বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও
বিএনপি’র মধ্যে কোনো তুলনা হতে পারে না। বিএনপি জনগণের কল্যাণ চায় না।
তারা মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারে, মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। আর আওয়ামী
লীগ মাটি ও মানুষের দল, জনগণের কল্যাণে কাজ করে।
২৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার
কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সাদুল্যাপুর ইউনিয়নের তালিমপুর তেলিহাটি উচ্চ
বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।
জনসভার পূর্বে
সমাবেশস্থলে ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে ৩২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের
উদ্বোধন এবং অপর পাঁচটি প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন
প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা আরো বলেন,
যারা নিজের দলের গঠনতন্ত্র মানে না, নিয়ম মানে না, আইন মানে না, সেই দলের সাথে
আওয়ামী লীগের তুলনা চলে কীভাবে। আওয়ামী লীগ এ দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন
সংগ্রামের মধ্যদিয়ে গড়ে উঠেছে। তাই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশের উন্নতি হয়।
প্রধানমন্ত্রী আরো
বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারি জিয়া সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করেছে। উচ্চ
আদালতের রায় আছে। ক্ষমতায় বসে থেকে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে যে দল তৈরি করেছিল সেই
দল হচ্ছে বিএনপি। এরা মানুষের কল্যাণও চায় না মঙ্গল ও চায় না। এরা মানুষকে আগুন
দিয়ে পোড়ায়, মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। কাজেই এদের সাথে আওয়ামী লীগের
তুলনা চলে না।
সরকার প্রধান আরো বলেন,
এখানে একটি কথা বলতে চাই ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ৩শ’ সিটের
মধ্যে মাত্র ৩০টি সিট পেয়েছিল। আর আওয়ামী লীগ মহাজোট করেছিল। তারা পেয়েছিল বাকী
সবগুলো আসন। তাহলে এই দুই দল এক পর্যায়ের হয় কীভাবে। বিএনপি সরকারের আমলে
জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, গ্রেনেড হামলা, ৬৩ জেলার ৫শ’ জায়গায় একযোগে
বোমা হামলা, দুর্নীতিতে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন, ওরা মানুষকে কিছু দেয়নি বরং মানুষের
অর্থকরী সব লুটপাট করে বিদেশে নিয়ে গেছে। তারা এমন একটি রাজনৈতিক দল যারা নিজেরা
নিজেদের গঠনতন্ত্রও মানে না।বিএনপি’র গঠনতন্ত্রেই
আছে সাজাপ্রাপ্ত আসামী দলের নেতা হতে পারে না। আর বিএনপি একজন নেতাও কি পায় না যে
অন্তত সাজাপ্রাপ্ত আসামী নয়, খালেদা জিয়া এবং তাঁর ছেলে দু’জনেই
সাজাপ্রাপ্ত আসামী। খালেদা জিয়ার ছেলে যাকে নেতা বানিয়েছে সে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা,
২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাসহ বিভিন্ন দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত।
কোটালীপাড়া উপজেলা
আওয়ামী লীগের সভাপতি হবেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য
রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের,
প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি প্রমুখ। অনুষ্ঠানে কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ
আয়নাল হোসেনের সঞ্চালনায় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র ও স্থানীয়
নেতৃবৃন্দ।
৪৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের
মধ্যে রয়েছে পাইপলাইনে পানি সরবরাহের দু’টি গ্রামীণ প্রকল্প। এর
একটি টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমুরিয়া ইউনিয়নে এবং অপরটি কোটালীপাড়া উপজেলার রামশিল
ইউনিয়নে। গোপালপুর ইউপি অফিস-কাজুলিয়া ইউপি ভায়া বোরাইহাটি পোলশাইর বাজার সড়কে ২৪
মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ ও কুশলি জিসি-ধারাবাশাইল জিসি ভায়া মিত্রাডাঙ্গা সড়কে
৯৯ মিটার গার্ডার ব্রিজ, টুঙ্গিপাড়া উপজেলার সোনাখালি সড়ক, কোটালীপাড়ায় চারতলা
বিশিষ্ট শুয়াগ্রাম বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, কোটালীপাড়ায় শেখ হাসিনা আদর্শ ডিগ্রী
কলেজের তিনতলা বিশিষ্ট গার্ল হোস্টেল (১শ’ শয্যা),
কোটালীপাড়া এসএন ইনস্টিটিউটের চারতলা বিশিষ্ট শিক্ষা ভবন, কোটালীপাড়া পৌর কিচেন
মার্কেট ও কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদ ভবন নির্মাণ, কোটালীপাড়া উপজেলার ভাঙ্গারহাট
তালিমপুর তেলিহাটি উচ্চ বিদ্যালয়ে শেখ রাসেল লাইব্রেরি, কোটালীপাড়ায় কবি সুকান্ত
ভট্টাচার্যের পৈতৃক বাড়িতে ‘মুক্তমঞ্চ’, কোটালীপাড়ার উত্তর কোটালীপাড়া রামমোহন উচ্চ বিদ্যালয়ে বন্যা
আশ্রয় কেন্দ্র, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বড় বাজারে একতলা বাণিজ্যিক ভবনকে ১০তলায়
উন্নীতকরন ভবনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী গণপূর্ত
বিভাগের আওতায় গোপালগঞ্জ জেলা তথ্য কমপ্লেক্স ভবন ও কোটালীপাড়া মডেল মসজিদ এবং
ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের আওতায় রাধাগঞ্জ ইউনিয়ন
ভাঙ্গারহাট বাজার উন্নয়ন ও কোটালীপাড়া উপজেলায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ওপর
ম্যুরাল নির্মাণ এবং কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদের আওতায় ১১টি ইউনিয়নে জাতির পিতা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
করেন।প্রকল্প উদ্বোধনের পরে এগুলো গোপালগঞ্জবাসীর জন্য তাঁর সরকারের উপহার বলে
উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে
প্রধানমন্ত্রী জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের অভিযান
অব্যাহত রাখার কথা উল্লেখ করে এ ব্যাপারে অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক থাকার
আহবান জানান।
জনসভায় পদ্মা সেতু
নির্মাণের সুফলের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে ঢাকা থেকে স্টিমারে বা
লঞ্চে গোপালগঞ্জ টুঙ্গীপাড়া আসতে ২২ ঘণ্টা, ২৪ ঘণ্টা সময় লাগতো। এখন মাত্র আড়াই
ঘণ্টার মধ্যে আমরা এখানে পৌঁছে গেছি। কোটালীপাড়াবাসিকে আগে শুধু পানি, খাল-বিল,
বাঁশের সাঁকো পার হতে হতো। আজকে এখানে রাস্তাঘাট, পুল, ব্রিজ করে এ অঞ্চলের
মানুষের আর্থিক সুবিধা করে দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর
সরকারের আমলে দেশের আর্থ সামাাজিক ও অবকাঠামো উন্নয়নের নানাচিত্র তুলে ধরে আরো
বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাথমিক থেকে বৃত্তি-উপবৃত্তি দিয়ে যাচ্ছি, প্রতিটি
উপজেলায় স্কুল, কলেজ করে দিয়েছি। ডিজিটাল ল্যাব করেছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়েছি।
ছোট থেকেই যাতে শিক্ষার্থীরা কম্পিউটার শিক্ষা পায় তার ব্যবস্থা করেছি। জাতির
পিতার অসমাপ্ত কাজ সম্পূর্ণ করছি। একটি পরিবারও ভূমিহীন, ঘরহীন থাকবে না। জাতির
পিতার এ অঙ্গীকার বাস্তবে রূপ দেবো।
তিনি আরো বলেন,
বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে, ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে। করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ
না হলে বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো।
উপস্থিত জনতাকে উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের মাঝেই তো আমি ফিরে পাই আমার হারানো বাবা, মা ও ভাইয়ের স্নেহ। আপনাদের এই স্নেহ ভালবাসাই আমার একমাত্র শক্তি। আপনাদের জন্য সবসময় দোয়া করি, আপনারাও দোয়া করবেন। এ বাংলাদেশকে যেন উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা এবং স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।
- মা.ফা.
মন্তব্য করুন