চট্টগ্রাম বুধবার, ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ২৬ চৈত্র ১৪৩১
চট্টগ্রাম বুধবার, ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ২৬ চৈত্র ১৪৩১

জাতীয়

বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক-২০২২’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

বঙ্গমাতার নেপথ্য ভূমিকা স্বাধীনতা অর্জনে সহায়ক হয়েছে


প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ২০২২ আগস্ট ০৯, ০৯:১০ পূর্বাহ্ন
বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক-২০২২’ প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর মা, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের নেপথ্য ভূমিকা তুলে ধরে বলেছেন, প্রধান রাজনৈতিক ইস্যুতে বঙ্গমাতার সিদ্ধান্ত দেশের স্বাধীনতা অর্জনে সহায়তা করেছে।

 

তিনি ঐতিহাসিক ছয় দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাকালীন প্যারোলে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি প্রত্যাখ্যান এবং ৭ মার্চের ভাষণ প্রদানের প্রাক্কালে বঙ্গমাতার সময়োচিত সিদ্ধান্ত ও পরামর্শের উল্লেখ করে এ কথা বলেন।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোর ক্ষেত্রেও আমার মা যখন যে সিদ্ধান্ত গুলো দিয়েছেন, সেটাই কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা অর্জনে সবচেয়ে সহায়ক হয়েছে। যেহেতু আমার আব্বা মনে প্রাণে দেশের কাজ করতে পেরেছিলেন।

 

শেখ হাসিনা আজ সকালে বঙ্গমাতা ৯২তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন এবং বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক-২০২২ প্রদান উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

 

সরকার-প্রধান বলেন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময় বঙ্গবন্ধু যখন পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর হাতে বন্দি ছিলেন, তখন বঙ্গমাতা ৬ দফা দাবির সঙ্গে আরো দুটি দফার প্রস্তাবিত অন্তর্ভুক্তির বিরুদ্ধে সাহসী পদক্ষেপ না নিলে বাংলাদেশের অভ্যুদয় অসম্ভব ছিল।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিচার চলাকালে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা বঙ্গবন্ধুর প্যারোলে মুক্তি মেনে নিতে ইচ্ছুক ছিলেন, এমন একটি ধারণার তীব্র বিরোধিতা করে বঙ্গমাতা তাঁর নিঃশর্ত মুক্তি চেয়েছিলেন।

 

তিনি বলেন, আব্বা যদি প্যারোলে চলে যেতেন, তখন আর আন্দোলন-সংগ্রামের কিছুই থাকতো না। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাও প্রত্যাহার হতো না।

 

শেখ হাসিনা বলেন, সার্জেন্ট জহুরুল হককে হত্যা করা হয়েছিল, বাকি আসামিদের সকলকেও তারা মৃত্যুদণ্ডই দিত। কেউ আর বেঁচে থাকতে পারতো না এবং বাংলাদেশও আর স্বাধীনতার মুখ দেখতো না।

প্রধানমন্ত্রী এসময় জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ প্রদানের বিষয়ে তাঁর মার পরামর্শ প্রদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, সেখানে আমাদের বহু নেতাদের নানা মতামত উপেক্ষা করে আমার মায়ের মতামতটাই গুরুত্ব পেয়েছে।

 

তিনি বলেন, ৭ মার্চের যে বক্তব্য সেখানে আব্বার হাতে কাগজ বা কোনকিছু ছিল না। ওনার মনের যে কথাগুলো এসেছে সেখান থেকেই সেটাই তিনি নির্দ্বিধায় বলে গেছেন। কিন্তু ভাষণ দিতে যাওয়ার আগে অনেক বড় বড় নেতা আব্বার হাতে চিরকুট লিখে দিতেন-- এটা বলতে হবে, সেটা বলতে হবে। তখন আমার মা বলে দিতেন তুমি কারো কথা শুনবে না। নিজের মনে যা আসে তা-ই বলবে।

 

সরকার প্রধান আজ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত পাঁচ বিশিষ্ট নারীকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসাধারণ নৈপূণ্যের জন্য বঙ্গমাতা পদক-২০২২ প্রদানের অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।

 

শেখ হাসিনা তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন। গোপালঞ্জের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ও ভার্চুয়ালি এ অনুষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিল।

 

বঙ্গমাতার অবদানকে চিরস্মরণীয় করার লক্ষ্যে ২০২১ থেকে প্রতি বছর আটটি ক্ষেত্রে নারীদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ শ্রেণীভুক্ত সর্বোচ্চ জাতীয় পদক বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব প্রদান করা হয়ে থাকে।

 

এ বছর রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সমাজসেবা এবং স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ যে পাঁচ বিশিষ্ট নারী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক-২০২২ পেয়েছেন তাঁরা হলেন: রাজনীতিতে সিলেট জেলার সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, অর্থনীতিতে কুমিল্লা জেলার সেলিমা আহমাদ এমপি, শিক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপচার্য অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ, সমাজসেবায় কিশোরগঞ্জ জেলার মোছা. আছিয়া আলম এবং স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ক্ষেত্রে গোপালগঞ্জ জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা আশালতা বৈদ্য (মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার)।

 

পুরস্কার হিসেবে তাঁদের প্রত্যেককে ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের ৪০ গ্রাম ওজনের পদক, সম্মাননাপত্র এবং ৪ লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়।

 

মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তাঁদের হাতে পদক তুলে দেন এবং সভাপতিত্ব করেন। প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক বঙ্গমাতার জীবনীর ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ।

 

আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান চেমন আরা তৈয়ব। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল স্বাগত বক্তৃতা করেন। পদক বিজয়ীদের পক্ষে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন সৈয়দা জেবুন্নেছা হক।

 

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর লেখা শেখ ফজিলাতুন নেছা আমার মা শীর্ষক একটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন।

 

তিনি ঢাকায় কর্মজীবী নারীদের জন্য বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব অত্যাধুনিক দশতলা হোস্টেলেরও উদ্বোধন করেন।

 

বঙ্গমাতার ৯২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠান থেকে মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে আড়াই হাজার অসচ্ছল নারীর মাঝে ৫০ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। জেলা প্রশাসন গোপালগঞ্জ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে এই কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক শুরু করলেও যুগপৎ সারা দেশেই এই কর্মসূচি পালিত হয়।

 

এঁদের মধ্যে প্রত্যেক নারী পাচ্ছেন ২,০০০ টাকা করে। মোট অর্থের মধ্যে ১৩ লাখ টাকা বন্যাকবলিত জেলা সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোণার নারীদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে সারা দেশে দুঃস্থ নারীদের মধ্যে মোট সাড়ে চার হাজার সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়।

 

অনুষ্ঠানে বঙ্গমাতার জীবনীভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্মিত অত্যাধুনিক কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলটির বিষয়ে একটি তথ্যচিত্রও অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করা হয়।

 

পরে জাতির পিতা, বঙ্গমাতা এবং ৭৫-এর ১৫ আগস্টের শহিদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাতও অনুষ্ঠিত হয়। 


মন্তব্য করুন

Video