ঘূর্ণিঝড়
সিত্রাংয়ের প্রভাবে সৃষ্ট প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া এবং জলোচ্ছ্বাসে চট্টগ্রাম নগর এবং উপকূলীয়
উপজেলার ৬৬টি ইউনিয়নের ৫,৭৬০টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৯৬টি সম্পূর্ণ বিলীন
হয়েছে। দুর্গত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৫৮,৫৭২ জন।
চট্টগ্রাম
জেলা প্রশাসন সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গিয়েছে। তবে বেসরকারি হিসেবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে
পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কেবল শহরের পতেঙ্গাতেই কয়েকশ ঘর তলিয়ে গেছে জোয়ারের পানিতে।
এদিকে
নগরের চান্দগাঁও মোহরায় মোবারক হোসেন নামে একজন মারা গেছেন। সিত্রাংয়ের প্রভাবে বাড়তে
থাকা জোয়ারের পানি সোমবার রাত আড়াইটার দিকে ঢুকে যায় মোহরা এলাকার বিভিন্ন বাসাবাড়িতে।
ওই এলাকার মৃত নুর আলমের বাসায়ও পানি ঢোকে। এ সময় সবাই ঘরের আসবাবপত্র সরানোর চেষ্টা
করছিল। হঠাৎ পানিতে বিদ্যুৎ ছড়িয়ে পড়লে মোবারকসহ তাদের ঘরের চারজন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন।
পরে তাদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক
মোবারককে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় আহত হন মোবারকের ভাই মো. সালাউদ্দিন, তার স্ত্রী
রাশেদা বেগম ও ছোট ভাই মো. সাদ্দাম। এর মধ্যে সাদ্দামকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে
দেওয়া হলেও বাকি দুজন হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
এছাড়া
সীতাকুণ্ডে জোয়ারের পানিতে ভেসে আসে এক শিশুর লাশ। মীরসরাইয়ে বঙ্গোপসাগরে বালুর ড্রেজার
ডুবে ৮ জন নিখোঁজ হওয়ার পর এক শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকটি জায়গায়
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেড়িবাঁধ। উপজেলায় জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে লোকালয় এবং ফসলি জমি,
লবণ মাঠ ও মাছের ঘের। নগরের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জসহ অনেক নিচু এলাকাও তলিয়ে গেছে সোমবার
রাতে। সব মিলিয়ে প্রাণহানি কম হলেও কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে চট্টগ্রামে। এদিকে
সীতাকুণ্ডে জোয়ারের পানিতে সন্দ্বীপের চরাঞ্চল থেকে ভেসে আসে কয়েকশ মহিষ।
জেলা
ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সজীব চক্রবর্তী জানান, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ৮০০ প্যাকেট
শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে এবং ২১ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৩ লাখ
৮০ হাজার নগদ অর্থও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পতেঙ্গায় জেলেপল্লীতে ২ মেট্রিক টন চাল এবং
ভিজিএফ কার্ডের চাল আজ বিতরণ করা হবে।
এদিকে সোমবার রাতে জোয়ারের পানিতে পাথরঘাটা আশরাফ আলী সড়ক, বাকলিয়া, ডিসি রোড, বাড়ইপাড়া, চকবাজার, চান্দগাঁও, নিমতলা, মাইজপাড়া, হালিশহরের পুরোনো ডাকঘর, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা তলিয়ে গেছে। কোনো কোনো এলাকায় কোমর সমান পানি ছিল। পানিবন্দী এলাকার লোকজনের নির্ঘুম রাত কেটেছে।