বঙ্গমাতার জীবন থেকে সারা বিশ্বের নারীরা শিক্ষা নিতে পারে


প্রকাশিত : সোমবার, ২০২২ আগস্ট ০৮, ০৯:৪৪ পূর্বাহ্ন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মহিয়সী নারী বঙ্গমাতার জীবন থেকে শুধু আমাদের দেশেরই নয়, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের নারীরাও এই শিক্ষা নিতে পারে যে, কিভাবে একটি দেশ ও দেশের মানুষের জন্য তিনি জীবনের সবকিছু ত্যাগ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি মনে করি আমাদের দেশের মেয়েরা শুধু নয়, পৃথিবীর অনেক মেয়েরাই তাঁর জীবনের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করতে পারে।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল ৭ আগস্ট সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বঙ্গমাতা: এ প্যারাগন অব ওমেন্স লিডারশিপ এন্ড ন্যাশন বিল্ডিং ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

তিনি একইসঙ্গে সেখানে ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা সেন্টার ফর জেন্ডার এন্ড ডেভেলপমমেন্ট স্টাডিজ’-এরও উদ্বোধন করেন।

আজ ৮ আগস্ট বঙ্গমাতার জন্মদিনকে সামনে রেখে বঙ্গমাতার অবদান এবং জীবন দর্শন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা সেন্টার ফর জেন্ডার এন্ড ডেভেলপমমেন্ট স্টাডিজ’ দুদিনব্যাপী এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছে।

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের এই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমার বাবার পাশে থেকে আমার মা এই সাহস দেখিয়েছেন যে, একজন মানুষ কিভাবে তার জীবনের সবকিছু ত্যাগ করেছিলেন একটি দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য।”

তিনি বলেন, বঙ্গমাতা সংসারের বিষয়ে, রাজনীতির বিষয়ে প্রতিটি ক্ষেত্রেই যখন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেটা আমাদের দেশের জন্য সবসময় সঠিক ও সময়োপযোগী প্রতীয়মান হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তিনি তাঁর জীবনটাও দিয়ে গেলেন।

তাঁর অত্যন্ত সাদাসিদে জীবনযাপনের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মা’র জীবনে কোন চাওয়া-পাওয়া ছিল না। তিনি নিজের জন্য কোনদিন কিছু চাননি। আমরা শুনিনি তিনি কোন আবদার করেছেন। তাঁর নিজের যেটুকু ছিল সবই তিনি বিলিয়ে দিতেন। দলের জন্য, মানুষের জন্য, গরীব আত্মীয় পরিবার-পরিজনের জন্য।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ. এস. এম. মাকসুদ কামাল ও উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহম্মদ সামাদ এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন।

বিশিষ্ট কথা সহিত্যিক এবং বাংলা একাডেমির সভাপতি ড. সেলিনা হোসেন অনুষ্ঠানে ‘জেন্ডার প্রেক্ষিতে বঙ্গমাতার জীবন দর্শন’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা সেন্টার ফর জেন্ডার এন্ড ডেভেলপমমেন্ট স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক ড. তানিয়া হক স্বাগত বক্তৃতা করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “দেশ ও স্বাধীনতার জন্য আমার বাবার যে সংগ্রাম, সেই সংগ্রামের সারথী ছিলেন আমার মা। সবসময় আমার মা সাহস যুগিয়েছেন। তবে দেশ ও মানুষের জন্য আমার মায়ের যে আত্মত্যাগ, তা খুব কমই উঠে এসেছে।”

তিনি বলেন, “আন্দোলন সংগ্রামের জন্য বাবা বেশিরভাগ সময় বাইরে থাকলেও কখনই বিরক্ত করতেন না। মা বলতেন, ‘আমি দেখবো, তুমি চিন্তা করো না’। সংসার সামলানোর পাশাপাশি জাতির পিতার অনেক সময়োচিত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও বঙ্গমাতার পরামর্শ নিতেন। এতে আন্দোলন-সংগ্রামে গতির সঞ্চার করেছিল।”

তিনি বলেন, “আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু কারাগারে থাকাকালে প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বা মুচলেকা দিয়ে আইয়ুব খানের ডাকা গোলটেবিলে যোগ দেয়া সর্ম্পকিত দলের কতিপয় নেতার সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে বঙ্গবন্ধুর কাছে বার্তা পাঠিয়ে অসাধারণ রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দেন বঙ্গমাতা।”

