চিরায়ত ঐতিহ্যের অনুষঙ্গে বাংলা নববর্ষ

বিপুল জামান
প্রকাশিত : শুক্রবার, ২০২৩ এপ্রিল ১৪, ০৮:০১ অপরাহ্ন

গ্রাম ও শহরভেদে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর উৎসবে ভিন্নতা দেখা যায়। শহর অঞ্চলে বিভিন্ন মেলা, ঘুড়ি ওড়ানো, গরুর দৌড়, সঙ গান, হালখাতা উৎসব, বাসি খাবার খাওয়া ইত্যাদি আচার পালনের কথা জানা যায়। অপরদিকে গ্রামে প্রচলিত ছিল পুণ্যাহ, চড়ক পূজা, শিব-গৌরী নাচ, ষাঁড় দৌড়, আড়ং এবং হালখাতা। এসব উৎসব কালের বিবর্তনে কিছু হয়েছে বিলুপ্ত আর কিছু পরিবর্তিত হয়ে সংস্কৃতিতে হয়েছে স্থিত।

 

হালখাতা

 

পহেলা বৈশাখ বা নববর্ষ শব্দটি উচ্চারণ করলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে হালখাতার আমেজ। হালখাতা ব্যাপারটি মূলত ব্যবসায়ীদের হলেও সমাজের সব শ্রেণির মানুষের সঙ্গে এটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কারণ সমাজের সর্বস্তরের মানুষ ব্যবসা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জীবনযাপনের খাতিরেই সংযুক্ত থাকে। তাই হালখাতা উৎসবে সবার অংশগ্রহণ থাকে। হালখাতা অনুষ্ঠানে থাকে দুটি পক্ষ। আমন্ত্রক পক্ষ ও আমন্ত্রিত পক্ষ। হালখাতা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রক পক্ষ হলো ব্যবসায়ীরা। এদের মধ্যে যেমন হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদ নেই তেমনি আমন্ত্রিতদের মধ্যে হিন্দু-মুসলিম পার্থক্য নেই। এই উৎসবে ব্যবসায়ীরা তাদের নিয়মিত গ্রাহক বা বাঁধা খদ্দের, বাকি-বকেয়াওয়ালা খদ্দের, পৃষ্ঠপোষক, শুভার্থী ও বন্ধুবান্ধবকে পত্রযোগে কিংবা লোক মারফত নিমন্ত্রণ করে গদিতে বা দোকানে এনে সাধ্যমতো মিষ্টিমুখ করান। নতুন বছরের মিষ্টিমুখ হালখাতা উৎসবের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। হিন্দু ব্যবসায়ীরা ব্যবসার উন্নতির জন্য গণেশ পূজা করলেও তার অন্য কোনো প্রভাব নেই হালখাতা অনুষ্ঠানে।

 

হালখাতা শব্দটি আরবি-ফারসি মিশ্রিত যৌগিক শব্দ। খাতা ফারসি শব্দ এর অর্থ হিসাবের বই। হাল আরবি শব্দ এর অর্থ বর্তমান বা চলতি। হালখাতা শব্দের অর্থ চলতি বা নতুন বছরের হিসাবের খাতা। এ থেকে বলা যায়, হালখাতা অনুষ্ঠান অর্থ নতুন বাংলা বছরের হিসাব লিখে রাখার জন্য ব্যবসায়ীদের নতুন খাতা খোলার অনুষ্ঠান। হালখাতা অনুষ্ঠানে নতুন খাতা খোলার জন্য অনেক ক্ষেত্রে লাল কাপড়ের মলাটের এক ধরনের বিশেষ খাতা ব্যবহার করা হয়। এই খাতার প্রচলিত নাম খেরোখাতা। পুরনো খদ্দেররা হালখাতায় এসে গত বছরের বাকি-বকেয়া মিটিয়ে দেন। একান্ত অসমর্থ না হলে কেউ বাকির ঘরে নাম লেখাতে চান না। আবার কেউ কেউ কোনো পাওনা না থাকলেও দোকানির হালখাতায় অগ্রিম কিছু টাকা জমা দেন। এভাবেই শুভ হালখাতা অনুষ্ঠান ব্যবসা-বাণিজ্যে অর্থনৈতিক গতির সঞ্চার করে।

 

চড়ক উৎসব

 

