চট্টগ্রাম বন্দরে এই প্রথম ভিড়লো ২০০ মিটার লম্বা জাহাজ

জামাল হোসাইন মনজু
প্রকাশিত : বুধবার, ২০২৩ জানুয়ারী ১৮, ০৪:৩০ অপরাহ্ন

চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাসে এই প্রথম ভিড়লো ২০০ মিটার লম্বা মার্শাল আইল্যান্ডের পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি কমন এটলাস’। ১৫ জানুয়ারি রবিবার বিকাল ৫ টায় চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটি-১ জেটিতে জাহাজটি পৌঁছায়।

 

ব্রাজিল থেকে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের আমদানিকৃত ৬০ হাজার ৫০০ টন চিনি নিয়ে আসা এমভি কমন এটলাস বন্দরে পৌঁছানোর সময় জাহাজটির ড্রাফট ছিল ১০ দশমিক ৮০ মিটার। তাই প্রথমে জাহাজটি বহির্নোঙরে রেখে কিছু চিনি খালাস করা হয়। পরে ড্রাফট কমলে বন্দর জেটিতে জাহাজটি ভেড়ানো হয়। এসময় জাহাজটিতে ৩৬ হাজার টন চিনি ছিল। গণমাধ্যম-কর্মীদের এসব তথ্য জানান চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক।

 

বন্দর কর্তৃপক্ষের চিফ হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার আরিফুর জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে জেটিতে বড় জাহাজ ভেড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর অংশ হিসেবে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এইচআর ওয়েলিং পোর্টকে দিয়ে সমীক্ষা চালানো হয়। ওই সমীক্ষায় বন্দরে পরীক্ষামূলকভাবে বড় জাহাজ ভেড়ানো যেতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়। এরপরই জেটিতে ২০০ মিটার লম্বা ও ১০ মিটার ড্রাফটের (জাহাজের পানির নিচের অংশের দৈর্ঘ্য) জাহাজ ভেড়ানোর অনুমোদন দেওয়া হয়।

 

বিদ্যমান ড্রাফট অনুযায়ী বন্দরে আসা একটি কন্টেইনারবাহী জাহাজে করে ১৭০০ থেকে ১৮০০ টিইইউএস (প্রতিটি ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের সমতুল্য) কন্টেইনার পরিবহন হয়ে থাকে। ড্রাফট বাড়লে ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের ও ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজে করে ২৬০০ থেকে ২৮০০ টিইইউএস কন্টেইনার আনা যাবে।

 

চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তারা আরো জানান, বেশি ড্রাফটের জাহাজ বন্দরে প্রবেশ করানোর বিষয়ে আমদানি-রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে দাবি ছিল। বড় জাহাজ বন্দরে প্রবেশ করলে বেশি পণ্য যেমন আসবে, তেমনি রপ্তানিতেও সুবিধা হবে। বেশি ড্রাফটের জাহাজ বন্দরে ভেড়ার অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি অবশ্যই আমদানি-রপ্তানিকারকদের জন্য ভালো সংবাদ। এতদিন বেশি ড্রাফটের জাহাজ বর্হিনোঙ্গরে অবস্থান করত। সেখানে কিছু কন্টেইনার লাইটার করে জাহাজের ড্রাফট কমিয়ে বন্দরে আনা হতো। ড্রাফট বাড়ানোর ফলে সময়ও বাঁচবে অর্থও সাশ্রয় হবে, দেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

 

চট্টগ্রাম বন্দরের মোট ১৯টি জেটি আছে। এর মধ্যে চালু থাকা ১৭টি জেটিতে জাহাজ ভেড়ে। এতে কর্ণফুলী কন্টেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) ও নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) মোট সাতটি জেটিতে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং (ওঠানামা) হয়ে থাকে। বন্দর কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য মতে, বিদ্যমান অবস্থায় সিসিটি, এনসিটিসহ মোট ১২টি জেটিতে নতুন করে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারবে।

 

চট্টগ্রাম বন্দর জোয়ার-ভাটা নির্ভর একটি প্রাকৃতিক বন্দর এখানে জাহাজ চলাচলের পথে পানির গভীরতা কম। জোয়ারের সময় পানির উচ্চতা বাড়লে জাহাজগুলো বন্দরের নিজস্ব পাইলটের মাধ্যমে সাগর থেকে কর্ণফুলী নদী দিয়ে মূল জেটিতে আনা-নেওয়া করা হয়। অন্যদিকে গুপ্ত বাঁকে প্রশস্ততার সীমাবদ্ধতার কারণে জাহাজের দৈর্ঘ্য বাড়াতে বড় বাধা ছিল। কারণ, গুপ্ত বাঁক দিয়ে প্রায় ৯০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে জাহাজ জেটিতে আনা-নেওয়া করতে হয়।

 

বন্দরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১ সালে আমদানি-রপ্তানি ও খালি মিলিয়ে মোট ৩২ লাখ ১ হাজার ৫৪৮ টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়েছে। গেল বছরে বন্দরের জেটিগুলোতে জাহাজ এসেছে ৪ হাজার ২০৯টি। কন্টেইনারের বাইরে কার্গোতে পণ্য হ্যান্ডলিং হয়েছে ১১ কোটি ৬৬ লাখ ১৯ হাজার ১৫৮ মেট্রিক টন। কার্গো পণ্যের ক্ষেত্রে ১৩ শতাংশের বেশি এবং জাহাজের ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ শতাংশের মতো। দেশের মোট আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রায় ৯২ শতাংশ হয়ে থাকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। কার্গো ও কন্টেইনার পরিবহনের ক্ষেত্রে এ হার প্রায় ৯৮ শতাংশ।

 


প্রধান সম্পাদক : জ্যোতির্ময় নন্দী
প্রধান নির্বাহী :  জামাল হোসাইন মনজু

ব্যবস্থাপনা সম্পাদক :   অভ্র হোসাইন 

প্রকাশক ও চেয়ারম্যান : অর্ক হোসাইন

 

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় :

এপিক ইত্তেহাদ পয়েন্ট [লেভেল-৪]

৬১৮ নুর আহমদ রোড

চট্টগ্রাম-৪০০০।

Newsroom :

Phone : 01700 776620, 0241 360833
E-mail : faguntelevision@gmail.com

© ২০২২ Fagun.TV । ফাগুন টেলিভিশন কর্তৃক সর্বসত্ব সংরক্ষিত
Design & Developed by Smart Framework