নিরাপদ ও টেকসই পোল্ট্রি উৎপাদনে সরকার সবধরনের সহায়তা দেবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, এম.পি ।
গত
৪ জুলাই রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘নিরাপদ ও টেকসই পোল্ট্রি উৎপাদন: প্রত্যাশা ও পরিকল্পনা’ শীর্ষক নীতিনির্ধারণী আলোচনা সভায়
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ
শাখা (ওয়াপসা-বিডি) এ আলোচনা সভার আয়োজন করে ।
এ
সময় মন্ত্রী বলেন, পোল্ট্রি খাতের উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যত প্রকার পৃষ্ঠপোষকতা
ও সহায়তা দেওয়া দরকার বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার
সেটা করবে।
মন্ত্রী
আরো বলেন, পোল্ট্রি খাতের যেকোন সমস্যা সমাধানে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করে। পোল্ট্রি
সংশ্লিষ্ট নীতিমালা আধুনিক ও সময়োপযোগী করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। করোনার সময় পোল্ট্রি খাতে উদ্ভূত প্রতিবন্ধকতা
দূর করতে সরকার তাৎক্ষণিকভাবে পদক্ষেপ নিয়েছে কারণ প্রাণিসম্পদ খাত নুয়ে পড়লে দেশে
আমিষের সরবরাহ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মানুষের পুষ্টি ও আমিষের চাহিদা পূরণে প্রাণিসম্পদ
খাত রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
পোল্ট্রির
উন্নয়নে ব্র্যান্ডিংয়ের বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের এ
সময় আহ্বান জানান মন্ত্রী।
তিনি
আরো বলেন, পোল্ট্রি ফিড তৈরির জন্য যে প্রোটিন বাইরে থেকে আমদানি করতে হয় তার ওপর
কর নেওয়া হয় না। সরকার পোল্ট্রি খাদ্যের দাম কমানোর জন্য কর রেয়াত দিয়েছে অথচ এ
সুযোগ কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী তার উৎপাদন সক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত উপকরণ
আমদানি করে গুদামজাত করেছে, বিক্রিও করেছে। এ জন্য প্রোটিন আমদানির অনুমতি কাদের কতটুকু
দেওয়া হয়েছে সরকার সে তথ্য সংগ্রহ করছে।কার উৎপাদন সক্ষমতা কতটা আছে এবং তিনি কতটুকু
কাঁচামাল বাইরে থেকে এনে কতটুকু ব্যবহার করেছেন ও বাকিটা কী করেছেন সেটি জানতে চাওয়া
হবে। সরকার পোল্ট্রি খাতে সহায়তা করতে চায় তবে সেটা যথাযথভাবে সংশ্লিষ্টদের গ্রহণ
করতে হবে।
শ
ম রেজাউল করিম আরো বলেন, কৃষিতে যেসব বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয় সেখানে মূল্যহার একরকম,
প্রাণিসম্পদের পোল্ট্রি অংশে মূল্যহার ভিন্ন হতে পারে না। এটি একই হারে হতে হবে। মৎস্য,
প্রাণিসম্পদ ও পোল্ট্রি খাত বৃহত্তর কৃষির অংশ। কৃষি খাত বিদ্যুতের যে সুযোগ পায়,
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে সে সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। নতুন একটি খাতকে
বিকশিত করার জন্য যে সুযোগ করে দেওয়া দরকার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে বিদ্যুত সংযোগের
ক্ষেত্রে শিগগিরই সে সুযোগ করে দেয়া সম্ভব হবে।
পোল্ট্রি
খাদ্যের জন্য বিদেশ থেকে আমদানি নির্ভরতা কেন এ প্রশ্ন রেখে এ খাত সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্যে
মন্ত্রী বলেন, এ খাতে বিদেশ নির্ভরতা কমাতে হবে। দেশের ফিড ইন্ডাস্ট্রির কাঁচামাল তৈরিতে
সহায়ক ইন্ডাষ্ট্রি গড়ে তুলতে হবে। সেক্ষেত্রে মেশিনারিজ আমদানিতে সরকার কর অব্যাহতিসহ
অন্যান্য সুবিধা দেবে। পোল্ট্রি খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে গেলে এর সহায়ক খাতও বিকশিত
করতে হবে। রাষ্ট্র সকল সহায়তা দেবে।
তিনি
আরো বলেন, পোল্ট্রি শিল্পে বর্জ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে। খামারে
দূষণ হলে নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। এ জায়গায় দায়িত্বশীলতা
থাকতে হবে। যাদের বড় খামার আছে তাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
তা না হলে ভোক্তারা পোল্ট্রি থেকে উৎপাদিত খাদ্যের ওপর আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
পোল্ট্রি
