একুশে পদক ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত
অভিনয়শিল্পী ও নাট্যকার মাসুম আজিজ আর নেই। সোমবার বিকেল পৌনে ৩টায় তিনি শেষনিঃশ্বাস
ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ...... রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর।
তাঁর মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমকে নিশ্চিত
করেছেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ।
মাসুম আজিজ দীর্ঘদিন ক্যান্সার
ও হার্টের সমস্যায় ভুগছিলেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার সকালে তাকে
‘লাইফ সাপোর্টে’নেওয়া হয়।
তিনি স্ত্রী ও দুই সন্তান রেখে
গেছেন। মাসুম আজিজের দাফনের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
শিল্প মাধ্যমের প্রতিটি ক্ষেত্রেই
এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন মাসুম আজিজ। তিনি ছিলেন একাধারে অভিনয়শিল্পী, চিত্রনাট্যকার
ও নাট্যনির্মাতা হিসেবে পরিচিত। বরেণ্য এ শিল্পী ১৯৫৩ সালের ২২ অক্টোবর পাবনা জেলার
ফরিদপুর উপজেলার খাগড়বাড়িয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের পোকা মাথায়
থাকায় ১৯৭২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি থিয়েটারে অভিনয় শুরু করেন।
তবে প্রথম টিভি নাটকে অভিনয় করেন ১৯৮৫-তে। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হল: তিন
গ্যাদা, প্রিয় প্রতিপক্ষ, জোসনা করেছে আড়ি, উড়ে যায় বকপক্ষী ইত্যাদি। তাঁর অভিনীত নাটকের
সংখ্যা চারশতাধিক।
টেলিভিশন নাটকের পাশাপাশি তাঁকে
অভিনয় করতে দেখা গেছে রুপালি পর্দায়ও। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হল: মমতাজ,
ঘানি, গহীনে শব্দ, বস্তির ছেলে কোটিপতি, গেরিলা, এই তো প্রেম, গাড়িওয়ালা ইত্যাদি।
২০০৬-এ ‘ঘানি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ
পার্শ্বঅভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান মাসুম আজিজ। ‘গহীনে শব্দ’, ‘এই তো প্রেম’, ‘গাড়িওয়ালা’-সহ বেশ কয়েকটি
চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। এ ছাড়া সরকারি অনুদানে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘সনাতন গল্প’ পরিচালনা করেছেন।
সবশেষ তিনি একুশে পদক লাভ করেন
২০২২ সালে। শিল্পকলার অভিনয় শাখায় তাঁর অবদানের জন্য তিনি এ পুরস্কার পান। কয়েক বছর
ধরে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে জীবনযুদ্ধে হেরে গেলেও মৃত্যুর আগেই তিনি তার কাজের
স্বীকৃতি হিসেবে এ পুরস্কার দেখে যান।
এই গুণী শিল্পী আমাদের মাঝে না
থাকলেও তার দক্ষ অভিনয়শৈলীর কারণে তিনি এ দেশে রেখে গেছেন অগণিত ভক্ত। যাদের ভালোবাসায়
তিনি বেঁচে থাকবেন ভক্তদের হৃদয়ের মণিকোঠায়।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক
মাসুম আজিজের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ
প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী প্রয়াতের বিদেহী
আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের গভীর সমবেদনা জানান।
শোকবার্তায় তাঁরা বলেন, অসাধারণ অভিনয় প্রতিভার জন্যে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন এই গুণী
শিল্পী।