আমাদের জাতীয় কবি কাজী
নজরুল ইসলামের জন্মতারিখ নিয়ে নানা বিভ্রান্তি দেখা
যায়। এ বিভ্রান্তির পেছনে অনেকটাই দায়ী দেশের পাঠ্যপুস্তকগুলো। তবে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ আর গবেষকদের মধ্যেও এ নিয়ে মতভেদ দেখা যায়।
উদাহরণস্বরূপ, ২০১৮’র চতুর্থ শ্রেণির ‘আমার বাংলা’ বইয়ের পৃষ্ঠা ৭৭-এ এবং পঞ্চম শ্রেণির ‘আমার বাংলা’ বইয়ের পৃষ্ঠা
৯-এ কবির জন্মতারিখ লেখা হয়েছে ২৫ মে। ২০১৭ সালের পঞ্চম শ্রেণির ‘আমার বাংলা’ বইয়ের পৃষ্ঠা ৯-এ লেখা
রয়েছে ২৫ মে। একাদশ শ্রেণির ‘সাহিত্যপাঠ
গদ্য ও কবিতা’ ২০১৭’র বইয়ের পৃষ্ঠা ৭৯-এ লেখা রয়েছে ২৫ মে। ষষ্ঠ শ্রেণির ‘চারুপাঠ’-এ পৃষ্ঠা ৬৯-এ লেখা রয়েছে ২৪ মে। ২০১৮ সালের
সপ্তম শ্রেণির ‘বাংলা প্রথমপত্র’ বইয়ের পৃষ্ঠা ৬৯-এ এবং ‘বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিত’ বইটির পৃষ্ঠা ৯৮-এ লেখা হয়েছে ২৪ মে। ২০১৮ সালের অষ্টম শ্রেণির ‘বাংলা প্রথমপত্র সাহিত্য কণিকা’র পৃষ্ঠা ১০-এ ও পৃষ্ঠা ১০৯-এ ২৪ মে লেখা রয়েছে। অষ্টম শ্রেণির ‘বাংলা
দ্বিতীয়পত্রে’ পৃষ্ঠা ১১০-এ ২৫ মে, ১৮৯৯ লেখা হয়েছে। অষ্টম শ্রেণির ‘ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রে’ কবির জন্ম দেখানো হয়েছে ২৫ মে। একই শ্রেণির ‘বাংলা প্রথমপত্রে’ এক জন্মতারিখ
এবং ‘বাংলা দ্বিতীয়পত্র’ ও ‘ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রে’ অন্য জন্মতারিখ! ২০১৮ সালের নবম ও দশম শ্রেণির ‘বাংলা প্রথমপত্রে’র পৃষ্ঠা ৮৩
ও ২২৭-এ কবির জন্মতারিখ লেখা হয়েছে ২৪ মে।
হায়াৎ মামুদ
সম্পাদিত ‘নজরুল ইসলাম কিশোর জীবনী’র পৃষ্ঠা ৯৯-এ কবির জন্মতারিখ ২৪ মে ১৮৯৯ লেখা
হয়েছে। ‘নজরুলগীতি অখণ্ড’, সম্পাদনা আব্দুল আজীজ আল আমান, হরফ প্রকাশনী, ১২৬ কলেজ স্ট্রিট মার্কেট
কলকাতা ৭০০০০৭, পরিমার্জিত সংস্করণ ২০০৬-এ কবির জন্মতারিখ
২৪ মে ১৮৯৯ লেখা রয়েছে।
শেখ দরবার আলম সম্পাদিত ‘নবযুগ ও নজরুল জীবনের শেষ পর্যায়’ বইটির অনেক জায়গাতেই উল্লেখ আছে যে, কবির জীবিতাবস্থায় নজরুল জয়ন্তী উৎসব ২৫ মে বা ১১ জ্যৈষ্ঠ
পালিত হয়েছে, তবে একই বইয়ের ৩৮১ পৃষ্ঠায় কবির জন্ম ১১
জ্যৈষ্ঠ, ২৪ মে, ১৮৯৯-ও লেখা রয়েছে।
এদিকে আবার কবির বাংলা জন্মতারিখ
১১ জ্যৈষ্ঠ নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে অন্য একরকমের বিভ্রান্তি। বাংলাদেশে অনুসৃত সংশোধিত বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী
১১ জৈষ্ঠ্য ছিল গতকাল বুধবার। কিন্তু প্রতিবেশী
ভারতের পশ্চিম বঙ্গ, ত্রিপুরা প্রভৃতি রাজ্যে ১১ জৈষ্ঠ্য আজ বৃহস্পতিবার। ফলে, যারা
বাংলা জন্মতারিখ অনুযায়ী নজরুলের জন্মদিন উদযাপন করতে চায়, তাদেরকে দুটো আলাদা দিনে
সেটা করতে হবে।
আমাদের প্রাণপ্রিয় জাতীয় কবির, বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিভাধরের জন্মদিন নিয়ে সবধরনের ভুল-বিভ্রান্তি সম্পূর্ণ দূর হোক, এটাই আমাদের কামনা। এ ব্যাপারে দেশের সাহিত্য গবেষকদের আরো মনোযোগ দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে।