বিশ্বব্যাপী বর্তমান প্রতিকূল পরিস্থিতিতে জনগণের দুর্ভোগ কমাতে
সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল মঙ্গলবার তিনি জাতীয় সংসদে বলেন, ‘জনগণের দুর্ভোগ কমাতে যা যা করা দরকার আমরা তা করব এবং আওয়ামী লীগ
সরকার তা করছে।’
বিরোধী দল জাতীয় পার্টির আইন এমপি মুজিবুল হক চুন্নুর আনা একটি
প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ নেতা একথা বলেন।
প্রস্তাবটি তুলে ধরে চুন্নু বলেন, সংসদ চায়-- কোভিড-১৯, বৈশ্বিক
অস্থিরতা, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জ্বালানি
সংকট, দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতি প্রভৃতি সমস্যা মোকাবেলায় সরকারের
নেওয়া স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি টেকসই ব্যবস্থা সংসদে আলোচনার মাধ্যমে জাতিকে জানাতে
হবে।
প্রধানমন্ত্রী বছরব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন
যুদ্ধের কারণে পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের উদ্যোগগুলি সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন, দেশ যাতে খাদ্য সংকটে না পড়ে সে জন্য সরকার সবধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। খাদ্য
সামগ্রী উৎপাদনে প্রতি ইঞ্চি জমি ব্যবহার করার আহ্বানও তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমদানি পণ্যের উচ্চমূল্যের কারণে আমদানি ব্যয়ের
পরিমাণ অতিরিক্ত ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাড়ানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা
পরিস্থিতি নিয়মিতভাবে বিস্তৃতভাবে বিশ্লেষণ করছিগ... সরকার গবেষকদের বিশ্লেষণের
উপর নির্ভর করছে না, বরং আমরা নিজেরাই বিশ্লেষণ করছি এবং জনগণের পরিস্থিতি বিবেচনা
করে সেই নির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
দেশের সার্বিক উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের
কথা তুলে ধরে সংসদে শেখ হাসিনা বলেন, আমি এইটুকু বলতে চাই যে, ইতোমধ্যে কিন্তু
প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে আমাদের নজরদারি আছে।’
পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে কি রিটার্ণ আসবে এমন প্রশ্নের জবাবে
সংসদে সরকার প্রধান বলেন, ‘আমি
এখানে একটা কথা বলতে পারি। আমরা এই পর্যন্ত যত প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি অর্থাৎ আমাদের
অর্থনৈতিক গতিশীলতা আনতে সেটাকে আমরা সব সময় নজরে রাখি এবং এটাই আমাদের উন্নয়ন।
এক্ষেত্রে কোন প্রজেক্টে আমাদের রিটার্ণ আসবে আমরা কিন্তু সেটার উপর আগে নজর দিই।’
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান
বলেন, ২৬ জুন থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত ৬০ দিনে পদ্মা ব্রিজের টোল বাবদ সর্বমোট আদায়
হয়েছে ১৩৮ কোটি ৮৪ লক্ষ ৩ হাজার ৮৫০ টাকা।
পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে দক্ষিণ অঞ্চলের উৎপাদিত পণ্য খুব সহজে
বাজারে চলে আসছে, ওই অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থান বাড়ছে, এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার
উন্নতির ফলে মানুষের ভাগ্যপরিবর্তন হচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুত দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও পূরণ করা হয়েছে সেই
কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুর্ভাগ্য যে আজকে করোনা এবং তারপরে এই ইউক্রেনের যুদ্ধ। ইউক্রেন
রাশিয়া যুদ্ধ এবং স্যাংশানের কারণে আজকে আমাদেরকে বিপদে পড়তে হয়েছে। আর শুধু আমরা
না। যেখানে উন্নত দেশগুলোও বিপদে,তারাই যেখানে সাশ্রয়ী হচ্ছে, বিদ্যুৎ সীমিত করছে।’
করোনা ভাইরাস মহামারি ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে না উঠতেই রাশিয়া ইউক্রেন
যুদ্ধ এবং তার ফলে স্যাংশান ও পাল্টা স্যাংশানের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের
অর্থনৈতিক দুরাবস্থার কথা তুলে ধরার পাশাপাশি বাংলাদেশের চিত্র তুলে ধরে আওয়ামী
লীগ সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও সংসদে জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এইটুকু বলবো যে আমরা আমাদের দেশের মানুষের কল্যাণটাই আমাদের কাছে সব থেকে বড়। মানুষের কষ্ট হলে সেটা অন্তত আমার মনে ব্যথা লাগে কারণ আমার বাবা তো এদেশের মানুষের জন্যই তাঁর জীবনটা উৎসর্গ করেছেন। কাজেই আমি মনে করি যে আপনাদেরও সকলের সহযোগিতা দরকার। খালি কতগুলো অসত্য তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন না। এটাই আমার কথা।’