ঘূর্ণিঝড় মোখা'র কারণে পণ্য খালাস বন্ধ করে দিয়েছে দেশের
আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রায় ৯২ শতাংশ নিয়ন্ত্রক চট্টগ্রাম বন্দর। জেটিতে
অবস্থানরত বড় জাহাজ গুলোকে বহিনোঙ্গরে চলে যেতে বলা হয়েছে। লাইটার জাহাজ গুলোকে
কর্ণফুলী নদীর শাহ আমানত সেতু এলাকার দিকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
বন্দর সচিব ওমর ফারুক গণমাধ্যম-কর্মীদের বলেন, আমরা আগে থেকে
প্রস্তুতি নিয়েছি। সেই অনুযায়ী কাজ চলছে। কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। বড় জাহাজগুলো
বন্দর থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এগুলো ইঞ্জিন চালু রেখে বহিনোঙ্গরে থাকবে।
বন্দর সূত্রে আরো জানা যায়, আবহাওয়া অধিদপ্তর ৩ নম্বর সংকেত
জারি করলে বন্দর প্রথম পর্যায়ের সতর্কতা বা ‘অ্যালার্ট-১’ জারি করে। আবহাওয়া
অধিদপ্তর ৪ নম্বর সংকেত জারি করলে বন্দর অ্যালার্ট-২ জারি করে। বিপদ সংকেত ৫,৬ ও ৭
নম্বরের জন্য বন্দরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সতর্কতা অ্যালার্ট-৩ জারি করা হয়। মহাবিপদ
সংকেত ৮,৯ ও ১০ হলে বন্দরেও সর্বোচ্চ সতর্কতা বা অ্যালার্ট-৪ জারি করা হয়।
সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি হলে বন্দর জেটিতে অবস্থানরত জাহাজগুলোকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
এদিকে অতিপ্রবল হয়ে ওঠা ঘূর্ণিঝড় মোখা'র প্রভাবে চট্টগ্রামের
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ফ্লাইট প্রাথমিকভাবে ৪২ ঘণ্টা বন্ধ রাখার ঘোষণা
দেওয়া হয়েছে। ১৩ মে শনিবার ভোর ৬টা থেকে
আগামীকাল রবিবার রাত ১২টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে ফ্লাইটের ওঠানামা বন্ধ
থাকবে। আবহাওয়া পরিস্থিতি দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
১৩ মে শনিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিমানবন্দরের পরিচালক
গ্রুপ ক্যাপ্টেন তাসলিম আহমেদ। ঘূর্ণিঝড় মোখা'র কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে অ্যালার্ট-৪’ জারি করা
হয়েছে।
আজ সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ১৪ নম্বর বিশেষ
বিজ্ঞপ্তিতে আবহাওয়াবিদ মো.বজলুর রশীদ গণমাধ্যম-কর্মীদের জানান, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের
৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার, যা
দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। পূর্ব-মধ্য
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছাকাছি সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ
রয়েছে। এটি ক্রমশ বাংলাদেশের উত্তর-উত্তরপূর্ব উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে।
আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানা
যায়, ‘পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ উত্তর-উত্তরপূর্ব
দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আজ সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্র
বন্দর থেকে ৮১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ৭৪৫
কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৭৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণে
এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৭৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
ঘূর্ণিঝড়টি আরো উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে ১৪
মে রবিবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল
অতিক্রম করতে পারে। আজ সন্ধ্যা থেকে কক্সবাজার ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় অতি
প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হতে পারে।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয়
হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। তবে পায়রা ও
মোংলা সমুদ্র বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার,
চট্রগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ
ও চরসমূহ ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও
বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং
তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২
ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের
প্রভাবে উপকূলীয় জেলা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা এবং
তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট
অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছাসে প্লাবিত হতে পারে।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল
বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে এবং অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে
কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও
কোথাও ভূমিধস হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছধরা নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।