বাংলা নববর্ষের আগের দিন অর্থাৎ চৈত্রসংক্রান্তির দিন চড়ক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। বালা নামক এক শ্রেণির হিন্দু চড়ক পূজার প্রধান আচার-আচরণ পালন করে থাকেন। বালাদের মধ্যে একজন থাকেন মূল বালা বা গুরু। তিনি অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। চড়ক পূজাকে কেন্দ্র করে যে উৎসব অনুষ্ঠিত হয় তাকে চড়ক উৎসব বলে। এই পূজার বিভিন্ন অংশ যেমন মুদ্রাভঞ্জন বা গম্ভীর পূজা, অধিবাস বা গৃহসন্ন্যাস বা গিরিসন্ন্যাস, দ্বারপাল পূজা, পাটস্নান এবং সন্ন্যাসীদের অর্থাৎ বালা, সাঙ্গ বা সাঁইদের দেবতা প্রণাম প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এগুলো একই সময়ে একই দিনে অনুষ্ঠিত হয় না। এই পূজায় নিম্নশ্রেণির মধ্য থেকে আগত সন্ন্যাসী বা সাঙ্গদের প্রণাম করতে হয়। বিশেষ বিশেষ ফল ও ফুল হাতে নিয়ে এক একজন সন্ন্যাসীকে বিবিধ বাদ্য ও মুদ্রা সহযোগে করা এই প্রণামের সংখ্যা নির্দিষ্ট। প্রাচীন বাংলায় চড়ক পূজা সম্পর্কে ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার লিখেছেন, ‘চৈত্রসংক্রান্তিতে চড়ক পূজার উৎসবে বহু প্রকারের দৈহিক যন্ত্রণা ধর্মের অঙ্গ বলিয়া বিবেচিত হইত। চড়ক গাছে অর্থাৎ একটি উচ্চ খুঁটিতে ভক্ত বা সন্ন্যাসীকে লোহার হুক দিয়া চাকার সহিত বান্ধিয়া ঐ চাকা দ্রুত বেগে ঘোরানো হইত। এইরূপ ভক্তের সংখ্যা কখনো কখনো শতাধিক হইত। তাহাদের পিঠে, হাতে, পায়ে, জিহ্বায় এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গে বাণফোঁড়া অর্থাৎ লোহার শলাকা বিদ্ধ করা হইত। জ্বলন্ত লোহার শলাকা তাহাদের গায়ের মধ্যে ফুঁড়িয়া দেওয়া হইত।...চড়ক গাছে পিঠে বাণফুঁড়িয়া ভক্তরা দে-পাক দে-পাক করিয়া পাক খাইতেন।...এই নিষ্ঠুর প্রথা কেবল বাংলা ও উড়িষ্যায় সীমাবদ্ধ ছিল।...ইংরেজ আমলে আইনের দ্বারা এই রীতি নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় হওয়ার পর হইতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাত্র একটি বড়শি সন্ন্যাসীর গায়ে ছোঁয়াইয়া তাহাকে শূন্যে বাঁধিয়া দেওয়া হয়। তাহার পর যথারীতি তাহাকে শূন্যে আবর্তিত করা হয়।’

 

পুণ্যাহ

 

পুণ্যাহ বাংলা নববর্ষের একটি সর্বজনীন অনুষ্ঠান। পুণ্যাহ অনুষ্ঠান সম্পর্কে বলতে গিয়ে ড. এনামুল হক লিখেছেন, ‘পুণ্যাহ শব্দের মৌলিক অর্থ পুণ্য কাজ অনুষ্ঠানের পক্ষে জ্যোতিষশাস্ত্রানুমোদিত প্রশস্ত দিন। কিন্তু বাংলায় এর অর্থ দাঁড়িয়ে গেছে জমিদার কর্র্তৃক প্রজাদের কাছ থেকে নতুন বছরের খাজনা আদায় করার প্রারম্ভিক অনুষ্ঠানসূচক দিন।’ এই সেদিন পর্যন্ত জমিদার ও বড় বড় তালুকদারের কাছারিতে পুণ্যাহ অনুষ্ঠিত হতো।

 

যদিও অধিকাংশ পুণ্যাহ পহেলা বৈশাখে উদযাপিত হতো, বেশ কিছু সংখ্যক পুণ্যাহ সারা মাস ধরে পূর্বনির্ধারিত দিনে অনুষ্ঠিত হতো। সেদিন অধিকাংশ প্রজা কাপড়-চোপড় পরে জমিদার-তালুকদার বাড়িতে খাজনা দিতে আসতেন। প্রজারা বছরের অথবা অতীত বছরের খাজনা আংশিক বা পুরোপুরি আদায় করতেন। কোথাও কোথাও জমিদার-তালুকদারেরা প্রজাদের পান-সুপারি দিতেন; আর কোথাও কোথাও মিষ্টিমুখও করাতেন। ঐদিন জমিদার-প্রজার সম্বন্ধের দূরত্ব খুব কমে আসত। তারা মিলিত হতেন, পরস্পরের সুখ-দুঃখের খবর নিতেন; এমনকি পরস্পর প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করতেন।’

