
হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল
প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মন্তব্য করুন