থেকে উৎপাদিত পণ্যের বহুমুখী ব্যবহারের জন্য শিল্প স্থাপনের ওপর এ সময় গুরুত্বারোপ
করেন মন্ত্রী। এ ধরনের শিল্প স্থাপনে রাষ্ট্র সবধরনের পৃষ্ঠপোষকতা ও সহায়তা দিতে চায়
বলে জানান মন্ত্রী।
ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ
শাখার (ওয়াপসা-বিবি) সভাপতি মসিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে
উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের
সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী। সম্মাননীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাণিসম্পদ
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডাঃ মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা ও বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের
মহাপরিচালক ড. এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন সংশ্লিষ্ট
দপ্তর-সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং পোল্ট্রি খাতের বিজ্ঞানী, গবেষক ও অংশজীনরা
এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অদূর
ভবিষ্যতে দেশীয় পোল্ট্রি খাত রপ্তানিতেও অবদান রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন পরিকল্পনা
প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম । তিনি বলেন,পোল্ট্রি মাংসের কনজাম্পশনে বাংলাদেশ পাশ্ববর্তী
দেশ ভারত ও পাকিস্তান থেকে এগিয়ে এটি একটি ইতিবাচক অগ্রগতি। ২০২০ সালের আইএমএফ এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ মাথাপিছু আয়ের দিক
থেকেও এগিয়ে। তাছাড়া আয়ুস্কাল, নারীর ক্ষমতায়ন, নারী শিক্ষা এসব সূচকেওে এগিয়ে রয়েছে
বাংলাদেশ। হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশুর খাদ্য প্রস্তুতকারকদের এক প্রস্তাবনার উত্তরে প্রতিমন্ত্রী
বলেন, গার্মেন্টস শিল্পে যেমন বন্ডেড হাউজ সুবিধা দেয়া হয়েছে; ফিড তৈরির কাঁচামাল আমদানির
ক্ষেত্রে পোল্ট্রিতেও অনুরূপ সুবিধার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। সাধারন খামারিদের
সুবিধার স্বার্থে পোল্ট্রি মার্কেট চেইনকে ছোট করা যেতে পারে এবং সেক্ষেত্রে দেশের
বিভিন্ন জেলা শহরে বড় বড় পোল্ট্রি বাজার স্থাপনেও সরকার সহায়তা করতে পারে।
ড.
মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী বলেন, নিরাপদ পোল্ট্রি উৎপাদনে সহায়তা করছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ
মন্ত্রণালয়।পাটের ব্যাগে পোল্ট্রি ও মৎস্য খাদ্য মোড়কীকরণের নেতিবাচক দিক তুলে ধরেন
ড. চৌধুরী। তিনি জানান, বাংলাদেশ জুট মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন একটি মামলা করেছে যেখানে
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কেও এ বিষয়ে জবাব দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মন্ত্রণালয়ের
পক্ষ থেকে এ বিষয়ে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
ওয়াপসা-
বাংলাদেশ শাখার সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, প্রতিটি খামারে অবশ্যই ওয়েস্ট ডিসপোজাল ব্যবস্থা
থাকতে হবে। অনেক বড় কোম্পানীও রাতের আঁধারে পোল্ট্রি লিটার এখানে সেখানে ফেলে আসছে।
জীবানু ছড়াচ্ছে। এভাবেই আমরা নিজেরাই নিজের পায়ে কুড়াল মারছি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা,
জীবনিরাপত্তা সন্তোষজনক না হলে লাইসেন্স নবায়ন না করার আহ্বান জানান মসিউর।
আলোচনা সভায় ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখা আয়োজিত নিরাপদ ও টেকসই পোল্ট্রি উৎপাদন বিষয়ক সেমিনারের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন সেমিনারের টেকনিক্যাল কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম এবং নিরাপদ ও টেকসই পোল্ট্রি উৎপাদন: প্রত্যাশা ও পরিকল্পনা বিষয়ে সুপারিশ উপস্থাপন করেন ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ এর সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ।-- সংবাদ বিজ্ঞপ্তি