 

পহেলা বৈশাখের ভোররাত থেকে জমিদার বাড়ির সামনে নাকাড়া বাজত। এর মাধ্যমে সবাইকে জানানো হতো যে, আজ বৈশাখের প্রথম দিন। জমিদারের পুণ্যাহ। প্রজারা ভালো কাপড়-চোপড় পরে নজরানা দিতে আসত। সিংহাসনের মতো উঁচু আসনে বসা জমিদার হাসিমুখে সে নজরানা গ্রহণ করতেন। সবার হাতে তুলে দেওয়া হতো ঠোঙাভরা সন্দেশ-রসগোল্লা আর কিছু পান-সুপারি।

 

শিব-গৌরীর নাচ

 

চৈত্রের শেষ দিন কালী এবং শিব-গৌরীর সঙ বের হতো। রঙ মেখে যারা শিব, গৌরী, কালী, রাধা, কৃষ্ণ, কার্তিক, গণেশ, গায়ক-গায়িকা, কবিয়াল সাজেন তারা সঙ নামে পরিচিত। এর একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো যে, কালীর নৃত্যে কালীর দুই হাতে তলোয়ার বা রাম দা থাকত। একটি বিশেষ নৃত্যের সঙ্গে শিব-গৌরীর সঙেরা নাচে। এই নৃত্যে আঘাত এবং প্রত্যাঘাতের সমস্ত ভঙ্গি সুন্দর ভাবে প্রকাশ পেত। প্রত্যেকটি ‘সম্’ (তালের মাত্রা) তরবারির আঘাতের ওপর শেষ হতো। এই নাচের সঙ্গে ঢাক বাজানো হতো। ঢাক বাজানোরও রয়েছে বিশেষ কৌশল। ঢোলের একদিকে বাঁশের তৈরি কাঁচি এবং অন্য দিকে হাতের সাহায্যে আঘাত করা হতো। গ্রামের রাস্তা দিয়ে বাড়ির সামনে দিয়ে যখন এই সঙের দল যেত তখন বাড়ির বৌ-ঝিরা সাধ্যমতো টাকা-পয়সা, চাল ইত্যাদি দিতেন। ঢাকের আওয়াজেই বোঝা যেত সেদিন চৈত্রসংক্রান্তি এবং কিছুক্ষণ পরেই শিব-গৌরীর সঙ এ পথ দিয়ে যাবে। শহরে শিব-গৌরীর সঙ হর-গৌরীর সঙ নামে পরিচিত ছিল। পহেলা বৈশাখের এ উৎসবে হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সবাই অংশ নিতেন। এটি ধর্মীয় উৎসব হিসেবে বিবেচিত হতো না, বরং লোকায়ত উৎসব হিসেবে সবার কাছে আদরণীয় ছিল।

 

শহুরে মেলা

 

