প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ
বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে প্রতিবেশী কূটনীতির রোল মডেল বলে অভিহিত করে
আশা প্রকাশ করছেন যে, বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে সমাধান করা অন্যান্য অনেক
সমস্যার মতোই তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তিসহ সকল অমীমাংসিত সমস্যা শিগগিরই সমাধান
হবে।
তিনি বলেন, ‘আমি পুনর্ব্যক্ত করছি যে, ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং ঘনিষ্ঠতম
প্রতিবেশী। বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক প্রতিবেশী কূটনীতির রোল মডেল হিসেবে
পরিচিত।’
গতকাল মঙ্গলবার নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে বাংলাদেশের
প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর
মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা এবং দুই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে স্বাক্ষরিত
সাতটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) বিনিময় প্রত্যক্ষ করার পর, জারি করা এক যৌথ বিবৃতিতে
প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেছেন, গত এক দশকে উভয়
দেশই বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। ‘দুটি দেশ বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার চেতনায় অনেক অমীমাংসীত ইস্যু সমাধান করেছে
এবং আমরা অবিলম্বে তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি দ্রুত স্বাক্ষর করাসহ সকল অমীমাংসীত
বিষয়ের সমাধান আশা করছি।’
দুদেশের মধ্যে কুশিয়ারা নদীর
পানি বণ্টন নিয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,
তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিসহ ৫৪টি অভিন্ন নদ-নদীর পানি বণ্টনের মতো সব সমস্যার
সমাধান করা হবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী
নরেন্দ্র মোদি তাঁর বিবৃতিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ভূয়সী প্রশংসা করেন।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের স্বার্থে আগামী দিনগুলোতে
ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অসাধারণ উন্নয়ন করেছে। দুই ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীর জনগণের
স্বার্থে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করবে।
মোদি বলেন, সবচেয়ে বড় বাণিজ্য
ও উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে ভারত দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক আরো জোরদার করতে কাজ করবে।
আনুষ্ঠানিক আলোচনার সময় তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পানি
সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং সংযোগ থেকে নিরাপত্তা পর্যন্ত বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক
ও বহুপাক্ষিক বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন,
ভারতের দক্ষিণ আসাম ও বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে বন্যা লাঘবের উদ্যোগ নিয়েও আলোচনা
হয়েছে। সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ মোকাবেলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, একাত্তরের চেতনায়
সব ধরনের সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ মোকাবেলায় উভয় দেশ একসঙ্গে কাজ করবে।
সফর সম্পর্কে তিনি বলেন, দুদেশের
স্বাধীনতা উৎসবের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর হচ্ছে, যা অত্যন্ত
তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশকে ভারতের অত্যন্ত বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে আখ্যায়িত করে মোদি
বলেন, ‘আমার পূর্ণ বিশ্বাস যে, আগামী ২৫ বছরে ভারত ও বাংলাদেশের বন্ধুত্ব নতুন
উচ্চতায় পৌঁছে যাবে।’
তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে
প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সময়কালে আমাদের দুদেশের জনগণের
মধ্যে সম্পর্কের ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি ও
ভারতের প্রধানমন্ত্রী আরেক দফা ফলপ্রসূ আলোচনা শেষ করেছেন এবং এর ফলাফল উভয় দেশের
জনগণের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে বৈঠক করেছি। আগামী দিনগুলিতে
আমাদের সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে আমরা দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাপক বিষয় নিয়ে
আলোচনা করেছি।’
তিনি আরো বলেন, আলোচনার সময়
তাঁরা অঙ্গীকার বাস্তবায়নের সম্ভাব্য উপায়গুলি সম্পর্কে এবং পারস্পরিক কল্যাণের
লক্ষ্যে একে অপরের অগ্রাধিকারগুলিকে গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর
দিয়েছেন।
হাসিনা বলেন, ‘সংযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা, সীমানা
এবং লাইন অব ক্রেডিট সম্পর্কে আমরা আলোচনা করেছি।’
তিনি উল্লেখ করেন যে, গত ৫০
বছরে একটি শক্তিশালী অংশীদারিত্ব তৈরি করে উভয় দেশ পারস্পরিক স্বার্থে ক্রমবর্ধমান
ব্যাপক বিষয়ে কাজ করছে। তিনি বলেন, ‘আমি এবং
প্রধানমন্ত্রী মোদি আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে এবং আমাদের দুই দেশে
এবং এ অঞ্চলে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য সহযোগিতামূলক
প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ও
ভারত যদি অংশীদার হিসেবে একসঙ্গে কাজ করতে পারে, তাহলে এটি শুধু দেশ দুটির জন্যই
নয়, বরং সমগ্র অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী
বলেন, ৫৪টি অভিন্ন নদী এবং চার হাজার কিলোমিটার সীমান্ত বেষ্টিত বাংলাদেশ ও ভারত
দুদেশের জনগোষ্ঠীর সম্মিলিত কল্যাণে বদ্ধপরিকর।
তিনি বলেন, আজ দিনের শেষভাগে
তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি এবং
উপ-রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাত করবেন বলে আশা করছেন।
তিনি আরো বলেন, তিনি ১৯৭১-এ
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বা গুরুতর আহত ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনীর
সৈনিক/কর্মকর্তাদের সরাসরি বংশধরদের ‘মুজিব
বৃত্তি’ প্রদান করবেন। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকার ও জনগণের অমূল্য
সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা লাভের পর থেকে, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক অভিন্ন ইতিহাস ও সংস্কৃতি,
পারস্পরিক আস্থা ও শ্রদ্ধা, দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব এবং অব্যাহত সহযোগিতায় জোরদার
হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসময়
নরেন্দ্র মোদির দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রশংসা করেন, যা প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অধিকতর গতি সঞ্চার করে চলেছে।
তিনি ভারতের স্বাধীনতার ৭৫তম
বছর উপলক্ষে বছরব্যাপী উদযাপন ‘আজাদি কা
অমৃত মহোৎসব’-এর সফল সমাপ্তির জন্য ভারত
সরকার এবং এর জনগণকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আগামী ২৫ বছরের ‘অমৃত কাল’-এর নতুন ভোরে, ‘আত্মনির্ভর ভারত’ গড়ে তোলার
লক্ষ্যসমূহ অর্জনের পথে ভারতের প্রয়াসের বিষয়ে তিনি তাঁর শুভকামনা ব্যক্ত করেন।