এর আগে পাঁচবার বিশ^কাপে সেমিফাইনালে খেলে
প্রতিবারই জয় নিয়ে ফাইনালে যাওয়া আর্জেন্টিনা তাদের শেষ চারের জয়ের রেকর্ড ধরে
রেখেছে। লুইসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে আজ অনুষ্ঠিত
প্রথম সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে ৩—০
গোলে পরাজিত করে ষষ্ঠবারের মত ফাইনাল নিশ্চিত করেছে আর্জেন্টিনা। ম্যাচে দুই গোল করেছেন
জুলিয়ান আলভারেজ। বাকি গোলটি এসেছে লিওনেল মেসির পেনাল্টি থেকে।
দুটি পরিবর্তন নিয়ে আজ মাঠে নেমেছিল আর্জেন্টিনা।
মূল একাদশে আর্জেন্টাইন কোচ লিওনেল স্কালোনি ফিরিয়ে এনেছেন মিডফিল্ডার লিয়ানড্রো
পারেডেস ও ডিফেন্ডার নিকোলাস টাগলিয়াফিকোকে। দ্বিতীয় হলুদ কার্ডের জন্য নিষেধাজ্ঞায়
থাকা লেফট—ব্যাক মার্কোস
এ্যাকুনার স্থানে টাগলিয়ফিকোকে ও সেন্টার—হাফে
লিসান্দ্রো মার্টিনেজের জায়গা পারেডেসকে সুযোগ দেয়া হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে আর্জেন্টাইন
কোচ পাঁচজনের ডিফেন্সের পরিবর্তে চারজনকে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সাথে একজন উইং—ব্যাক । নেদারল্যান্ডের বিরুদ্ধে পেনাল্টি
শুট আউটে জয়ের কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচটিতে এই ফর্মেশন ব্যবহার করেই সফল হয়েছিল
আর্জেন্টিনা। ডাচদের সাথে যে আক্রমনভাগ ছিল সেই ফরোয়ার্ড লাইনের উপরই ভরসা করেছেন
স্কালোনি। মেসির সাথে কিছুটা পিছিয়ে খেলেছেন জুলিয়ান আলভারেজ। অভিজ্ঞ এ্যাঞ্জেল ডি
মারিয়া যথারীতি সাইড বেঞ্চেই ছিলেন।
এদিকে ক্রোয়েশিয়ান কোচ জস্নাটকো ডালিচ
শেষ আটে পেনাল্টিতে ব্রাজিলকে যে দল নিয়ে পরাজিত করেছিলেন সেই মূল দলটির উপরই ভরসা
রেখেছেন। সেন্ট্রাল স্ট্রাইকার হিসেবে আজও খেলতে নেমেছেন আন্দ্রেজ ক্রামারিচ। শেষ আট—এঅতিরিক্ত সময়ে যার গোলে ম্যাচটি পেনাল্টি
পর্যন্ত গড়িয়েছিল সেই ফরোয়ার্ড ব্রুনো পেটকোভিচকে বদলী বেঞ্চেই রেখেছেন ডালিচ।
এই ম্যাচের মাধ্যমে আর্জেন্টাইন সুপার স্টার লিওনেল মেসি বিশ্বকাপে
জার্মান সাবেক তারকা লোথার ম্যাথুজের সর্বোচ্চ ২৫টি ম্যাচে মূল একাদশে খেলার রেকর্ড
স্পর্শ করেছেন।
আর্জেন্টিনার যেখানে ৪—৪—২
ফর্মেশনে দল সাজিয়েছে সেখানে ক্রোয়েশিয়া আজ খেলেছে ৪—৩—৩
ফর্মেশনে। ৩ মিনিটে নাহুয়েল মোলিনা বাম দিক থেকে বোর্না সোসাকে পরাস্ত করে বক্সের
ভিতর বিপদজনক একটি ক্রস দিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে আর্জেন্টাইন কোন খেলোয়াড় ছিলেন
না। ১৩ মিনিটে ডিবক্সের ঠিক বাইরে মাস্কম্যান জাসকো গাভারডিওল মেসিকে ফেলে দিলে ইতালিয়ান
রেফারি ড্যানিয়েল ওরসাতো তাতে কোন সাড়া দেননি। ১৫ মিনিটে ম্যাচের প্রথম কর্ণার আদায়
করে নেন লুকা মড্রিচ। ক্রোয়েশিয়ার সংঘবদ্ধ রক্ষভাগকে প্রথমবারের মত ভাঙ্গতে সক্ষম
হয় আর্জেন্টিনা। বক্সের ভিতর অবশ্য বল পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেননি মেসি। ২৫ মিনিটে
ফার্নান্দেজের কার্লিং শট বামদিকে ঝাপিয়ে পড়ে রক্ষা করেন ক্রোয়েশিয়ান গোলরক্ষক
ডোমিনিক লিভাকোভিচ। ৩২ মিনিটে থ্রু বল থেকে ডি বক্সের ভিতর ঢুকে পড়া আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার
