সাগরে মাছ ধরার জাল তৈরীতে সফলতা পেয়েছে ফরিদ গ্রুপ

নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত : সোমবার, ২০২৩ জানুয়ারী ১৬, ০৩:৫৭ অপরাহ্ন

সত্তর ও আশির দশকে যখন সাগরে মাছ ধরার জন্য বিদেশি জালের ছড়াছড়ি,তখন সাগরে মাছ ধরার জাল উৎপাদনে অগ্রগামী ব্যবসায়ী কুমিল্লার মফিজ উল্লাহ দেশেই বাণিজ্যিকভাবে মানসম্পন্ন জাল উৎপাদন শুরু করেন। তবে ব্যবসায়িক জীবনে তার সাফল্যের গল্পটা একটু ভিন্ন। জীবনের পাশাপাশি ব্যবসায়েও তাকে করতে হয়েছে কঠোর সংগ্রাম।

 

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার নরোত্তমপুর গ্রামে ১৯৩৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন মফিজ উল্লাহ। সংসারের অভাবের কারণে পড়াশোনায় খুব বেশি অগ্রসর হতে পারেননি তিনি। সংসার চালাতে ষাটের দশকে তিনি হাটে হাটে কলা বিক্রি করতেন। এতে যে লাভ হতো তার একটি অংশ সঞ্চয় করে একসময় বেগমগঞ্জ বাজারে তিন হাজার টাকায় ঢাকা স্টোর নামে একটি মুদিদোকান খোলেন। এর মধ্যেই শুরু হয়ে যায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ। তখন তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের দোকানে বসিয়ে খাবার খাওয়াতেন। সে কারণে ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাঁর স্বপ্ন-সাধের মুদিদোকান ঢাকা স্টোর পুড়িয়ে দেয়। এতে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েন মফিজ উল্লাহ।

 

মুক্তিযুদ্ধের পর কাজের সন্ধানে রাজধানীর টঙ্গীতে চলে আসেন তিনি। কিন্তু বছরখানেক টঙ্গীতে থেকে তেমন কোন ভালো কাজের সন্ধান পাননি মফিজ উল্লাহ। তাই আবার চলে আসেন কুমিল্লায় এবং সেখানেই থিতু হন। ১৯৭২ সালে এ জেলা শহরের চকবাজার এলাকায় স্বল্প পুঁজিতে আলোতিতাস নামে একটি বিস্কুটের কারখানা দেন। এতে সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করেন তিনি। ১৯৭৭ সালে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কুমিল্লা বিসিকে একটি প্লট কিনে প্লাস্টিকের রশি বানানোর কারখানা স্থাপন করেন মফিজ উল্লাহ। এবার কাজে আরও সফলতা পান তিনি। এক বছরের মাথায় ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ফরিদ গ্রুপ। বছর দশেক পর ১৯৮৭ সালে জাল বানানোর জন্য বিসিকেই আলাদা প্লটে আরেকটি কারখানা গড়ে তোলেন। এরই ধারাবাহিকতায় চার দশকের বেশি সময় ধরে সাগরে মাছ ধরার জাল-রশি উৎপাদন ও সরবরাহে দেশের বাজারে এক বিশ্বস্ত নাম হয়ে উঠেছে ফরিদ গ্রুপ।

 

১৯৯৩ সালে কুমিল্লায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন মফিজ উল্লাহ। তবে তাঁর পাঁচ ছেলে শক্ত হাতেই বাবার ব্যবসার হাল ধরে ব্যবসা আরো প্রসারিত করে। এখন জাল-রশির পাশাপাশি প্লাস্টিকের পাটি, কার্পেটসহ বিভিন্ন ধরনের বাহারি পণ্য তৈরির মোট ছয়টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে ফরিদ গ্রুপের মালিকানায়। শুধু দেশে নয়, দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে ফরিদ গ্রুপের তৈরি মাছ ধরার জাল-রশি। প্রধান রপ্তানি বাজার প্রতিবেশী ভারত। তবে শ্রীলঙ্কা, তুরস্ক এবং আফ্রিকার দেশ মালিতেও যায় তাদের জাল ও রশি।

 

ফরিদ গ্রুপের কারখানায় উন্নত দেশ চীন, জাপান ও জার্মানি থেকে আমদানিকৃত অত্যাধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে কোন রকম হাতের স্পর্শ ছাড়াই জাল বানানো হচ্ছে। মেশিনে একদিকে সুতা ঢুকছে, অন্যদিকে জাল বের হয়ে আসছে। অবশ্য জালের আয়তন ও জালের ভেতরের ফাঁকা কতটা হবে তা আগে থেকেই নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। প্রতিটি মেশিনের পাশে একজন করে কর্মী দাঁড়িয়ে থাকে। তিনি ঠিকমতো জাল বোনা হচ্ছে কি না,তা তদারক করে থাকেন। কারখানায় তাপমাত্রা সহনীয় রাখতে ছাদে বিশেষ ধরনের প্রলেপ বা বেষ্টনী দেওয়া আছে।

 

ফরিদ গ্রুপের কর্মকর্তারা গণমাধ্যম-কর্মীদের জানান, বাজারের চাহিদা অনুযায়ী তাদের দুটি কারখানায় ৪০ ধরনের নেট ও রশি তৈরি হয়। প্রতিদিন ১২ টন জাল বানানোর সক্ষমতা আছে জালের কারখানাটির। আর দৈনিক রশি বানানোর সক্ষমতা প্রায় ১৫ টন। মাছ ধরার জাল ও রশি বানানোর এত সক্ষমতা দেশে আর কোনো কোম্পানির নেই বলে দাবি করেন তারা।

 

ফরিদ গ্রুপের পরিচালক জহিরুল হক গণমাধ্যম-কর্মীদের জানান, আমরা মানসম্পন্ন জাল ও রশি তৈরি করি। তাই গ্রাহকেরা আমাদের পণ্যের প্রতি আস্থা রাখছেন। আমরা পণ্যের মান ও কর্মপরিবেশ নিয়ে কোনো ছাড় দিই না।

 

তিনি আরো জানান, প্রতিবছর জালের চাহিদা একইরকম থাকে না। যে বছর বেশি মাছ ধরা পড়ে, সে সময় জালের চাহিদা বাড়ে। কারণ, জালে বেশি মাছ আটকা পড়লে প্রাণ বাঁচাতে জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে যেতে চায়। এতে জালের ক্ষতি হয় এবং স্থায়িত্ব কমে।


- তথ্যসূত্র বাসস


প্রধান সম্পাদক : জ্যোতির্ময় নন্দী
প্রধান নির্বাহী :  জামাল হোসাইন মনজু

ব্যবস্থাপনা সম্পাদক :   অভ্র হোসাইন 

প্রকাশক ও চেয়ারম্যান : অর্ক হোসাইন

 

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় :

এপিক ইত্তেহাদ পয়েন্ট [লেভেল-৪]

৬১৮ নুর আহমদ রোড

চট্টগ্রাম-৪০০০।

Newsroom :

Phone : 01700 776620, 0241 360833
E-mail : faguntelevision@gmail.com

© ২০২২ Fagun.TV । ফাগুন টেলিভিশন কর্তৃক সর্বসত্ব সংরক্ষিত
Design & Developed by Smart Framework