চট্টগ্রামের সাগর
বেষ্টিত দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের চারপাশে রয়েছে বিপুল পরিমাণ কৃষি জমি। বিশেষ করে সন্দ্বীপের
মগধরা, বাউরিয়া, গাছুয়া, মাইটভাঙ্গা, কালাপানিয়া, দীর্ঘাপাড় ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের ভিতরে
ও বাইরে বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এলাকায় বিশাল এলাকা জুড়ে চাষাবাদ হয়। তবে সেচের অভাবে সন্দ্বীপে
এসব জমিতে কৃষকেরা সারাবছর আশানুরূপ ফসল ফলাতে পারছেন না। শুধু বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির
প্রাকৃতিক সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে যতটুকু পারা যায় ধান চাষ করেন স্থানীয় কৃষকেরা। এরপর
শুষ্ক মৌসুমে সেচ সুবিধা না থাকায় পানির অভাবে মৌসুমি সবজি-ফল চাষে ক্ষতির সম্মুখীন
হন তারা। যেসব বীজ বপন করা হয় পানির অভাবে একটা সময় এসব গাছ হয় মরে যায় নাহয় আশানুরূপ
সাফল্য পাওয়া যায় না। ফলে তারা বিরাট আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন।
সন্দ্বীপের বাউরিয়া
ইউনিয়নের কুচিয়ামোড়া এলাকায় বিশাল এলাকা জুড়ে জমি চাষাবাদ করেন স্থানীয় কৃষক মোহাম্মদ
জামাল উদ্দিন ছোটন। তিনি জানান, আমি নিজ জমি ও সাথে অন্যদের জমি বর্গা নিয়েছি চাষাবাদের
জন্য। তবে সেচের অভাবে বছরে প্রায় ৫/৬ মাস আশানুরূপ চাষাবাদ করতে পারিনা। এতেকরে বিশাল
আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয় আমাকে। বর্গা নেয়া জমিগুলো প্রতি ১ শত ৬০ শতকে প্রায় ৮
থেকে ১০ হাজার টাকা দিতে হয় বলে জানান কৃষক ছোটন। এর সাথে রয়েছে শ্রমিকের উচ্চ পারিশ্রমিক।
পর্যাপ্ত চাষাবাদ না হওয়ায় লাভ হওয়াতো দূরের কথা আসল টাকাই উঠে আসেনা বলে জানান তিনি।
একই অভিযোগ করেন স্থানীয় কৃষক মো. জাহাঙ্গীর, মো. জামশেদ, নজরুলসহ অনেকে। এছাড়া রয়েছে
স্থানীয় কৃষি অফিসের বিরুদ্ধে বীজ, প্রণোদনা ও কৃষি অফিসের কর্তাদের সাক্ষাৎ না পাওয়াসহ
নানান অভিযোগ ।
সন্দ্বীপ উপজেলা
কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার (বিসিএস কৃষি) মো. মেজবাহুল করীম কৃষকদের অভিযোগের বিষয়ে জানান,
আসলে সন্দ্বীপে পর্যাপ্ত সেচ সুবিধার অভাব রয়েছে। তবে এ বিষয়টা দেখার দায়িত্ব বাংলাদেশ
কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি)। আমরা সন্দ্বীপের সেচ ব্যবস্থার সমস্যার কথা বিএডিসিকে
জানিয়েছি। তবে এ সমস্যা সমাধানের জন্য তাদের পক্ষ থেকে এখনো দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ নেয়া
হয়নি বলে জানান এ কর্মকর্তা। এছাড়া তিনি জানান
সন্দ্বীপে ৬ টি খালকে সংস্কার করে পানি ধরে রাখার জন্য সিলেক্ট করা হয়েছে। তবে এ কাজ
এখনো আলোর মুখ দেখেনি, পরিকল্পনাতে সীমাবদ্ধ। সন্দ্বীপের সেচ ব্যবস্থা নিয়ে বিএডিসির
উদাসীনতার কথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন বলে যোগ করেন তিনি। কৃষকদের বীজসহ অন্যান্য
অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন ৫ হাজার কৃষকের মধ্যে সবাইকে তো দেয়া সম্ভব না। তাছাড়া কৃষি
অফিস কোন বীজ সরবরাহ করে না। প্রকল্পের আওতায়
বীজ সার এসব প্রণোদনা দিয়ে থাকে।
এদিকে আরিফুজ্জামান নামের আরেক কৃষক জানান, বিএডিসির (সন্দ্বীপ অঞ্চল) দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে নিজেদের খরচে সন্দ্বীপ এনে সেচ ব্যবস্থার প্রকৃত চিত্র সরেজমিনে দেখিয়েছেন। অথচ প্রায় চার মাস অতিবাহিত হলেও সেচ সমস্যার কোন অগ্রগতি হয়নি বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন তিনি।
- ওমর ফয়সাল/সন্দ্বীপ