বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র চট্টগ্রাম জেলার উদ্যোগে বীরকন্যা
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ৯০তম আত্মাহুতি স্মরণে, আজ সকালে পাহাড়তলীস্থ প্রীতিলতার
ভাস্কর্যে পুস্পস্তবক অর্পন, সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও তৎকালীন ইউরোপিয়ান ক্লাব পরিদর্শন
করা হয়। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে প্রীতিলতা ভাস্কর্য চত্বরে বাংলাদেশ নারীমুক্তি
কেন্দ্রের আহবায়ক আসমা আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনাসভায় বক্তব্য
রাখেন চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ সালমা রহমান, কলেজের সহকারি
অধ্যাপক নিগার সুলতানা, নারীমুক্তি কেন্দ্রের জেলা সদস্য দীপা মজুমদার।
সভায় বক্তারা বলেন, ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বাংলার ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় দিন। মাস্টারদা সূর্যসেনের নির্দেশে ও বীরকন্যা প্রীতিলতার নেতৃত্বে বিপ্লবীরা এইদিন ইংরেজ অফিসারদের বিনোদনস্থল পাহাড়তলী ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণ করে। যে ক্লাবের গেইটে লেখা ছিল - ‘ভারতীয় ও কুকুরদের প্রবেশ নিষেধ’(Indians and dogs are not allowed)। আক্রমণ শেষে ফেরার পথে ইংরেজদের হাতে ধরা না দিয়ে পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন প্রীতিলতা। সে সময় ভাবা হতো, স্বদেশী আন্দোলনে নারীরা সশস্ত্র সংগ্রাম করতে পারবে না। প্রীতিলতা আত্মাহুতি দিয়ে সেই চিন্তাকে ভুল প্রমাণিত করলেন। মৃত্যুর পর তাঁর শরীরে পাওয়া চিঠিতে ছিল, দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নারীদের এগিয়ে আসার আহবান। পরাধীন দেশবাসীকে স্বাধীনভাবে বাঁচার পথ তৈরি করতে প্রীতিলতা নিজের জীবন দিয়েছেন।
কিন্তু প্রীতিলতাসহ ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবীদের স্মৃতি ও ইতিহাস সংরক্ষণে রাষ্ট্র ও নগর কর্তৃপক্ষের কোন উদ্যোগ নেই। ইউরোপীয়ান ক্লাবকে জাদুঘর হিসেবে সংরক্ষণের জন্য দীর্ঘদিনের দাবি সত্ত্বেও, তা অনাদর-অবহেলায় ফেলে রাখা হয়েছে। যাদের আত্মদান ও সংগ্রামের স্মৃতিতে চট্টগ্রাম ‘বীর চট্টলা’ হয়েছে, আজ তার বীরদের ভুলতে বসেছে চট্টলা, যা লজ্জা ও বেদনার। তরুণ প্রজন্মের সামনে প্রীতিলতাদের সেই সংগ্রামী গৌরবগাঁথা তুলে ধরে, তাঁদের সে ঋণ শোধ করার আহ্বান জানান বক্তারা।
এসময় বক্তারা বলেন, সেইদিন প্রীতিলতা লড়েছিলেন বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ ও তার দোসরদের বিরুদ্ধে। আজ বৃটিশ নেই, পাকিস্তানীও নেই। তবুও দেশের মানুষ সুস্থভাবে বাঁচতে পারছে না। নারী আজ নিপীড়িত-লাঞ্চিত-নিগৃহীত। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়, কর্মক্ষেত্র, গণপরিবহন, গৃহ সর্বত্র নারীরা নিরাপত্তাহীন। শিক্ষাব্যবস্থায় বিজ্ঞান মনষ্কতার পরিবর্তে তৈরি করা হচ্ছে একদল ধর্মান্ধ কুসংস্কারগ্রস্থ মানুষ। বিবেক মনুষ্যত্ব মানবিকতা হারিয়ে যাচ্ছে। বড় মানুষদের জীবনী চর্চা নেই। পাড়ায় মহল্লায় সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চা নেই। এর নির্মম শিকার হচ্ছে নারী, শিশু ও সাধারণ মানুষ।
- মা.সো