আলভারেজকে আটকাতে ফাউল করে বসেন লিভাকোভিচ। এই ফাউলে লিভাকোভিচকে হলুদ কার্ডও দেখতে
হয়েছে। ফাউলের কারনে প্রাপ্ত পেনাল্টি স্পট থেকে বাম পায়ের জোড়ালো শটে মেসি আর্জেন্টিনাকে
এগিয়ে দেন (১—০)। এনিয়ে এবারের
আসরে পেনাল্টিতে তৃতীয় গোল করলেন এলএমটেন, সব মিলিয়ে তার গোলসংখ্যা পাঁচটি। পাশাপাশি
বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ সর্বোচ্চ ১১ গোলেরও রেকর্ড গড়েন মেসি। ৩৯ মিনিটে ক্রোয়েশিয়ার একটি
কর্ণার ক্লিয়ার করে কাউন্টার এ্যাটাক থেমে মেসি হাফ লাইনের কিছু আগে থেকে বল বাড়িয়ে
দেন আলভারেজের দিকে। তরুণ এই স্ট্রাইকার মধ্যমাঠ থেকে বল নিয়ে এগিয়ে গিয়ে ডিফেন্ডার
সোসাকে কাটিয়ে জোড়ালে শটে বল জালে জড়ালে ব্যবধান দ্বিগুন হয় (২—০)। এনিয়ে টানা পাঁচ ম্যাচে আর্জেন্টিনা
২—০ গোলের লিড
নিল। দুই মিনিট পর ডি পল বক্সের ঠিক আগে থেকে শট নিলে তা গাভারডিওলের হাতে লাগলেও রেফারির
চোখ এড়িয়ে যায়। ৪২ মিনিটে কর্ণার থেকে ম্যাক এ্যালিস্টারের হেড দুর্দান্ত দক্ষতায়
রুখে দিয়ে লিভাকোভিচ তার আগের ভুল দুটি কিছুটা হলেও শোধরাতে চেষ্টা করেছেন। দুই গোলে
এগিয়ে থেকে হঠাৎ করেই ম্যাচের চেহারা পাল্টে দেয় আর্জেন্টিনা। প্রথমার্ধের ইনজুরি
টাইমে ডানদিক থেকে জোসিপ জুরানোভিচের শট আটকে দেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ।
ম্যাচে ফিরে আসার তাগিদে ডালিচ দুটি পরিবর্তন
নিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে খেলতে নামেন। লেফট—ব্যাক
সোসার জায়গা ফরোয়ার্ড মিসলাভ ওরসিচ ও মারিও পাসালিচের জায়গা মাঠে নামেন নিকোলা ভস্নাসিচ।
৫০ মিনিটে আবারো খেলোয়াড় পরিবর্তন করে ম্যাচে
ফিরে আসার চেষ্টা করেন ডালিচ। এবার ব্রোজোভিচের জায়গায় মাঠে নামেন সেন্টার—ফরোয়ার্ড পেটকোভিচ। গোলের জন্য মরিয়া
হয়ে ওঠা ক্রোয়েশিয়া আক্রমনভাগকে শক্তিশালী করতে খেলোয়াড় পরিবর্তন করতে থাকে। পরিবর্তিত দল নিয়ে
পরপর দুটি আক্রমনও করেছিল ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু মার্টিনেজ ও নিকোলাস ওটামেন্ডির যৌথ
প্রচেষ্টায় সেগুলো ব্যর্থ হয়। ৫৮ মিনিটে আলভারেজের সাথে বল আদান প্রদান করে মাত্র
১০ গজ দুরে থেকে মেসির শট আটকে দিয়ে লিভাকোভিচ আরো একবার ক্রোয়েটদের রক্ষা করেন।
৬৯ মিনিটে ডানদিক থেকে মেসির দুর্দান্ত এ্যাসিস্টে আলভারেজ পোস্টের খুব কাছে থেকে বল
জালে জড়ান (৩—০)। ফাইনালের
কথা মাথায় রেখে স্কালোনি ৭৫ মিনিটে আলভারেজকে মাঠ থেকে উঠিয়ে তার পরিবর্তে পাওলা
দিবালাকে নামান।
দুই গোল করা আলভারেজের মাঠত্যাগের মধ্য
দিয়ে ১৯৫৮ সালে সেমিফাইনালে পেলের করা হ্যাটট্রিকের রেকর্ড সুরক্ষিত থাকলো। তবে কাল
ফ্রান্স ও মরক্কোর মধ্যে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে পেলের এই কৃতিত্ব ছাড়িয়ে যাবার সুযোগ
থাকবে।
এই পরাজয়ের পরেও অবশ্য ক্রোয়েশিয়ার
বিশ^কাপ শেষ হয়ে যায়নি। আগামীকাল দ্বিতীয় সেমিফাইনালে পরাজিত দলটির বিপক্ষে তৃতীয়
স্থান নির্ধারনী ম্যাচে জয়ী হয়ে গতবারের রানার্স—আপরা
হয়তো সান্তনা খেঁাজার চেষ্টা করবে।