চট্টগ্রাম রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২
চট্টগ্রাম রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২

জাতীয়

বাংলাদেশের উপকূলের দিকেই ছুটে আসছে ঘূর্ণিঝড়টি।

ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় 'সিত্রাং': উপকূলে ৪ নম্বর সঙ্কেত

জাতীয় ডেস্ক
প্রকাশিত : সোমবার, ২০২২ অক্টোবর ২৪, ০৯:২১ পূর্বাহ্ন

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এ রূপ নিয়েছে, এবং এর ধারাবাহিকতায় উপকূলীয় এলাকায় ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

সিত্রাং নামটি থাইল্যান্ডের দেওয়া। ঘূর্ণিঝড়টি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আগামীকাল মঙ্গলবার ভোরে ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে।

ভারত ও বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সিত্রাংয়ের শক্তি ক্রমশ বাড়ছে। এটির কেন্দ্রে শক্তি বাড়তে বাড়তে ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। ঘূর্ণিঝড়টির যে গতিপথ, এতে এটি বাঁক খেয়ে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে এগিয়ে আসবে। আগামী মঙ্গলবার বরিশাল অঞ্চলে আঘাত হেনে স্থলভাগে উঠে আসবে। তবে এখনো প্রায় উপকূল থেকে ৭০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে এটি।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত করার সময় দুর্বল না শক্তিশালী থাকবে, তা আজকের মধ্যে বোঝা যাবে। আজ সোমবার অমাবস্যা তিথি। এসময়ে সমুদ্রে জোয়ারে পানির উচ্চতা এমনিতেই বেশি থাকবে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ঘূর্ণিঝড় ও ঝোড়ো বাতাস। ফলে দেশের উপকূলীয় জেলাগুলো উঁচু জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেছেন, নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে পরিণত হয়েছে। এটি আরো ঘনীভূত হচ্ছে এবং উত্তর দিকে এগোচ্ছে। এখন পর্যন্ত যে গতিপথ, তাতে ঝড়টি বাংলাদেশের উপকূলের দিকেই আসছে বলে মনে হচ্ছে। তবে এখনো উপকূল থেকে ৭০০ কিলোমিটার দূরে আছে।

তিনি আরো বলেন, সিত্রাং উপকূল থেকে ৭০০ কিলোমিটার দূরে থাকার ফলে দেশের কোন্‌ কোন্‌ উপকূলে আঘাত হানতে পারে, তা এখনই সুনির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব নয়, তবে প্রায় সব উপকূলেই এর কম-বেশি প্রভাব পড়বে।

আগামী ২৫ অক্টোবর ভোরে এটি বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং আশপাশের এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি উত্তর-পূর্বদিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে প্রথমে গভীর নিম্নচাপ এবং পরে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এ পরিণত হয়ে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আজ সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দেশের আরো কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে।

এদিকে আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও আশপাশের এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরো সামান্য উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এ পরিণত হয়ে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। গতকাল রোববার দুপুরের পর ঘূর্ণিঝড়টি এগিয়ে এসেছে। এটি দুপুরে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের ৭৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে ছিল, এখন সেটি ৭৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। একইভাবে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ছিল ৭১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, এখন ৭১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ছিল ৭৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে, এখন ৭০০ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ছিল ৬৯৫ কি.মি. দক্ষিণে, এখন ৬৭৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছে। এটি আরো ঘনীভূত হয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে। 

নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কি.মি., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।

গভীর নিম্নচাপটির বর্ধিতাংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ৪০ থেকে ৫০ কি.মি. বেগে দমকা অথবা ঝড়ো বাতাস বয়ে যেতে পারে, সেই সঙ্গে ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণ হতে পারে। 

রোববার রাতে বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (ক্রমিক নম্বর-৬) বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সমুদ্রবন্দরগুলোতে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেতের পরিবর্তে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গভীর নিম্নচাপটির বর্ধিতাংশ, অমাবস্যা তিথি ও বায়ুচাপের পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুবাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। 

আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও জানায়, আগামী দুদিনে আবহাওয়া পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে, এবং পাঁচ দিনের প্রথম দিকে আবহাওয়ার উন্নতি হতে পারে।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Video