“তাঁর কথা ছিল, ‘মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, সকল আসামিকে মুক্তি দিতে হবে, মুক্ত মানুষ হিসেবেই শেখ মুজিবুর রহমান প্রেসিডেন্টের (পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান) সঙ্গে কথা বলতে যাবেন, বন্দি হিসেবে যাবেন না’,” তাঁর মায়ের এই উদ্ধৃতি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, তাঁর মা সে সময় তাঁকেই ডিক্টেশন দিয়ে জাতির পিতার কাছে (ক্যান্টনমেন্টের কারাগারে) পাঠিয়েছিলেন এবং তাঁর ইশারায় বাবা কাছে এলে মা’র সেই বার্তা পৌঁছে দেন তিনি। এজন্য সে সময়ের আওয়ামী লীগের অনেক বড় বড় নেতাদের থেকে তাঁর মা এবং তাঁকে দোষারোপ করা হয় কিন্তু তাঁর মা’র মধ্যে তখন তিনি যে দৃঢ় আত্মবিশ্বাস দেখেছিলেন, তা বাংলার মুক্তির সংগ্রামকে অনেকখানি এগিয়ে নিয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

৬ দফা ঘোষণার পর জাতির পিতা কারাগারে গেলে দাবি ৮ দফা করার জন্যও দলের ভেতরে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল, কিন্তু তাঁর মা ৬ দফাতেই অটল ছিলেন, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, যে ভাষণ আজকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে ইউনেস্কোর প্রামান্য দলিলে স্থান করে নিয়েছে এবং বাঙালি তাঁর মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সেই ভাষণ প্রদানের সময়ও তাঁর মা’র সুচিন্তিত পরামর্শ এবং জাতির পিতাকে আস্থা ও ভরসা দিয়েছিল বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর মা তখন তাঁর বাবাকে বলেছিলেন, “তুমি সারা জীবন সংগ্রাম করেছ। এদেশের মানুষ কী চায় তুমি জান। কাজেই তোমার মনে যেটা আসে তুমি সেটাই বলবা। কারো কথা শুনতে হবে না।”

১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যের সঙ্গে নির্মমভাবে হত্যা করার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “ঘাতক কারা? এরা তো আমাদের বাসায় অহরত যেত। আমার মা সবাইকে আপ্যায়ন করতেন। তারা ঘাতক হয়ে আসলো।”

বঙ্গমাতার সাহসিকতা ও ত্যাগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “যখন আমার আব্বাকে গুলি করলো, আমার মা কিন্তু জীবন ভিক্ষা চায়নি। এই পরিস্থিতিতে সাধারণত মানুষ নিজের জীবন ভিক্ষা চায়। আমার মা ভিক্ষা চাননি। মা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, উনাকে যখন হত্যা করেছো আমাকেও হত্যা করো। তখন ঘাতকের বুলেট তাঁকে কেড়ে নেয়।”

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, “মাতৃভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রাম, দেশের সব আন্দোলন-সংগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরাট অবদান রয়েছে। স্বাধীনতার পর দেশ গঠন এবং সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। আজকে আমরা যে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি, এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অবদান এই বিশ্ববিদ্যালয়ের। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসেবে গর্ববোধ করি। আমার পরিবারের প্রায় সবাই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন।”

নবগঠিত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা সেন্টার ফর জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ উদ্বোধনকালে সরকার-প্রধান বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার মায়ের জন্য যে সিদ্ধান্তটা নিয়েছে, সেজন্য আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই, কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনাদের এ উদ্যোগ সফল হোক। আশ্বাস দিচ্ছি, আমার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো।”


প্রধান সম্পাদক : জ্যোতির্ময় নন্দী
প্রধান নির্বাহী :  জামাল হোসাইন মনজু

ব্যবস্থাপনা সম্পাদক :   অভ্র হোসাইন 

প্রকাশক ও চেয়ারম্যান : অর্ক হোসাইন

 

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় :

এপিক ইত্তেহাদ পয়েন্ট [লেভেল-৪]

৬১৮ নুর আহমদ রোড

চট্টগ্রাম-৪০০০।

Newsroom :

Phone : 01700 776620, 0241 360833
E-mail : faguntelevision@gmail.com

© ২০২২ Fagun.TV । ফাগুন টেলিভিশন কর্তৃক সর্বসত্ব সংরক্ষিত
Design & Developed by Smart Framework