আমাদের রাষ্ট্রকে একটি বিতর্ক, ন্যায় এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ হিসেবে গড়ে তুলতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ন্যায়, জ্ঞান এবং যুক্তিভিত্তিক সমাজ গঠন করতে হলে সমাজে বিতর্ক থাকতে হবে। বিতর্ক যদি না থাকে ন্যায়ভিত্তিক গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা গঠন সহজ হয় না। ২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার দুপুরে বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রে আয়োজিত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে প্রথম জাতীয় টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এ কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ টেলিভিশনের আয়োজনে এই যে বিতর্ক প্রতিযোগিতা ধারাবাহিকভাবে আয়োজন করা হচ্ছে এতে বিতর্ক ও যুক্তিভিত্তিক এবং গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে সহায়ক হবে। বাংলাদেশ টেলিভিশন অনেকদিন বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করেনি। প্রধানমন্ত্রী আমাকে এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়ার পর জিজ্ঞেস করলাম কেন বিতর্ক প্রতিযোগিতা বন্ধ করে দেয়া হলো। তখন আমাকে টেলিভিশনের কর্মকর্তারা বললেন, সরকারেরও অনেক সমালোচনা হয়, সেজন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আমি বললাম, সমালোচনা তো হতে হবে। সরকারেরও সমালোচনা হতে হবে।
ড. হাছান মাহমুদ আরও বলেন, সমালোচনাবিহীন সমাজ হতে পারে না। সমাজে সমালোচনা থাকতে হবে, দায়িত্বে যারা থাকবে তাদের সমালোচনা অবশ্যই হবে। দায়িত্বে না থাকলে তো সমালোচনা নাই। বিতর্ক হতে হবে, তাহলেই সমাজ এগিয়ে যাবে। তখন আমি সিদ্ধান্ত দিলাম বিটিভি’র দুটি কেন্দ্রে বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করার।
বিতর্ক প্রতিযোগিতার ফাইনাল রাউন্ডের বিষয় ছিল ‘শুদ্ধাচার ও নৈতিকতা গঠনে পরিবারের চেয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকাই বেশি।’ প্রতিযোগিতার আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, আসলে নৈতিকতা এবং শুদ্ধাচার সুষ্ঠু সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাস্তবিক অর্থে সমগ্র বিশ্বব্যাপী মানুষ প্রচণ্ডভাবে যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে। যন্ত্রের ব্যবহারের সাথে সাথে মানুষও যন্ত্রের মত জড় পদার্থ হয়ে যাচ্ছে এবং সেটির সাথে নৈতিকতা এবং মানবিকতাও লোপ পাচ্ছে। এটি সমগ্র বিশ্বব্যাপী একটি সমস্যা। মানবজাতিকে যদি টিকিয়ে রাখতে এ সমস্যা থেকে উত্তরণ প্রয়োজন। তিনি বলেন, মানুষ যদি যন্ত্রের মত জড় পদার্থ হয়ে যায়, নৈতিকতা এবং মানবিকতা হারিয়ে যায়, তাহলে তো মানুষ আর মানুষ থাকে না। এক্ষেত্রে এখানে পরিবার এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুটির’ই ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারো চেয়ে কারো ভূমিকা কম নয়।
বিজয়ী এবং রানার-আপ দুই দলকে অভিনন্দন জানিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, যারা আজকে এই বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে তাদের মধ্যে যে দক্ষতা ও কনফিডেন্স তৈরি হয় জীবনে চলার পথে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ তাদেরকে বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক সোহরাব হোসেনের সভাপতিত্বে চট্টগ্রাম কেন্দ্রের স্টুডিওতে আয়োজিত বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম.এ মালেক, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার আশরাফ উদ্দিন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার মাহফুজা আক্তার।
অনুষ্ঠানশেষে বিতর্ক প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বের বিজয়ী দল বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় ও রানার-আপ দল জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রতিযোগীদের হাতে ট্রফি ও সম্মাননার চেক তুলে দেন মন্ত্রী। পরে বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিল্পী ও কলাকুশলীদের সুবিধার্থে সংস্কারশেষে পুনরায় বিটিভি ক্যাফেটেরিয়ার উদ্বোধন করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী।
- অ.হো