প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাপী চলমান মন্দার উল্লেখ করে বলেছেন, এ নিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশে বিরোধীদের আন্দোলন হতে পারে, কিন্তু বাড়াবাড়ি দেশের ক্ষতির পাশাপাশি মানুষের কষ্ট বাড়াবে যেটি তাদেরও বোঝা উচিত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অপজিশন সহ নানা জনে নানা কথা বলবে, এর সুযোগ নেয়ারও চেষ্টা করবে।
কিন্তু তারা যদি এসব বেশি করতে যায় তাহলে এর প্রভাবেইতো মানুষের কষ্ট আরো বাড়বে।
এটাও তাদের বোঝা উচিত।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রোববার তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আটটি বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে আলোচনা সভায় দেয়া
ভাষণে আরো বলেন, ‘পরিস্থিতি
সামাল দেয়ার সামর্থ্য তাঁর সরকারের রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘তারা
(বিএনপি) আন্দোলন করে কতটুকু সফল হবে জানি না, কিন্তু তারা যেভাবে করতে চাচ্ছে
তাতে দেশের জন্য আরো ক্ষতি হবে। কিন্তু সেটা আমরা সামাল দিতে পারবো, সেই বিশ্বাস
আমার আছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিরোধী দল একটা সুযোগ পাচ্ছে, তারা
আন্দোলন করবে, করুক। আমি আজকেও নির্দেশ দিয়েছি খবরদার যারা আন্দোলন করছে তাদের
কাউকে যেন গ্রেফতার করা না হয় বা ডিষ্টার্ব করা না হয়। তারা প্রধানমন্ত্রীর অফিসও
ঘেরাও দেবে, আমি বলেছি হ্যাঁ, আসতে দেব। কেননা আমরা যে আন্তরিকতার সঙ্গে চেষ্টা
করছি দেশের কাজ করতে, দেশের মানুষ তো সেটা জানে।
সরকার প্রধান বলেন, মানুষের কষ্ট যে হচ্ছে, সেটা তাঁর সরকার উপলব্ধি
করতে পারছে বলেই প্রতিনিয়ত সেই কষ্ট লাঘবের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার সাথে সাথে দেশেও সমন্বয় করা হবে
বলে উল্লেখ করে তিনি আশা প্রকাশ করেন, দেশের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর
উৎপাদন শুরু হলে বর্তমান বিদ্যুৎ সমস্যাও অনেকটাই দূর হয়ে যাবে।
বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সমসাময়িক
সংকট কাটাতে বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হবার পাশাপাশি উৎপাদন কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে
তাঁর সরকারের পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী আবারো উৎপাদন বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন,
করোনা যেতে না যেতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে স্যাংশন এবং পাল্টা
স্যাংশন জনজীবনে সর্বনাশ ডেকে আনছে, যার ভুক্তভোগী হচ্ছে সারা বিশ্বের সাধারণ
জনগণ।
তিনি বলেন, ‘আমেরিকা
স্যাংশন দিলো রাশিয়াকে শায়েস্তা করার জন্য, কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে শায়েস্তা হচ্ছে
সাধারণ মানুষ। শুধু আমাদের দেশ বলে নয়, ইউরোপের দেশগুলো এমনকি আমেরিকা,
মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া-প্রত্যেকটি মহাদেশের
মানুষেরই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সব জিনিষের ওপরই এর একটা প্রভাব পড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আর
আমাদের কিছু লোক তো থাকেই, যারা অপ্রয়োজনেও জিনিষের দাম বাড়িয়ে দেয় ঐ ছুতা ধরে,
সেটাই হচ্ছে কিছু কিছু। না হলে এত দাম তো বাড়ার কথা নয়!’
তাঁর সরকার জনগণের কাছে দেয়া সকল প্রতিশ্রুতির সফল বাস্তবায়ন
ঘটিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যদি
এই করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং স্যাংশন ও পাল্টা স্যাংশন না হতো, তা হলে
আমাদের দেশ কখনই সমস্যায় পড়তো না। আমরা এগিয়ে যেতে পারতাম। কেননা যে ক্ষেত্রগুলো
আমাদের আমদানি-নির্ভর, সেখানেই সমস্যাটা দেখা দিচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী অনেকটা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘স্যাংশন দিয়ে লাভটা কি হলো! বাস্তবিক যদি লাভ কারো হয় তাহলে সেটা আমেরিকা এবং রাশিয়ারই হয়েছে। বিশ্ব বাজারে ডলার এবং রুবেলের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ।’
তিনি সংগঠনকে শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, 'যেকোন
দুর্যোগ-দুর্বিপাক যাই আসুক আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সবসময়
সজাগ থাকেন এবং মানুষের পাশে গিয়ে সকলের আগে দাঁড়ান। কাজেই সেই সংগঠনকে সুসংহত
করাটাই আমাদের লক্ষ্য।’