চট্টগ্রাম রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২
চট্টগ্রাম রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২

জাতীয়

এবছর সারা দেশে ৩২,১৬৮টিমণ্ডপে পুজো হচ্ছে

আজ মহাষষ্ঠী: শারদীয় দুর্গোৎসবের শুভারম্ভ:

জাতীয় ডেস্ক
প্রকাশিত : শনিবার, ২০২২ অক্টোবর ০১, ১০:২২ পূর্বাহ্ন

আজ শনিবার ষষ্ঠীপূজার মধ্যে দিয়ে শুরু হচ্ছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে আগামী বুধবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পাঁচদিনব্যাপী এ উৎসবের পরিসমাপ্তি হবে।

এর আগে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় দেবীর বোধন অনুষ্ঠিত হয়। সারা দেশে এবার ৩২,১৬৮টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে জানা গেছে, যা গতবারের চেয়ে প্রায় পঞ্চাশটা বেশি। 

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা 

দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল পৃথক বাণীতে দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বী সকল নাগরিককে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।

ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মধ্যে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের বন্ধন আরো সুসংহত হোক-- এ কামনা করে রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বলেন, ধর্মীয় উৎসবের পাশাপাশি দুর্গাপূজা দেশের জনগণের মাঝে পারস্পরিক সহমর্মিতা ও ঐক্য সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শারদীয় দুর্গোৎসব সত্য-সুন্দরের আলোকে ভাস্বর হয়ে উঠুক ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্গাপূজা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসবই নয়, এটি এখন সার্বজনীন উৎসব। অশুভ শক্তির বিনাশ এবং সত্য ও সুন্দরের আরাধনা শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রধান বৈশিষ্ট্য।

দুর্গা শব্দের অর্থ হলো ব্যূহ বা আবদ্ধ স্থান । যা কিছু দুঃখ কষ্ট মানুষকে আবদ্ধ করে, যেমন বাধাবিঘ্ন, ভয়, দুঃখ, শোক, জ্বালা ,যন্ত্রণা এসব থেকে তিনি ভক্তকে রক্ষা করেন। শাস্ত্রকাররা দুর্গার নামে অন্য একটি অর্থ করেছেন । দুঃখের দ্বারা  যাকে লাভ করা যায় তিনিই দুর্গা।  দেবী দুঃখ দিয়ে মানুষের সহ্যক্ষমতা পরীক্ষা করেন। তখন মানুষ অস্থির  না হয়ে তাঁকে ডাকলেই  তিনি তার কষ্ট দূর করেন।

হিন্দু পূরাণমতে দুর্গাপূজার সঠিক সময় হলো বসন্তকাল, কিন্তু বিপাকে পড়ে রামচন্দ্র রাজা সুরথ এবং বৈশ্য সমাধি প্রবর্তিত বসন্তকালীন পূজা পর্যন্ত অপেক্ষা না করে শরতেই দেবিকে অসময়ে জাগ্রত করে পূজা করেন। সেই থেকে অকাল বোধন হওয়া সত্ত্বেও শরতকালে দুর্গাপূজা প্রচলিত হয়ে যায় ।

ঢাকার রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের হরিপ্রেমানন্দ মহারাজ গণমাধ্যমকে বলেন, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার গজে (হাতিতে) চড়ে কৈলাস থেকে মর্ত্যলোকে (পৃথিবীতে) আসবেন। এতে পৃথিবী ফলেফসলে ভরে উঠবে। অন্যদিকে তিনি কৈলাশে (স্বর্গে) ফিরে যাবেন নৌকায় চড়ে। যার ফলে ঝড়-বৃষ্টি, বন্যা প্রভৃতি হতে পারে। জগতের কল্যাণ সাধীত হবে ।

এদিকে পূজাকে আনন্দমুখর করে তুলতে দেশজুড়ে বর্ণাঢ্য প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। সারা দেশে এখন বইছে উৎসবের আমেজ। ঢাক-ঢোল কাঁসা এবং শঙ্খের আওয়াজে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিভিন্ন মণ্ডপ।

রামকৃষ্ণ মিশনের নির্ঘণ্টে বলা হয়েছে , সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে কল্পারম্ভ এবং বোধন আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে উৎসবের প্রথম দিন ষষ্ঠীপূজা সম্পন্ন হবে। এদিন সকাল থেকে চণ্ডিপাঠে মুখরিত থাকবে সকল মণ্ডপ এলাকা।

উৎসবের দ্বিতীয় দিন রবিবার মহাসপ্তমী পূজা অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৬টা ৩০মিনিটে।

সোমবার মহাষ্টমী পূজা নুষ্ঠিত হবে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে এবং বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা। সন্ধিপূজা শুরু  হবে  বিকাল ৪ টা ৪৪ মিনিটে  গতে এবং সমাপন বিকাল ৫টা ৩২ মিনিটের মধ্যে।

মঙ্গলবার সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে নবমী পূজা। পুষ্পাঞ্জলি সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে। 

পরদিন বুধবার সকাল ৬ টা ৩০ মিনিটে দশমী পূজারম্ভ, পুষ্পাঞ্জলি সকাল ৮টায় এবং পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন হবে সকাল ৮টা ৫০ মিনিটের মধ্যে । সন্ধ্যারতির পর  প্রতিমা বিসর্জন ও শান্তিজল গ্রহনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচদিনব্যাপি এ উৎসবের। 

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার গণমাধ্যমকে বলেন, সারা দেশে এবছর ৩২,১৬৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপন হবে। গত বছর সারা দেশে দুর্গাপূজার সংখ্যা ছিল ৩২,১১৮টি। এবার এ সংখ্যা আরো অর্ধশত বেড়েছে। ঢাকা মহানগরে পূজার সংখ্যা ২৪১টি, যা গত বছরের থেকে ৬টি বেশি।

দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের প্রতিটি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র‌্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।

রাজধানীতে কেন্দ্রীয় পূজা উৎসব হিসেবে পরিচিত ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মণ্ডপে পূজার পাশাপাশি ভক্তিমূলক সঙ্গীতানুষ্ঠান, বস্ত্র বিতরণ, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আরতি প্রতিযোগিতা, স্বেচ্ছা রক্তদান ও বিজয়া শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।

রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ পূজামণ্ডপ, গুলশান বনানী সর্বজনীন পূজা ফাউন্ডেশন রমনা কালীমন্দির ও আনন্দময়ী আশ্রম, বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির ও শ্মশান কমিটি, সিদ্ধেশ্বরী কালিমাতা, ভোলানাথ মন্দির আশ্রম, জগন্নাথ হল, ঋষিপাড়া গৌতম মন্দির, বাসাবো বালুর মাঠ ,শাঁখারী বাজারের পানিটোলা মন্দিরসহ অন্যান্য মণ্ডপে দুর্গোৎসবের ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

পরিষদের সভাপতি জে. এল. ভৌমিক বলেন, বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা আগামী শনিবার থেকে  শুরু হবে যা আগামী ৫ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।

তিনি বলেন,গত বছরের ঘটনার প্রেক্ষাপটে এবছর সরকার চাইছে, কোনো অবস্থাতেই যেন কোনো অঘটন না ঘটে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো গত বছরের তুলনায় এবার অনেক বেশি সক্রিয়। আমাদের ৩২,১৬৮টি পূজমণ্ডপের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য আমরা এবছর প্রত্যেক মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করছি, যারা রাতেও পাহারা দেবে।

দুর্গোৎসব উপলক্ষে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ হিন্দু সম্প্রদায়সহ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিককে শারদীয় দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Video