চৈত্রসংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে শহরে খোলা মাঠে বসত মেলা। এসব মেলা এক দিন থেকে দুই মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতো। ১৯৪৫ সালে অল ইন্ডিয়া রেডিও’র ঢাকা কেন্দ্র থেকে একটি বিশেষ ধারাবাহিক অনুষ্ঠান প্রচার শুরু হয় ‘ঢাকা পঁচাশ বরস পহলে’, যেটার উপস্থাপক ছিলেন হেকিম হাবীবুর রহমান। এ অনুষ্ঠানে তিনি তুলে ধরতেন ১৯৪৫ সালের পঞ্চাশ বছর আগের ঢাকা সম্পর্কে। পরে ১৯৪৯ সালে সেই বেতার কথিকা বই আকারে প্রকাশিত হয়। হেকিম হাবীবুর রহমানের স্মৃতিকথা থেকে আমরা ১৮৯৫ সালের ঢাকা সম্পর্কে জানতে পারি। তার জবানি থেকে জানা যায় চৈত্র মাসের শেষ দিন অর্থাৎ চৈত্রসংক্রান্তির দিন দুপুর থেকে শুরু করে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত মসজিদগঞ্জের চরে মেলা বসত। এটি হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের যৌথ মেলা ছিল। মেলায় মাটির খেলনা এবং মাটির বাসনপত্রের দোকান বসত। শামিয়ানা টাঙানো হতো। সংগীতের জলসা জমত। মেলায় হিন্দু-মুসলমান গায়ক নিজেদের নৈপুণ্য প্রদর্শন করত। শহর ছিল দুইভাগে বিভক্ত। পূর্ব ও পশ্চিম। শহরের পশ্চিম অংশে বেশিরভাগ লোক (হিন্দু-মুসলিম) বসবাস করে যাদের পূর্বপুরুষরা উত্তর ভারত থেকে এসেছে এবং শহরের পূর্বভাগে বেশির ভাগ বাংলার নিজস্ব বাসিন্দাদের অধিবাস। এই মেলার দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ বাংলা সনের প্রথম দিন চিল পূজার নামে ফরিদাবাদ এবং শ্যামপুরে মেলা বসত। আমার বাল্যকালে আমি দেখেছিলাম যে, ফরিদাবাদ থেকে বেশি বড় মেলা বসত শ্যামপুরে। শ্যামপুরে নাচের জলসা বেশি হতো। চৈত্র পর্বকে আমাদের বাল্যকালে চড়ক (চরখ) পূজা বলত। চড়ক পূজায় লোকেরা মহাদেবজী কি জয় ধ্বনি প্রদান করত এবং ফুল ও শোলার তৈরি ফুল বর্ষণ করত। পূর্ব পশ্চিম সব ব্যাপারেই একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী। সঙদের গালিগালাজের জন্য কয়েকবারই বিবাদ হয়েছে, খুব মারপিট হয়েছে। একবার ইসলামপুরের সঙওলাদের সঙ্গে পূর্বদিকের সঙওলাদের ভীষণ লড়াই হলো। জখম হলো সঙেরা। কিন্তু কেউ মহাদেবের মূর্তিতে আঘাত করেনি। তারা এতটুকু বুদ্ধি রাখত যে, ধর্মীয় দাঙ্গা থেকে তারা বিরত থাকত। এসব উৎসব ছিল ধর্মীয় উৎসবের অপেক্ষা লোকায়ত উৎসব।

 

নেকমর্দানের বিখ্যাত মেলা

 

বাংলার সাতদিন স্থায়ী একটি বিখ্যাত মেলা উত্তরবঙ্গের দিনাজপুর জেলার নেকমর্দানের মেলা। নেকমর্দানে এখনো পহেলা বৈশাখে যে মেলা বসে তা হচ্ছে উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় মেলা। এই মেলা এক সপ্তাহকাল স্থায়ী হয়। এই মেলায় বিহার থেকে বলদ ষাঁড়, পার্শ্ববর্তী জেলাসমূহ ও আসাম থেকে হাতি, পাঞ্জাব থেকে উটের পাল ও দুম্বা বেচাকেনা হতো। দিনাজপুর, মালদুয়ার ও হরিপুরের জমিদারেরা নিজেদের মধ্যে মুনাফা নিতেন। কোনো কোনো মেলা পনের দিন স্থায়ী হতো। যেমন চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ থানার নবরতœ বিহারের চৈত্রসংক্রান্তির মহামুনি মেলা। আবার কোনো কোনো মেলা দুই মাসকাল স্থায়ীও হতো। এমন একটি হলো বিক্রমúুরের রাজনগরের কালবৈশাখীর মেলা। এই মেলা চৈত্রসংক্রান্তির দিন শুরু হয়ে জৈষ্ঠ মাসের শেষ দিন পর্যন্ত চলত। বিক্রমপুরের মেলাকে গলৈয়া বলে। মেলার আয়োজন হয় সাধারণত মন্দির বা দরগা-সংলগ্ন কোনো খোলা স্থানে। মেলায় স্থানীয় কৃষি ও কুটির-শিল্পজাত দ্রব্যাদির বেচাকেনা হয়। বেচাকেনা হয় মাটির, কাঠের ও লোহার নানা রকম আকর্ষণীয় খেলার জিনিস ও তৈজসপত্র, রসগোল্লা-জিলিপি-বাতাসা-কদমা-তিল্লা, মুড়ি-মুড়কি-খৈয়ের তৈরি নানা ধরনের খাবার জিনিস, ফল-ফলার ইত্যাদি। থাকে চিত্তবিনোদনের জন্য নাচ, গান, নাগরদোলা আর সঙের অভিনয়। খেলাধুলার মধ্যে থাকে লাঠিখেলা, কুস্তি, হাডুডু, দাঁড়িয়াবান্দা, বউছি, গোল্লাছুট প্রভৃতি গ্রামীণ খেলার প্রতিযোগিতা। মেলাস্থলে উন্মুক্ত মাঠে বা নদীর তীরে ওড়ে রংবেরঙের ঘুড়ি।

