ফরাসি নবতরঙ্গ চলচ্চিত্র আন্দোলনের প্রধান পুরোধাদের
অন্যতম, খ্যাতিমান চলচ্চিত্র সমালোচক এবং বিতর্কিত ও প্রভাবশালী পরিচালক জঁ লুক গদার গতকাল ১৩ সেপ্টেম্বর শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯১ বছর।
কিংবদন্তি এই চলচ্চিত্রকারের জীবনাবসানে বিশ্ব সংস্কৃতি অঙ্গনে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে।বিশ্ব সাংস্কৃতিক মহল আজ অন্যতম প্রধান এক অভিভাবককে হারাল বলে বোদ্ধারা মনে করছেন।
ফ্রান্সে নবতরঙ্গ চলচ্চিত্র আন্দোলন
এসেছিল মূলত গদারের হাত ধরেই। মৌলবাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন, আইকনোক্লাস্টিক বা
প্রাতিষ্ঠানিক রীতিনীতির বিরুদ্ধে তিনি আজীবন সরব ছিলেন।
১৯৩০-এ সালে প্যারিসে এক উচ্চবিত্ত
পরিবারে জন্ম নেন তিনি। বাবা ছিলেন ডাক্তার। মা ছিলেন ‘ব্যাংক পারিবাস’ নামে এক বিনিয়োগ
ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতার কন্যা। সুইজারল্যান্ডের জেনেভা লেকের তীরে ছিল তাঁর বিদ্যালয়।
চলচ্চিত্রে ‘জাম্প কাট’ ছিল তাঁর কৃষ্টির অন্যতম মহৎ সৃষ্টি।
পরিচালক হিসেবে তাঁর কর্মজীবনের
প্রথম অধ্যায় সবচেয়ে বেশি আলোচিত। ১৯৬০-এ তাঁর প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি ‘ব্রিদলেস’ নতুন এক চিত্রভাষার জন্ম দেয়।
এরপর ‘ম্যাস্কুলিন ফেমিনিন’, ‘দ্য লিটল সোলজার’, ‘মেড ইন ইউএসএ’র মতো একের
পর এক কালজয়ী ছবি উনি আমাদের উপহার দিয়েছেন।
সিনেমার নিজস্ব ভাষা তৈরিতে যে
সমস্ত বিশ্ব-সেরা পরিচালকদের অবদান আছে,তাঁদের মধ্যে অন্যতম জঁ-লুক গদার। অনেক পরিচালকের
কাছেই তিনি ছিলেন অনুপ্রেরণা। এঁদের মধ্যে রয়েছেন মার্টিন স্কোরসেজি, কোয়েন্টিন টারান্টিনো,
ব্রায়ান ডে পালমা, স্টিভেন সোডারবার্গ, ডি. এ. পেনবেকার, রবার্ট অল্টম্যানসহ প্রমুখ।
গদার শেষ ছবি বানিয়েছেন ২০১৮-তে।
‘দ্য ইমেজ বুক’। এই ছবি কান
ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে “প্যাম দ্য’র” সম্মান পায়। গত বছর ভারতের কেরালা আর্ন্তজাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রায় ৮৫ মিনিটের
একটা ‘ভার্চুয়াল’ সাক্ষাৎকার
নেওয়া হয় গদারের। সেখানেই তিনি বলেছিলেন, “আমি আমার সিনেমা-জীবন
শেষ করতে চলেছি। আর দুটো স্ক্রিপ্ট আমার কাছে আছে, ওই দুটো ছবি করেই গুডবাই সিনেমা।”
এবার জীবনকেই ‘গুডবাই’ জানালেন তিনি। যেন এক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি। যেন এক যুগের শেষ।