এক ফাল্গুনে বসন্তদিনে বাংলার প্রাণ
জেগে উঠেছিল দানের আবেগে
বাঙালি বুকের রক্তে রক্তিম হয়েছিল
পলাশের কুঁড়ি
মর্যাদা ফিরে পেয়েছিলো বাংলা বুলি
আরেক বসন্তে, চৈত্রের খরতপ্ত দিনে
উড্ডীন হলো স্বদেশের স্বাধীন পতাকা
দিকে দিকে বেজে উঠল যুদ্ধের দামামা
এক বীর বঙ্গনেতার বজ্রকণ্ঠের ডাকে
বালক বীরের বেশে যুদ্ধজয় করে এলো
বাংলার দামাল ছেলেরা
নিয়ে এলো সূর্যকরোজ্জ্বল উষ্ণতার প্রতিশ্রæতি
বিধ্বস্ত অথচ বিজয়ী বাংলাদেশে
শীতের এক তুহিন হিমেল কুয়াশাঢাকা ভোরে
তারপর এল সেই ভরা বাদরের মাহ ভাদরের দিন
শোকের ঘনকালো মেঘে ছেয়ে গেলো বাংলার আকাশ
অঝোরে ঝরতে লাগল অবিরল শোকাশ্রæ
বজ্রকণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেয়া হল
খুব কাছ থেকে গুলি করে উড়িয়ে দেয়া হল
সেই ঐতিহাসিক উদ্যত তর্জনী
বাংলার সোনালি স্বপ্নদ্রষ্টা সেই চোখের চশমা
গুঁড়িয়ে গেলো মাটিতে আছড়ে পড়ে
ভাদ্রের অঝোর বৃষ্টির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঝরতে লাগলো
রক্ত
জনকের
জননীর
পুত্রদের
বধূদের
শিশুদের
স্বজনদের
প্রহরীদের
অঢেল অফুরান রক্ত
নিঃশব্দে মিশে যেতে থাকলো বৃষ্টিধারার সঙ্গে
কোনো পৌষ ফাগুনের পালায় অর্জিত যাবতীয় সুকৃতি
ভেসে গেলো সেই ভাদ্রদিনে
নরকের দক্ষিণ দুয়ার চিনে চিনে
ভেদকামী অতীতের অন্ধকার থেকে
উঠে আসা প্রেত পিশাচেরা
জবরদখল করে নিল বাঙালির ভাগ্যের আকাশ
তারপরও এসেছে আরো আঘাত ভাদ্রে বা আশ্বিনে
শরতের নীলিমাকে ম্লান করে
পুরোনো দানবেরা বার বার
করে গেছে নখদন্তের বিস্তার
তাদের কালো নিঃশ্বাস
কালিমালিপ্ত করেছে শারদ আকাশ
কিন্তু তবুও বঙ্গবন্ধু নামের সেই সূর্যকে
তারা মুছতে পারেনি
কালের ব্যবধানে আবারও সে সূর্যের উদয় হয়েছে
তার আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে যাচ্ছে
সমস্ত গোপন পাপ, কালিমা, লোভ, লালসার ইতিহাস
সূর্যকন্যার প্রখর তাপে পুড়ে যাচ্ছে
সব পাপ আর পাপীরা
শোকের, অনুতাপের অশ্রুজলে
স্নাত, ধৌত, কালিমামুক্ত হচ্ছে
বাংলার বিখ্যাত শরতের
নির্মল নীলিমা