এখন সময় এসেছে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারীদের
মুখোশ উন্মোচন করে তাদের প্রকৃত পরিচয় প্রকাশ করার।
গতকাল বুধবার শোকের মাস আগস্টের শেষদিনে জাতীয় সংসদে এ কথা বলেন
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘এখন
সময় এসেছে যারা ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে ছিল, তাদের খুঁজে বের
করার। আমি জানি না আমরা এই হত্যাকাণ্ডের পিছনের (লোকগুলোর) মুখোশ উন্মোচন করতে
পারব কিনা, তবে আমি মনে করি এটি অন্তত একদিন বেরিয়ে আসবে।’
জাতীয় সংসদে ১৪৭ বিধির ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তব্য রাখছিলেন
শেখ হাসিনা। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। সংসদ নেতাভ
প্রস্তাবটি পরে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
প্রধানমন্ত্রী ১৪৭ বিধিতে আনিত প্রস্তাবটি পাঠ করে এটি গ্রহণ করার
অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, ‘অন্তত
এই হত্যার চক্রান্তকারীদের বের করে জাতির কাছে তাদের চেহারাটা উন্মুক্ত করা দরকার।
আমি সেটা মনে করি।’
সংসদ নেতা বলেন, ‘আমি
মনে করি-- এটা অনেকেই দাবি করেছেন-- যারা সরাসরি হত্যায় জড়িত তাদের বিচার হয়েছে
এবং অনেকের বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে; কিন্তু এই চক্রান্ত শুধু একটা হত্যাকাণ্ডই
নয়, এই চক্রান্ত একটা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, স্বাধীনতার বিরুদ্ধে, এবং আমাদের
আদর্শের বিরুদ্ধে। কাজেই এই চক্রান্তের পেছনে কারা জড়িত আজকে সেটাও খুঁজে বের করার
সময় এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি
মনে করি, আমরা হয়তো সেটা শেষ করে যেতে পারবো না। কিন্তু একদিন না একদিন সেটা
নিশ্চয়ই বের হবে, নিশ্চই প্রকাশিত হবে।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘এটা জাতির জানা দরকার এবং প্রজন্মের পর প্রজন্মেরও জানা দরকার যে
চক্রান্তটা আমাদের স্বাধীনতার চেতনাটাকেই ধ্বংস করে দিচ্ছিল, রাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত
করেছিল। নিশ্চয় সেটা জাতির জানতে হবে।’
এ সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, ‘তবে হ্যাঁ, জানি অনেককিছুই। কিন্তু আমি তো বলেছি সব কষ্ট, সব কথা,
সব কিছু এবং এই সব শোক বুকে ধারণ করেই আমার পথ চলা। আমিতো নীলকণ্ঠ হয়ে বেঁচে আছি।
আবার অনেক কিছু জানি, বলি না কারণ, আমার একটাই লক্ষ্য দুঃখী মানুষের মুখে হাসি
ফোটানো। সেটাই সার্থকভাবে যখন করতে পারবো হয়তো অনেক কিছু বলার একটা সুযোগ আসবে।’
করোনার পর রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মন্দায় সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা
তাঁর উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত না করলে অচিরেই সে লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হতো বলেও উল্লেখ
করেন তিনি।
এর আগে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের তীব্র ঘৃণা জানাতে জাতীয় সংসদে প্রস্তাব
উত্থাপন করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য র. আ. ম. উবায়দুল
মোকতাদির চৌধুরী।
উবায়দুল মোকতাদিরের প্রস্তাবে বলা হয়, ‘এই মহান সংসদের অভিমত এই যে, ঘৃণ্য খুনিচক্র ও
চক্রান্তকারী গোষ্ঠী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের
অধিকাংশ সদস্যদের ১৫ আগস্টে নিষ্ঠুর ও নির্মমভাবে হত্যা করেছিল, তাদের প্রতি তীব্র
ঘৃণা জানাচ্ছি। কিন্তু চক্রান্তকারীদের প্রেতাত্মারা এখনো ক্ষান্ত হয়নি। আজও তারা
ঘৃণ্য তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে পুনরায় রাষ্ট্র ক্ষমতায় ফিরে এসে ইতিহাসের চাকাকে
ঘুরিয়ে দিতে।
‘তাদের এই ঘৃণ্য চক্রান্তকে সফল হতে দেওয়া যায় না। ইতিহাসের পাদদেশে
দাঁড়িয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সব শহীদকে বিনম্র চিত্তে ও
শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সব চক্রান্তকে
ব্যর্থ করে দেওয়ার শপথ গ্রহণ করছি। ২০২২ সালের আগস্ট মাসে একাদশ জাতীয় সংসদের
উনবিংশতম অধিবেশনে এই হোক প্রত্যয় দৃঢ় ঘোষণা।’
মন্তব্য করুন