 

ঘুড়ি উৎসব

 

চৈত্রসংক্রান্তির একটি উৎসব হলো ঘুড়ি ওড়ানো। এটি পুরান ঢাকাবাসীর একটি ঐতিহ্যও বটে। সঙ্গে ছিল রমনার মাঠে ঘোড়ার রেস, মহল্লায় মহল্লায় হিজরা নাচ। রেস ও হিজরা খাট ছিল ঢাকার বাবু কালচারের অঙ্গ। এই বিষয়ে ড. আশরাফ সিদ্দিকী লিখেছেন, এ সংক্রান্তির দিন পূর্বে ঢাকার নবাব বাড়িতে ঘুড়ি ওড়ানো হতো, পর দিন নববর্ষে যাওয়া হতো চৈত মে পাককা, বৈশাখ মে খাও, যোভি মাঙ্গো সোভি পাও অর্থাৎ পূর্ব বছরের রান্না এ বছর খেলে শুভ হবে।

 

গরুর দৌড়

 

পহেলা বৈশাখে নববর্ষ উপলক্ষে কোনো কোনো স্থানে আয়োজন হতো গরুর দৌড় প্রতিযোগিতার। এই উপলক্ষে প্রাতঃকালে প্রত্যেক বাড়িতে হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সবাই গরুগুলোকে স্নান করাতেন। গরুর সিং সিন্দুর দিয়ে রঞ্জিত করতেন। গরুর গায়ে মাটির খুরি দিয়ে পিঠাগুলোর ছাপ দিতেন এবং গরুগুলোকে নিয়ে যেতেন প্রতিযোগিতায়। ড. এনামুল হকের ভাষায়, ‘নববর্ষের স্থানীয় অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে গরুর দৌড়ও অন্যতম। এ অনুষ্ঠানটি এখন একরূপ লোপ পেয়েছে। মাত্র বছর চল্লিশেক আগেও ঢাকা জেলার মুন্সীগঞ্জ মহকুমা ও তার সন্নিহিত অঞ্চলের গ্রামে গ্রামে পহেলা বৈশাখে এ অনুষ্ঠান সমারোহে উদযাপিত হতো। যে সমস্ত জায়গায় গরুর দৌড় হতো সেখানে ছোটখাটো মেলাও বসত। এদিন সংগতিসম্পন্ন গৃহস্থেরা তাদের হালের গরুর গায়ে রঙের ছোপ দিয়ে গলায় কড়ির মালা পরিয়ে সাজাতেন এবং গরুগুলোকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিযোগিতায় যোগ দিতেন।’

 

বাংলাদেশে বার মাসে তেরো পার্বণ। এই তেরো পার্বণের মধ্যে কয়টি পার্বণ ধর্মীয় আর কয়টি লোকায়ত তার হিসাব নিলে লোকায়তের দিকেই পাল্লা ভারী হবে। লোকায়ত পার্বণগুলোর মধ্যেও অবশ্য ধর্মীয় উপাদান অনুপস্থিত নয়। কিন্তু তা হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে উৎসবে অংশ করতে কখনো কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। এসব পালা-পার্বণের সঙ্গে সমাজের সবাই একাত্ম ছিল। সবাই মিলে আনন্দঘন পরিবেশে উৎসবমুখর ভাবে নতুন বছরকে বরণ করার রীতি ছিল এই বাংলায়।


প্রধান সম্পাদক : জ্যোতির্ময় নন্দী
প্রধান নির্বাহী :  জামাল হোসাইন মনজু

ব্যবস্থাপনা সম্পাদক :   অভ্র হোসাইন 

প্রকাশক ও চেয়ারম্যান : অর্ক হোসাইন

 

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় :

এপিক ইত্তেহাদ পয়েন্ট [লেভেল-৪]

৬১৮ নুর আহমদ রোড

চট্টগ্রাম-৪০০০।

Newsroom :

Phone : 01700 776620, 0241 360833
E-mail : faguntelevision@gmail.com

© ২০২২ Fagun.TV । ফাগুন টেলিভিশন কর্তৃক সর্বসত্ব সংরক্ষিত
Design & Developed by Smart Framework