কর্মযজ্ঞ শুরুর
পর চট্টগ্রামের মিরসরাই বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক অঞ্চলের সাথে চট্টগ্রামের সহজ যোগাযোগের
জন্য মেরিনড্রাইভ সড়ক নির্মাণকাজ শুরু হয়। এ সড়কের জন্য সৃষ্ট বাঁধের কারণে বিশাল এলাকাজুড়ে
সমুদ্রধারে সৈকত সৃষ্টি হয়। চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার দক্ষিণে সীতাকুন্ড সীমান্তে
অবস্থিত এই স্থানের নাম ‘ডোমখালী সমুদ্র সৈকত’।
স্থানীয়ভাবে ‘ডোমখালী বিচ’ নামেও পরিচিত
এটি। সাগরের সঙ্গে মিশে যাওয়া ছোট ছোট খালের অবিরাম বয়ে চলা আর পাখিদের কলকাকলীতে মুখর
এক অনিন্দ্যসুন্দর সৈকত। বাঁধের পূর্বে গ্রামীণ জনপদ। উপজেলার শাহেরখালী ইউনিয়নে এই
সৈকতের আবিষ্কার করেছে স্থানীয় ভ্রমণ প্রেমীরা। মিরসরাই থেকে এই সৈকতের দুরত্ব প্রায়
৪ কিলোমিটার।
ঢাকা-চট্টগ্রাম
মহাসড়কের বড়দারোগা হাট বাজার পেরিয়ে পশ্চিমে বেড়িবাঁধ সড়ক অতিক্রম করলেই দেখা মিলবে
কাঙ্খিত ডোমখালী সৈকতের। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের পশ্চিম পাশেই সৈকতের অবস্থান।
সৈকতে পা রাখতেই এক অন্য অনুভব - সমুদ্রের গর্জন আর দখিনা মিষ্টি হাওয়ার শীতল পরশ।
উত্তরে সৈকত সংলগ্ন বেড়ি বাঁধ, দক্ষিণে দেখা মিলবে সবুজ বেষ্টনীর কেওড়া বাগান। যেখানে
রয়েছে মায়াবী হরিণসহ নানা প্রজাতির বন্য প্রাণী। পশ্চিমে শুধু সাগর আর সাগর। তবে সাগরে
বড় কোন ঢেউ নেই। ফলে সৈকতে সাগরের ঢেউয়ের আছড়ে পড়ার মনোরম দৃশের সাথী হওয়া যাবে না।
এদিকে সমুদ্র
কিনারে বাঁধা রয়েছে সারি সারি ডিঙ্গি নৌকা। কিছু নৌকা নিয়ে জেলেরা সাগরের বুকে মাছ
ধরতে যায়। কিছু নৌকায় চড়ে দর্শনার্থীরা সাগরে ঘুরে বেড়ান। এছাড়াও দর্শনার্থী ও স্থানীয়
দস্যি ছেলেরা সাগরের স্বচ্ছ পানিতে লম্পজম্প করে আনন্দে আত্মহারা। এমন অনিন্দ্য সুন্দর
সৈকতে প্রতিদিন ছুটে যাচ্ছেন অসংখ্য পর্যটক।
শুধু দিনে নয়,
এখানে দাঁড়িয়ে সন্ধায় সূর্য অস্তমিত হওয়ার দৃশ্যও অন্যরকম অনুভব করার মত। সূর্যডোবার
দৃশ্যের সাথে নিজেকে ক্যামরার ক্লিকে ছবির ফ্রেমে বন্দি করছেন অনেকে। এছাড়া সন্ধা রাতেও
সাগর পাড়ে দেখা মেলে কোলাহল মুক্ত সাগরের খোঁজে ছুটে চলা ভ্রমনপিপাসুদের।
ডোমখালীর পুরোনো
স্লুইচগেট থেকে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে সাগরের মোহনায় নির্মাণ করা হয়েছে আরো ১ টি নতুন
স্লুইচগেট। যা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হবে সাগরের পানি। স্লুইচগেট ঘেঁষে সাগর থেকে মাছ
নিয়ে ফেরা জেলেদের ব্যস্ততা। কেউ জাল বোনে অবসরে, কেউ সাগরে নৌকা ভাসায়। এসব প্রাকৃতিক
সৌন্দর্যে মুগ্ধ হবেন যে কেউ।
সৈকতে কথা হয়
পর্যটক জুয়েলের সাথে তিনি বলেন, ‘মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলকে কেন্দ্র করে
এমন একটি সৈকত গড়ে উঠছে তা ভাবতেই ভালো লাগছে। কোলাহল মুক্ত, দখিনা বাতাস, পাখির কলকাকলী,
সমুদ্রের তাজা মাছ, কেওড়া বাগান আর নৌকা ভ্রমণ সত্যিই অসাধারণ।’ তবে যাতায়াত
ব্যবস্থা আরো উন্নত হলে ভালো হতো।’
স্থানীয় ১৬ নং
সাহেরখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুল হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক
অঞ্চলের সঙ্গে নির্মিতব্য মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাঁধের কারণে বিশাল এলাকাজুড়ে এ সমুদ্র
সৈকতের সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যে পর্যটকরা আসছেন এখানে। মেরিন ড্রাইভ এখনো পুর্নাঙ্গ
নির্মাণ হয়নি। কাজ শেষ হলে সৈকতের সৈৗন্দর্য আরো বেড়ে যাবে। এটি পর্যটন হিসেবে স্বীকৃত
হলে সরকার এখান থেকে অনেক রাজস্ব পাবে’।
দেশের যে কোনো স্থান থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বড়দারোগাহাট থেকে সিএনজি অটোরিক্সায় সাগরপাড়ে যাওয়া যাবে। ভাড়া জনপ্রতি ৪০ টাকা। মোটরসাইকেলেও যাওয়া যায়। সৈকত এলাকায় থাকা-খাওয়ার জন্য কোনো রেস্টুরেন্ট বা আবাসিক হোটেল গড়ে ওঠেনি এখনও। ফলে পর্যাপ্ত খাবার ও পানীয় জল সাথে নিয়ে আসতে হবে এবং সন্ধার সাথেসাথেই ফিরতে হবে।
- নাছির উদ্দিন/মিরসরাই