দেশের অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে হিন্দু সম্প্রদায়কে নিজেদের সংখ্যালঘু না ভাবার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষ সমান অধিকার ভোগ করবেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা
এখানে চাই যে আমাদের সকল ধর্মের মানুষ নিজেদের সমান অধিকার নিয়ে বসবাস করবে।
এদেশের মাটিতে সকলের সমান অধিকার, আমারও যতটুকু অধিকার আপনাদের তো ততটুকু অধিকার
রয়েছে।’
‘শুভ জন্মাষ্টমী’
উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ এবং বাংলাদেশ পূজা
উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে একথা বলেন।
তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী
মন্দির ও চট্টগ্রামের জে. এম. সেন হলে দুই পরিষদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ভার্চুয়ালি
যুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়কে বলবো আপনারা এদেশের মানুষ।
নিজেদেরকে সংখ্যালঘু মনে না করে আপনারা মনে করবেন আপনারা এই দেশেরই নাগরিক। তাই
সমানভাবে নাগরিক অধিকার আপনারা ভোগ করবেন এবং আমরাও সেইভাবে আপনাদেরকে দেখতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘কখনো
নিজেদের মনে কোন হীনমন্যতা নিয়ে আসবেন না। কারণ আপনারা যাঁরা এ দেশের নাগরিক, তাঁরা
সবাই দেশের মালিক এবং নাগরিক হিসেবে সকলের সমান অধিকার রয়েছে।’
শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘এই আত্মবিশ্বাস নিয়ে যদি চলতে পারেন তাহলে আর দুষ্টু লোকেরা কোনো
ক্ষতিসাধন করতে পারবে না। আর দুষ্টু লোক সব ধর্মেই রয়েছে। কাজেই এই ঐক্য ও বিশ্বাসটা
সকলের মধ্যে থাকতে হবে এবং সেটা নিয়েই আপনারা চলবেন, সেটাই আমি চাই।’
প্রধানমন্ত্রী শোকের এই মাসে ’৭৫-এর বিয়োগান্তক অধ্যায় স্মরণ করে বলেন, এই মাটিতে যেন সকলে
স্বাধীনভাবে নিজেদের ধর্ম-কর্ম পালন করে এবং নিজেদের ধর্মমত নিয়ে চলতে পারে সেই
লক্ষ্যে জাতির পিতা এদেশ স্বাধীন করেছিলেন। কিন্তু তাঁকে সপরিবারে হত্যার পর
এদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপরই আঘাতটা আসে সবচেয়ে বেশি। কেননা অবৈধভাবে ক্ষমতা
দখলকারী চক্র বাংলাদেশকে ইসলামী রাষ্ট্র করার ঘোষণা দেয়। কিন্তু জনমতের চাপে সেটা
করতে পারেনি। আর পরাজিত শক্তি তো দেশের স্বাধীনতাই মেনে নিতে না পেরে বার বার
এদেশে যে সুন্দর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রয়েছে তা নষ্টের অপচেষ্টা চালিয়েছে।
তিনি এ প্রসঙ্গে দেশে বিভিন্ন সময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের
ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের তড়িৎ পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে বলেন, যখনই একটা
কিছু ঘটে আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়।
কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, যখন কোন ঘটনা ঘটে তখন দেশে বিদেশে সে জিনিসটাকে
এমনভাবে প্রচার করা হয় যে, দেশে হিন্দু ধর্মের মানুষের কোন অধিকারই নাই। কিন্তু
আমরা সে যেই হোক, যে ধর্মেরই হোক তাদের যে গ্রেপ্তার করি বা ব্যবস্থা নেই সেটা
কিন্তু তুলে ধরা হয় না। মন্দির রক্ষা করতে গিয়ে মুসলমানরা জীবন দিয়েছে সে কথাটাও
কিন্তু বলা হয় না।
তিনি মানব ধর্মে বিশ্বাস করেন এবং ইসলাম ধর্মেও সকল ধর্মের সমান
অধিকারের কথা বলা হয়েছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী পবিত্র কোরআনের ‘সুরা কাফেরুন’-এর আয়াত ‘লাকুম
দিনুকুম ওয়ালিয়াদিন’
তুলে ধরেন। কাজেই কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে কথা বলা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা
ঠিক নয়। অন্তত তাঁর সরকার এবং আওয়ামী লীগ সে নীতিতেই বিশ্বাসী এবং যথেষ্ট সচেতন
বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা
চাই আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে এবং দেশের মানুষ সকল অধিকার সমানভাবে ভোগ করবে।’
ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এদেশের সকল গৃহহীন-ভূমিহীনকে ঘর করে দেয়ার
পাশাপাশি তাঁর সরকার জীবন-জীবিকারও ব্যবস্থা করে দিচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, কোনো সম্প্রদায় বেছে নয়, সার্বজনীনভাবে তা করা হচ্ছে। কেননা মানব
প্রেম, মানবতার জন্য কাজ করা এবং মানবতার উন্নতি করাই তাঁর সরকারের লক্ষ্য।